ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

জামালপুরে অবহেলিত স্মৃতিচিহ্ন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬

জামালপুরে অবহেলিত স্মৃতিচিহ্ন

জামালপুরে ছড়িয়ে থাকা মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি-চিহ্নগুলো সঠিক সংরক্ষণের অভাবে আজও অরক্ষিত। অর্ধশত বধ্যভূমি ও গণকবর নিশ্চিহ্নের পথে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকহানাদার বাহিনী বিভিন্ন এলাকার মানুষকে ধরে এনে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে। শত শত মৃতদেহ মাটি চাপা দিয়ে রাখে। সরকারী ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণের অভাবে বহু গণকবর শনাক্ত করার পরেও বর্তমানে মর্যাদাহীন অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সরকারের কাছে সেসব স্মৃতিরক্ষার্থে বধ্যভূমি ও গণকবর সংরক্ষণের দাবি করে আসছে। প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে অর্ধশত বধ্যভূমি, গণকবর রয়েছে। বিশেষ করে বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়াকামালপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে স্মৃতিস্তম্ভের উত্তর পাশে বিশাল বধ্যভূমি, ধানুয়াকামালপুর ইউনিয়নের অছিম উদ্দিন চেয়ারম্যানের বাড়ির পশ্চিম পাশে রাস্তার সঙ্গে শেওড়া গাছের নিচে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের গণকবর অরক্ষিত পড়ে আছে। কামালপুর দত্তেরচর গ্রামে গণকবর রয়েছে। খাদ্যগুদাম ও ডাকবাংলোর কাছাকাছি দুটি বধ্যভূমি বেদখল হয়ে গেছে। ধানুয়াকামালপুর বাজারের পশ্চিমে ইউনিয়ন পরিষদের পেছনে বড় বধ্যভূমি ছিল যা বর্তমানে পুকুরে পরিণত হয়েছে। বকশীগঞ্জ এনএম উচ্চ বিদ্যালয়ের উত্তর পাশে ’৭১-এর মৃত্যুকূপ নামে পরিচিতি ছিল তা সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। বকশীগঞ্জের পুরনো গোহাট গণকবর সংরক্ষণের অভাবে আবাদী জমি ও পুকুরের সঙ্গে বিলীন হতে চলেছে। উলফাতুন্নেছা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বর্তমানে হলরুম ছিল টর্চারসেল। বকশীগঞ্জের মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, কামালপুর উপস্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পাশে গণকবর অরক্ষিত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বকশীগঞ্জ উপজেলার বাট্টাজোর ইউনিয়নের উঠানোপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল হক বাবুল চিশতী জানান, স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও কেউ বকশীগঞ্জ উপজেলার বধ্যভূমি, গণকবর ও যুদ্ধকালীন স্মৃতিবিজড়িত চিহ্নগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়নি। দিনে দিনে এসব স্মৃতিচিহ্ন কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে। জামালপুর সদর উপজেলার পৌর শহরের পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের তীর সংলগ্ন শ্মশানঘাট এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো। বনপাড়া এলাকার ফৌতি গোরস্তানে অংসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিপাগল মানুষের মৃতদেহ মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। সরকারী আশেক মাহমুদ কলেজের ডিগ্রী ছাত্রাবাস, পিটিআই ও ওয়াপদা রেস্ট হাউস, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুরক্ষিত ভবন ছিল পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনের ক্যাম্প। এসব জায়গা চিহ্নিত করা হলেও সংরক্ষণ করা হয়নি। দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশনের লোকোশেড, রেল স্টেশন সংলগ্ন জিআরপি থানা, আলেয়া মাদ্রাসা, জিল বাংলা চিনিকল, দেওয়ানগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, কাঁঠালবিলের গয়ারডোবা, পুরনো বাহাদুরাবাদঘাটে পাকহানাদার বাহিনীর নির্যাতনী ক্যাম্প ছিল। সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা বারইপটল, পালপাড়া ও জগন্নাথগঞ্জ ঘাটে রয়েছে বহু গণকবর। ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি খানপাড়া, পৌরগোরস্তান, মেলান্দহ উপজেলা পরিষদের পেছনে এবং মাদারগঞ্জ উপজেলায় রয়েছে বহু গণকবর ও নির্যাতন ক্যাম্প। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, জামালপুর জেলা কমান্ডার সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম খোকা জানান, নানা স্থানের গণকবর সংরক্ষণ করার জন্য আমরা সরকারের কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি। Ñআজিজুর রহমান ডল জামালপুর থেকে
×