ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বিজয়ের আনন্দে বর্ণিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬

বিজয়ের আনন্দে বর্ণিল রাজধানীর সংস্কৃতি ভুবন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশপ্রেমে শাণিত হওয়ার চেতনায় সম্প্রীতির আবাহনে উদ্্যাপিত হলো মহান বিজয় দিবস। বাঙালীর জাতিসত্তার প্রকাশের দিনটিতে পুনরায় দেশপ্রেমের শাণিত চেতনায় উজ্জীবিত হলো রাজধানীবাসী। দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীজুড়ে ছিল সাংস্কৃতিক আয়োজন। এসব আয়োজনে স্মরণ করা হয়েছে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যারা এই দেশটিকে স্বাধীন করেছিলেন সেই শহীদদের। ভালবাসা জানানো হয়েছে পূর্ব দিগন্তে সূর্য ওঠানো নতুন দেশের স্বপ্ন আঁকা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। দিনভর উচ্চারিত হয়েছে জয় বাংলার গান। বিশেষ দিনটিতে যেন নতুন করে খোঁজা হয়েছে স্বাধীনতা শব্দটির তাৎপর্য। এভাবেই ৪৫তম বিজয় স্বদেশের প্রতি ভালবাসায় বর্ণিল হয়ে উঠেছিল ঢাকার সংস্কৃতি ভুবন। আর এসব আয়োজনে বিশিষ্টজনদের আলোচনা, নৃত্য, গীত ও কবিতার ছন্দে, নাটকের সংলাপে কিংবা শিল্পীর মনন আশ্রিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর মাধ্যমে জানানো হয়েছে জাতির সূর্য সন্তানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ॥ ‘ঐক্য গড় বাংলাদেশ/সাম্প্রদায়িকতা হবে শেষ’ শীর্ষক আট দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের চতুর্থ দিনে শুক্রবার বিজয় দিবসে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে দোয়েল চত্বর, কদম ফোয়ারা, মৎস্য ভবন মোড় হয়ে শাহবাগ থেকে টিএসসি এসে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি। শোভাযাত্রায় দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে গেয়ে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেন জোটভুক্ত শতাধিক সংগঠনে কয়েক হাজার সংস্কৃৃতি-কর্মী ও সাধারণ মানুষ। এছাড়াও বিজয় উৎসবের বিকেলে জোটের আয়োজনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশ থেকে ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর, মিরপুর, উত্তরাসহ একযোগে বেশ কয়েকটি মঞ্চে ছিল বর্ণিল অনুষ্ঠানমালা। বাংলা একাডেমি ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির নজরুল মঞ্চে ছিল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ‘সামাজিক নীতিমালা, দারিদ্র্য ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক মোঃ মশিউর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সাংবাদিক আবেদ খান এবং নাঈমুল ইসলাম খান। ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। শিল্পকলা একাডেমি ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে ছিল আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তিকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রথমেই ছিল আলোচনা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম ও বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ কামরুল হাসান খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় সাংস্কৃৃতিক অনুষ্ঠান। একক আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়, নায়লা তারান্নুম কাকলী, আসলাম শিহির ও শিমুল মুস্তাফা। ছিল সমবেত নৃত্য ও সঙ্গীত। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর : বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক উৎসবের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রাঙ্গণে সকালে শিশু-কিশোর আনন্দানুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে সোসাইটি ফর দি ওয়েলফেয়ার অব অটিস্টিক চিল্ড্রেন, কল্পরেখা, ক্যালিক্স প্রি-ক্যাডেট স্কুল, খেলাঘর, বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ স্কুল, নৃত্যজন, লালমাটিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং নটরাজ। সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের মহাদেব সঙযাত্রা দল সঙযাত্রা পরিবেশন করে। এ আয়োজনের অংশ হিসেবে মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে চারুলতা একাডেমি, কথসুর সাংস্কৃতিক সংগঠন, মিথস্ক্রিয়া আবৃত্তি পরিষদ, মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি, ঘাসফুল শিশু-কিশোর সংগঠন, ঢাকা সিটি স্কুল, বধ্যভূমির সন্তানদল, অপদৃ নৃত্যকলা একাডেমি এবং মম কালচারাল একাডেমি। লাল-সবুজের মহোৎসব : বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত ১৬ দিনব্যাপী ‘লাল-সবুজের মহোৎসব’ অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে গতকাল। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত শেষ দিনের কনসার্টে সঙ্গীত পরিবেশন করেন আইয়ুব বাচ্চু ও এলআরবি, নগর বাউল ও জেমস, ভাইকিংস, চিরকুট এবং শূন্য। বিদ্যুত ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ওয়ান মোর জিরো কমিউনিকেশনস। শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীতের আয়োজন : বিজয় দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় শুদ্ধভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের পাশাপাশি এই প্রজন্মের শিল্পীরাও গেয়েছেন গান। শুদ্ধভাবে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন শাহীন সামাদ, সুজেয় শ্যাম, রথীন্দ্রনাথ রায়, ফেরদৌস আরা, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, ফকির আলমগীর, শফি ম-ল, প্রিয়াঙ্কা গোপ, মৌটুসী, সমরজিৎ রায়, রাজীব, ঐশী, পুতুল, দিঠি আনোয়ার, অলোক সেন, দেবলীনা সুর, কর্নিয়া। অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার ও ইতিহাসবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন। আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, কবি আসাদ চৌধুরী, শিমুল মুস্তাফা প্রমুখ। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা : বিজয় দিবস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা নিজস্ব মিলনায়তনে গতকাল আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণী ও আনন্দানুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা শোনান মালেকা খান, শিল্পী বুলবুল মহলানবীশ, মুক্তিযোদ্ধা ডাঃ সারাহ্ বানু সূচী, মেলার তরুণ সদস্য রাশিদুল হাসান জুনায়েদ, কর্মী সদস্য সুলতান জুবায়ের উদ্দীন ও শিশু বক্তা নুসাইবা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মেলার পরিচালক খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। অনুষ্ঠানে গল্পবলা প্রতিযোগিতা এবং সাহিত্যবাসরের বিজয়ীরা অতিথিদের নিকট থেকে পুরস্কার গ্রহণ করে।
×