মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের আর মাত্র ৫ দিন বাকি। ২২ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের শেষ দিকের প্রচার বেশ জমে উঠেছে। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনসহ সাত মেয়র প্রার্থী শুক্রবার গণসংযোগ ও নানামুখী প্রচার চালিয়েছেন। বসে নেই ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের ১৬৫ কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের ৩৮ কাউন্সিলর প্রার্থীও। তারা নিজ নিজ ওয়ার্ডে দিনরাত প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। শুক্রবার বিজয় দিবসের বন্ধ থাকায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ব্যাপক প্রচার চালিয়েছেন। সব মিলে শুক্রবার বেশ উৎসবমুখর পরিবেশেই সব প্রার্থীরা প্রচার চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী ও বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে শুক্রবারও তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা নগরীসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে তাদের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়েছেন। বিজয় দিবসে নগরীর ২নং রেলগেট এলাকায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে নৌকার প্রার্থী ডাঃ আইভী শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বলেন, সন্ত্রাসীদের দল নেই, ধর্ম নেই ও জাত নেই। অপরদিকে চাষাঢ়ায় বিজয়স্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানের শীষের প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, আইভীর জনপ্রিয়তা, কাজের দক্ষতা ও নৌকাই তার ভরসা।
সন্ত্রাসীদের কোন দল নেই, ধর্ম নেই, জাত নেই- আইভী
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী নগীর ২নং রেল গেট এলাকায় জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন জানাচ্ছি, শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, সংগ্রামী সালাম জানাচ্ছি। সন্ত্রাস দমন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, বাংলাদেশে ছাড়াও সারা বিশ্বেই কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকা- চলে। সন্ত্রাসী কর্মকা- বন্ধ করা মানে কী? সন্ত্রাসী বন্ধ করতে আমি কি আইন প্রয়োগ করতে পারব? আমি তো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কেউ না। কিন্তু মানুষকে সচেতন করা। যে কোন ধরনের অন্যায় হলে সে অন্যায়ের প্রতিবাদ করা। ভয় না পেয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে যাতে সেই কাজটি দ্বিতীয়বার কেউ না হয়। সন্ত্রাসীদের কোন দল নাই, কোন ধর্ম নাই, কোন জাত নাই, সেটা যেই হোক না কেন? আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই যেখানে অন্যায় সেখানেই যেন প্রতিবাদ করতে পারি, মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে পারি।
আইভী বলেন, আমাদের নারায়ণগঞ্জে অনেক কিছুই হওয়ার কথা ছিল। ঢাকার পাশাপাশি হওয়ায়, অনেক সময় মনে হয় নারায়ণগঞ্জ ঢাকারই একটি অংশ। এভাবে অনেক বিবেচনায় দেখা গেছে আমরা যে পরিমাণ রেভিনিউ (রাজস্ব) সরকারকে দিচ্ছি, সে ক্ষেত্রে নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নটা অনেক অংশে একটু কম হয়েছে। কিন্তু বিগত ৫ বছরে এমনকি পৌরসভা থেকে অনেক কাজ হয়েছে। খুব দ্রুতগতিতেই কাজ হচ্ছে এবং অনেক প্রজেক্টের। আমাদের অনগোয়িং প্রজেক্ট। তিনি আরও বলেন, আমাদের যেমন ডাম্পিং প্রজেক্ট ডাম্পিং এরিয়া প্রকল্প, আমাদের শীতলক্ষ্যা ব্রিজ, জিমখানা লেক, বাবুরাইল খাল খনন এসব কাজগুলো প্রজেক্ট আকারে মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া আছে। অনেক প্রজেক্ট প্রায় ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকার প্রজেক্ট সরকার আমাদের পাস করিয়ে দিয়েছে। সে কাজগুলো চলমান আছে। বাকিগুলোও হয়ে যাবে। কাজগুলো কন্ট্রিনিউ থাকবে এবং অনেক কাজ চলমান ও অনেক কাজ শেষ হয়েছে। পূর্বের নারায়ণগঞ্জকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়, আগের নারায়ণগঞ্জ যা ছিল সেটাত সম্ভব নয়। কারণ জনসংখ্যা বেড়েছে। আমাদের বাস্তবতার ভিত্তিতেই চিন্তা ভাবনা করতে হবে কিভাবে আমরা নারায়ণগঞ্জকে সাজাব।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে আইভী বলেন, আমার ভাইও যদি অন্যায় করে আমি তার বিপক্ষে যাব। এরপরে আর জবাব নেই। যে কথা আমি সবসময় বলি আমার সন্তানও যদি অন্যায় কাজ করে সেই অন্যায়টা যদি অন্যায় হয় সেখানে আমি তার বিপক্ষে যাব। আমি মানুষকে বললাম আমিও যদি কোন দিন অন্যায় কাজের জড়িত থাকি কিংবা কোন ধরনের অপরাধ করি তাহলে জনগণ যেন আমার বিপক্ষে রাস্তায় নেমে আসে। আমার সন্তান হলেও তার ক্ষমা নেই। সে যেই হোক।
ধানের শীষ প্রতীকে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে- সাখাওয়াত ॥ বিজয় দিবস উপলক্ষে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় নগরীর চাষাঢ়ায় বিজয়স্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বিজয় দিবস উপলক্ষে আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে বিজয়স্তম্ভে এসে পুষ্পস্তাপক অর্পণ করলাম। আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে দোয়া করলাম। এ দেশে যেন শান্তি সমৃদ্ধি নেমে আছে। নারায়ণগঞ্জ থেকে সব ধরনের অন্যায়-অত্যাচার দূরীভূত হয়। এ নির্বাচন নিয়ে জনগণের বিশাল আগ্রহ আছে। নির্বাচন পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু আমার আতঙ্ক নয়। এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে। ভোটাররা সব সময়ই বলছে, পরিবেশ যদি সুষ্ঠু হয় ভোটাররা নির্ভয়ে, বিনা বাধায় তারা ভোট কেন্দ্র গিয়ে পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। সে যে প্রার্থীই হোক এবং সে নির্বাচনে যেই নির্বাচিত হোক তাকে আমরা মেনে নেব। আমরা সেই নির্বাচনকে (সুষ্ঠু পরিবেশের নির্বাচনকে) স্বাগত জানাব। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই গণজোয়ারকে ছিনিয়ে নেয়ার জন্য সরকারী দলের পক্ষ থেকে যাতে কোন ইঞ্জিনিয়ারিং হতে না পারে সেই বিষয়ে আমি প্রশাসন এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাছি।
আইভীর জনপ্রিয়তা, কাজের দক্ষতা ও নৌকাই ভরসা- এবি সিদ্দিক ॥ নারায়ণগঞ্জ জেলা নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, আইভীর যে জনপ্রিয়তা সেই জনপ্রিয়তা সে নিজেই অর্জন করেছে। শুধু নৌকার জন্য সে বেশি ভোট পাবে এ কথাটা ঠিক নয়। সে যেমন জনপ্রিয় এবং কাজের জন্যও সে জনপ্রিয় হয়েছে। অন্যদিকে নৌকা হলো একটি বৃহৎ পলিটিকেল পার্টির মার্কা। তাদেরও প্রচুর সমর্থক আছে সুতরাং নৌকার সমর্থকদের ভোট সে পাবে। অন্যদিকে তার জনপ্রিয়তা ও তার কাজের দক্ষতা এবং বিগত দিনে ভাল কাজের জন্যও সে ভোট পাবে। সুতরাং সে শুধু নৌকার জন্যই ভোট পাবে এটা ঠিক না। দুইটি জনপ্রিয়। নৌকাও জনপ্রিয়, তার প্রচুর সমর্থন আছে। কাজের জন্যও আইভী জনপ্রিয় হয়েছে।
৫নং ওয়ার্ডের সিদ্ধিরগঞ্জ বাজার এলাকার ভোটার ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম জানান, যে প্রার্থী এলাকায় উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি করতে পারবে এবং মাদক মুক্ত ও সন্ত্রাস দূর করতে পারবে তাকেই আমরা ভোট দেব।