ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যশোরে চীনা নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

যশোরে চীনা নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ যশোর উপশহর এলাকায় একটি বাড়িতে চীনা নাগরিক চ্যাং হিং চংকে (৪৫) পিটিয়ে ও শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার মধ্যরাতের দিকে তাকে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে উপশহর মহিলা কলেজের পাশে ২ নম্বর সেক্টরের ৩৪ নম্বর বাড়ি থেকে তার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় চীনা নাগরিকের কর্মচারী নেত্রকোনা জেলার চকপাড়া এলাকার বাসিন্দা নাজমুল হাসান পারভেজ ও তার ভাইপো মুক্তাদির রহমানকে আটক করা হয়েছে। নিহত চীনা নাগরিক চ্যাং হিং চং ইজিবাইকের ব্যাটারি আমদানি করে বিক্রি করতেন। যশোরের পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান জানান, অর্থ আত্মসাতের বিরোধের জের ধরে চীনা নাগরিক হত্যাকা-ের শিকার হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ওই নাগরিকের সঙ্গে থাকা দোভাষী দু’জন হত্যাকাণ্ডে জড়িত। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকা-ে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। একই সঙ্গে তারা হত্যাকা-ের বর্ণনা দিয়েছে। তারা হত্যাকা-ের পর লাশ কোথায় রেখেছিল, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন কোথায় রেখেছিল সেটির বর্ণনাও দিয়েছে। চীনা নাগরিক চ্যাং হিং চং ২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশে ব্যবসা করতেন। সর্বশেষ তিনি ২৭ নবেম্বর বাংলাদেশে আসেন। গত সাত মাস ধরে উপশহরের এই বাড়িটির নিচতলা তিনি গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করতেন বলে জানান বাড়ির মালিক মাসুদুর রহমান। যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ইলিয়াস হোসেন জানান, চীনা নাগরিক চ্যাং হিং চং ইজিবাইকের ব্যাটারির ব্যবসায়ী। তিনি উপশহর মহিলা কলেজের পাশে হামিদা ভিলা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তার সঙ্গে তার কর্মচারী ও দোভাষী নেত্রকোনা জেলার বাসিন্দা নাজমুল ও তার ভাইপো মুক্তাদির থাকতেন। চ্যাং হিং চংয়ের স্ত্রী টেমু লাই এন ঢাকায় থাকেন। বুধবার রাতে টেমু লাই তার স্বামীকে ফোনে না পেয়ে নাজমুলকে ফোন দেন। এ সময় নাজমুল তাকে জানান, তার স্বামীকে (চ্যাং হিং চং) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। চংয়ের স্ত্রী তাকে থানায় অবহিত করতে বললে গভীর রাতে নাজমুল বিষয়টি থানায় জানায়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে পুলিশ নাজমুল ও মুক্তাদিরকে আটক করে। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হামিদা ভিলা থেকে চংয়ের লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার জানান, আটক নাজমুল ও মুক্তাদির বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে চংকে রড দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। এরপর ব্লেড দিয়ে কেটে লাশ বস্তায় ভরে টয়লেটে রেখে দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে যশোরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল মতিন জানান, রাতে স্বামীর খোঁজ না পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে চংয়ের স্ত্রী টেমু লাই এন যশোরে আসেন। পুলিশের সহযোগিতায় তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় স্বামীর লাশ দেখে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এক পর্যায়ে অভিযুক্ত নাজমুল ও মুক্তাদিরকে সাংবাদিকদের সামনে আনা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে নাজমুলকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারেন। নিহত চংয়ের গাড়ি চালক মামুনের দাবি, অতিরিক্ত ৫শ’ টাকা বিল নিয়ে বিরোধে চংকে খুন করা হয়েছে। যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ুন কবীর জানান, ইতোমধ্যে হত্যাকা-ে জড়িত দুজন গ্রেফতার হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তারা হত্যাকা-ে জড়িতের বিষয়ে স্বীকারও করেছে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট ও ময়নাতদন্ত হয়েছে। নিহতের স্ত্রী ঢাকা থেকে এসেছেন। পোস্টমর্টেম শেষে আইনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লাশ হস্তান্তর করা হবে। ড. হুমায়ুন কবীর আরও বলেন, দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশ শান্তির জায়গা। সবাই নিরাপদে থাকবে। এই হত্যাকা-কে আমরা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখব। আমরা সবার নিরাপত্তা দিতে বদ্ধপরিকর।
×