ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবর্ধনায় তোয়াব খান

সাংবাদিকের দায়িত্ব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটন ও সত্যের বিকাশ ঘটানো

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

সাংবাদিকের দায়িত্ব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটন ও সত্যের বিকাশ ঘটানো

মিজানুর রহমান, সাতক্ষীরা থেকে ॥ একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রথিতযশা সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান বলেছেন, দেশের স্বার্থ আর সাংবাদিকতার স্বার্থ পরস্পরবিরোধী নয়। সাংবাদিকতা পেশা সম্মানজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের সেবা করার জন্য এই পেশা। সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কাজ ট্রায়াল নয়, বরং সাংবাদিক ও সংবাদপত্র ঘটনার সকল তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরবে। সত্য হচ্ছে শেষ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রেক্ষাপট আর মতাদর্শ যাই থাক না কেন একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব হচ্ছে সত্য উদ্ঘাটন ও সত্যের বিকাশ ঘটানো। একজন সাংবাদিককে আত্মসচেতনতার মাধ্যমে পেশার দায়িত্ব ও নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। সাতক্ষীরার কৃতীসন্তান একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী সরকারের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ‘পিন্ডির প্রলাপ’ এর উপস্থাপক বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খান বুধবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দেয়া উষ্ণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন। প্রেসক্লাব সভাপতি এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন- তোয়াব খানের সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কবির খান বাচ্চু, সুভাষ চৌধুরী, অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, অধ্যক্ষ আনিসুর রহিম, জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার মিজানুর রহমান, আবুল কাসেম, মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জ্বল প্রমুখ। তোয়াব খান বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে স্বাধিকার রক্ষা, আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি, আমার কথা বলার অধিকার ও অসাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠার পাঁচটি প্রত্যাশার লক্ষ্যে ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। বর্তমান সময়ে সাংবাদিকতা পরিবর্তিত ও সম্প্রসারিত হয়েছে, লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিষয় বৈচিত্র্যে বিস্ফোরণ ঘটেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পেশায় এখন অনেকেই আসছেন। গণমাধ্যম প্রকাশের সংখ্যাও বাড়ছে। সাংবাদিকদের দেশের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব আছে, দেশের স্বার্থবিরোধী কিছু করা সাংবাদিকের কাজ নয় উল্লেখ করে তোয়াব খান বলেন, সিন্ডিকেটেড নিউজ বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে। তিনি সিন্ডিকেটেড নিউজ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, বিশ্বখ্যাত কলামিস্ট ওয়াটার লিফটম্যানের লেখা বাহাত্তরটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত হতো। ১৯৭৬ সালের শেষ ভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নীহার বানু হত্যার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, সাংবাদিক ও সংবাদপত্রের কাজ ট্রায়াল নয়। আজকাল বিভিন্ন প্রশ্ন করে সংবাদের প্রকৃতি অন্যদিকে ঘুরিয়ে বিশেষ জায়গায় নেয়ার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। সংবাদপত্রের ভাষা ও বিষয় নিয়ে তোয়াব খান বলেন, সংবাদমাধ্যমটি যেমন, সংবাদের ভাষা ও গঠনও তেমন হবে। এক্ষেত্রে ভাষার তফাত হতে পারে। একই খবরের সকাল-সন্ধ্যা নানান পরিবর্তন হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকের দায়িত্ব সমান গুরুত্ব দিয়ে তা তুলে ধরা। না হলে পাঠক প্রথম খবরটিই মনের মধ্যে ধারণ করে রাখবেন। তিনি ম্যাক লোনের উদ্ধৃতি তুলে ধরে বলেন ‘মিডিয়াম ইজ দ্য মেসেজ। অর্থাৎ গণমাধ্যমই বিষয়বস্তু।’ সাংবাদিকতা এখন আস্তে আস্তে ইলেক্ট্রনিক মাধ্যমে পরিণত হচ্ছে। পাওয়ারফুল ক্যামেরার ছবি যেমন- সমুদ্র তীরে পড়ে থাকা মৃত প্রেমিকের মৃত্যুর ভ্রান্তি দূর করে দিয়েছিল, তেমনি একজন সাংবাদিক তার সংবাদ নির্মাণের পাওয়ার কিভাবে ব্যবহার করছেন সেটাই বড় কথা বলে মন্তব্য করেন তিনি। তোয়াব খান তার দীর্ঘ বক্তৃতায় ১৯৪৭ পূর্ব সাংবাদিকতায় ব্রিটিশবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গি এবং ১৯৪৭ পরবর্তী পাকিস্তানের ঔপনিবেশিক শাসন বিরোধিতার উল্লেখ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধপরবর্তী সাংবাদিকতায় গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ ঘটেছে। তিনি বলেন, ইউরোপে সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদপত্রের বিকাশ ঘটেছে। আর আমাদের এ অঞ্চলে পুঁজির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদমাধ্যমের সম্প্রসারণ ঘটেছে। সাংবাদিকতার অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে বলতে গিয়ে তোয়াব খান বলেন, সংবাদপত্রের জন্য বিজ্ঞাপন এখন একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন সংবাদমাধ্যমে অনেকেই সংযুক্ত হচ্ছেন উল্লেখ করে তোয়াব খান বলেন, বর্তমান আইনে যে কেউ সংবাদপত্র প্রকাশ করতে পারেন। তবে পত্রিকা যিনিই বের করুন না কেন তিনি যেন সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন ভাতা নিশ্চিত করেন। তা না হলে তাদের অসাধু পথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তিনি প্রত্যেক সংবাদকর্মীকে আত্মসচেতন হওয়া, দায়িত্ববোধ ধারণ করা এবং পেশার বাহনকে বিপথে না নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। মানুষের সেবা করাই সাংবাদিকতার মূল উদ্দেশ্য উল্লেখ করে তোয়াব খান বলেন, আজকের দিনে তথ্যের বিস্ফোরণ ঘটেছে। তথ্যের বিকাশ ঘটছে। মানুষ হয়ে মানুষের মতো কাজ করতে হবে উল্লেখ করে ৮৪ বছর বয়সী এই প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, মানুষের সেবা করার জন্যই এ পেশা। এর আগে একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণী সাংবাদিক তোয়াব খান সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে পৌঁছলে তাকে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানো হয়। তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো ছাড়াও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মানিত করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী তোয়াব খানের আত্মকথার খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রেসক্লাবের নবীন প্রবীণ সকল সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
×