ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ক্ষণে লাখো কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘আমার সোনার বাংলা’

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

বিজয়ক্ষণে লাখো কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হবে ‘আমার সোনার বাংলা’

মনোয়ার হোসেন ॥ পেরিয়েছে বাঙালীর স্বাধীনতার ৪৫ বছর। পঁয়তাল্লিশ বছর আগে মুক্তিকামী এই জাতির কাছে আজকের দিনটি এনেছিল বিজয়ের বারতা। শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মিলিত সাহস ও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে একাত্তরের এই দিনে বাঙালী অর্জন করেছিল স্বাধীনতা। পেয়েছিল একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত লাল সবুজের পতাকা ও বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে তুলে ধরার নতুন মানচিত্র। তাই তো বিজয়ের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি আজও আবেগে আপ্লুত করে জাতিকে। হৃদয়ের গহিনে বয়ে যায় শৃঙ্খল মুক্তির শিহরণ। বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটের সেই অবিস্মরণীয় সময়ে বাঙালিত্বের গৌরববোধে জাগ্রত হয় জাতির মন। বছরের প্রতিদিনই ঘড়ির কাঁটা স্পর্শ করে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিট। তবে বাকি ৩৬৪ দিনের বিবেচনায় ১৬ ডিসেম্বর এই ক্ষণটি অনেক বেশি আবেগ ও গৌরবের। একাত্তরের এই বিশেষ ক্ষণেই বিজয়ী বাংলাদেশের কাছে পরাজিত হয়েছিল পাকিস্তান। নতমস্তকে পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল বীর বাঙালীর কাছে। সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে বিশ্ব মানচিত্রে সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জেগে উঠেছিল ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশ। যে দেশের প্রতিটি কোণে আজ সেই ঐতিহাসিক সময়ে ধ্বনিত হবে জাতীয় সঙ্গীতের সুমধুর ধ্বনি। বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের প্রতিটি কোণে অবস্থানরত বাঙালীর কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে উঠবে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানটের যৌথ আয়োজনে বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে মিলিত প্রাণের কলরবে গীত হবে জাতীয় সঙ্গীত। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ভিন্ন আঙ্গিকে বিজয় দিবস উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানট। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে শুরু হবে এ আয়োজন। খেলার মাঠে জাতীয় পতাকার লাল সবুজে সাজিয়ে সবাই গেয়ে উঠবে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’ শিল্পীরা আসবেন জাতীয় পতাকার রংমাখা লাল শাড়ি আর পাঞ্জাবি গায়ে। বাঙালিত্বের অনুভবের এ আয়োজনে শামিল হতে দর্শকদেরও অনুরোধ করা হয়েছে সবুজ শাড়ি আর পাঞ্জাবি পরতে, যাতে লাল সবুজের পতাকার আবহটি উঠে আসে । মাঠে প্রবেশের বিন্যাসও সেভাবেই করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের পুরো আবহের মধ্যে জড়িয়ে থাকবে বাংলাদেশ, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত। হৃদয়ে থাকবে বাংলাদেশ। জাতীয় সঙ্গীত গাইতে গাইতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে উৎসব উদ্বোধন করবেন ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। ‘সকলে মিলে দেশ-গান গাইবার, দেশ-কথা বলবার’ শীর্ষক এ আয়োজনে ২৪টি শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেবে। সবাই মিলে দেশের গান গাওয়া ও শোনার সঙ্গে নৃত্যশৈলীর নান্দনিকতার সমন্বিত উপস্থাপনায় উঠে আসবে মুক্তিযুদ্ধের নানা ধাপ পেরিয়ে পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত পর্যন্ত। এসব পরিবেশনায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান হলো- ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি, লালমাটিয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আটি ভাওয়াল উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইমপিরিয়াল কলেজ, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল ও কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজ, লালমাটিয়া হাউসিং সোসাইটি লিমিটেড স্কুল এ্যান্ড কলেজ, হলিক্রস স্কুল ও কলেজ এবং অরণি, উদয়ন ও উদ্দীপন বিদ্যালয়, একাডেমিয়া, এক্সেল একাডেমি, সাউথ ব্রিজ, সানবীমস্, সানিডেল এবং স্কলাসটিকা স্কুল। সম্মেলক গানগুলোর সঙ্গে নৃত্য পরিবশন করবে ছায়ানটের শিল্পী ছাড়াও জাগো আর্ট সেন্টার, নৃত্যনন্দন, নৃত্যম নৃত্যশীলন কেন্দ্র ও ব্রতচারী। সমাবেশের মতো ব্যাপ্তি ঘটেছে বিষয়েও। এবারের নতুনত্ব, বিজয়-দিবস আয়োজন উপলক্ষে নতুন গানের সৃষ্টি; লিখেছেন কবির বকুল, সুর দিয়েছেন সুজেয় শ্যাম। এবারে আয়োজনে সম্মেলককণ্ঠে গীত হবে ৯টি গান। বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির আয়োজন ২০১৩ থেকে প্রতিবছরই বিজয়ক্ষণে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার ডাক দিয়েছে বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি। তবে এবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বদলে উৎসব অনুষ্ঠিত হবে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। প্রজন্ম চত্বরসহ দেশ ও দেশের বাইরে যে যেখানে অবস্থান করবে, সেখান থেকেই তাদের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন কমিটির সদস্য সচিব ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার। আয়োজন প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এবার জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পাশাপাশি শেরপুরের সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর ২৮ মুক্তিযোদ্ধাকে সম্মাননা জানানো হবে। তিনি জানান, ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় উৎসব উদ্বোধন করবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের ভিত্তিতে মৌলবাদ, জঙ্গীবাদ ও দুর্নীতিমুক্ত আগামীর বাংলাদেশ গড়ার শপথ পাঠ করাবেন অধ্যাপক ড. অজয় রায়। সকাল সাড়ে ৯টায় ‘আমাদের সংস্কৃতি’, বেলা ২টায় ‘কনসার্ট ফর ফ্রিডম’, সাড়ে ৩টায় ‘আমার মুক্তিযুদ্ধ’ স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন, পৌনে চারটায় সোহাগপুরের বিধবাপল্লীর নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান, বিকেল ৪টা ৩১ মিনিটে লাখো কোটি কণ্ঠে প্রাণের জাতীয় সঙ্গীত, ৪টা ৪০ মিনিটে আগামীর বাংলাদেশের শপথ, সন্ধ্যা ৫টা ২০ মিনিটে বর্ণিল আলোকোৎসব ‘বিজয় আতশ সজ্জা’ এবং বিকেল ৪টা ৫০ মিনিট থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কনসার্ট ফর ফ্রিডম অনুষ্ঠান চলবে। এতে অংশ নেবে তাহসান ও তার দল, অর্থহীন, রাফা, লালন, চিরকুট, মিনার্ভা, ওল্ড স্কুল, অরবোভাইরাস, ব্ল্যাকসহ দেশের খ্যাতনামা ব্যান্ডদলগুলো।
×