ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আমৃত্যু পাশে থাকবেন মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

আমৃত্যু পাশে থাকবেন মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে যেভাবে বাংলাদেশের পাশে থেকে লড়াই করেছিলেন সেভাবেই আমৃত্যু বাংলাদেশের পাশে থাকবেন বলে জানিয়েছেন তৎকালীন ভারতীয় মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা। মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতিচারণ করে মিত্রবাহিনীর যোদ্ধারা বলেছেন, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট হলেও এদেশের জনগণের হিম্মত ছিল দেখার মতো, সেই হিম্মত এখনও বাংলাদেশের রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তারা। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কুর্মিটোলার পামভিউ রেস্টুরেন্টে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বীর যোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধের গল্প উৎসবে এসব কথা বলেন। ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও একাত্তর টেলিভিশনের যৌথ উদ্যোগে কুর্মিটোলায় ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধ সময়ের স্মৃতিচারণ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব) হারুন অর রশীদ বীরপ্রতীক, ভারতের সাবেক সেনা কর্মকর্তা কর্নেল এমএম রবি, ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনা ভগত মদন মোহন, হেমন্ত সারদেশাই, লে. জেনারেল (অব) জিএস সিহোতা, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে হারুন অর রশীদ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পরে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় আমাদের কাছে অস্ত্র-গেলাবারুদ কমে আসে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আখাউড়া এলাকায় থাকা ক্যাম্পে আমরা ছিলাম অস্ত্র ছাড়া। এমন অবস্থায় সিদ্ধান্ত নিলাম আমাদের অদূরে থাকা ভারতীয় বাহিনীর ১০ নম্বর বিহার ক্যাম্পে যাওয়ার। একদিন সেখানে গিয়ে কমান্ডিং অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে চাই। সেখানে যাওয়ার পর মুক্তিবাহিনীর লোক পরিচয় দিলেও অনেক জিজ্ঞাসাবাদের পরে আমাকে দেখা করার অনুমতি দেয়া হয়। এর পর ভারতীয় মিত্রবাহিনীর এমএম রবি এলেন এবং আমাকে বেটা সম্বোধন করে জানতে চাইলেন, কী চাই আমাদের। সেই থেকে শুরু। ২/৩ দিন সময় নিয়ে তিনি এগিয়ে এলেন বাংলাদেশী মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া ভারতীয় সেনা ভগত মদন মোহন বলেন, পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশে নিয়ে যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে আনতে সহায়তা করেছে সেভাবেই আজীবন মিত্রবাহিনী হিসেবে পাশে থাকবে ভারত। ভারতীয় এই যোদ্ধা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের নিঃস্বার্থ ত্যাগ সত্যি প্রশংসনীয়। এ কারণেই তারা পাকিস্তান বাহিনীকে এই মাটি থেকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল। তিনি বলেন, ছোট দেশ হলেও এখানকার মানুষের হিম্মত ছিল দেখার মতো। সেই হিম্মতের জোরেই বাংলাদেশের ক্রিকেট দল বিশ্বের বড় বড় দলকে হারিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আজীবন সেই মিত্রবাহিনী হয়েই বাংলাদেশের পাশে থাকব। বাংলাদেশের মানুষ ভীষণ রকম আত্মত্যাগী। ভারতীয় সেনা কর্মকর্তা লে. জেনারেল (অব) জিএস সিহোতা বলেন, বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ অনেক কারণেই মহান হয়ে আছে। এখানে আমরা অনেক কিছুই দেখেছি, এদেশের মানুষের সঙ্গে মিশে অনেক মানবতার ঘটনাও চাক্ষুস করেছি। যা আমাদের আজও মনে আছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে কোথাও নদী পার হতে গিয়ে মাঝির সাহসী সহযোগিতা পেয়েছিলেন, কোথায়ও গ্রামের ভেতরে সাধারণ মানুষ তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছিলেন, কোথায়-কে খাবার দিয়েছিলেন সেসব স্মৃতিও তুলে ধরেন তিনি। সিহোতা বলেন, বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানের হামলা ছিল যেমন মানবতার বিরুদ্ধে তেমনি বাংলাদেশীদের মানবিক অনেক আচরণ আমাদের মুগ্ধ করেছিল। একজন গণক, একজন মাঝি, একজন গৃহস্থ কীভাবে তাদের সতর্ক করেছিলেন তা জানান সিহোতা। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাওয়া একটি দেশ এই বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতিতে খুশি এই ভারতীয় যোদ্ধা। তিনি বলেন, এদেশের এগিয়ে যাওয়া আমাদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানের শুরুতে মোজাম্মেল বাবু বলেন, আমরা দুই দেশ মিলে সেদিন একটি যুদ্ধ করেছিলাম। আমাদের সম্পর্ক রক্ত দিয়ে লেখা। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এমনই এক যুদ্ধ ছিল তার প্রতিটি গল্পই আলাদা। তাই এখানে যা কিছু আমরা শুনতে পাব তা আলাদা কিছুই হবে। মোজাম্মেল বাবু বলেন, ভারতের হাজার হাজার যোদ্ধা যারা বাংলাদেশের জন্য লড়াই করেছেন, জীবন দিয়েছেন, তাদের এই অবদান খুব সহজ কোন বিষয় নয়। এই যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। যাতে আপামর জনতা যেমন অংশ নিয়েছিল, অংশ নেয় বাংলাদেশের সেনা কর্মকর্তা ও সাধারণ সৈনিকরা। সঙ্গে এসে যোগ দেন ভারতেরই সৈনিকরা। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই দেশ তাদেরও রক্তে গড়া। তাদের অবদান আমরা কখনই ভুলব না, ভোলা যাবে না।
×