ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪৫ বছর পূর্তি আজ ॥ বিজয় নিশান উড়ছে ঐ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

৪৫ বছর পূর্তি আজ ॥ বিজয় নিশান উড়ছে ঐ

উত্তম চক্রবর্তী ॥ ‘পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে/ জ্বলন্ত ঘোষণার ধ্বনি-প্রতিধ্বনি তুলে, নতুন নিশান উড়িয়ে, দামামা বাজিয়ে দিগি¦দিক/ এই বাংলায়/ তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।’ দেশের প্রয়াত শ্রেষ্ঠ কবি শামসুর রাহমানের এই কবিতা একাত্তর সালের এই দিনে সত্যি হয়ে দেখা দিয়েছিল বাঙালীর জাতীয় জীবনে। রক্তনদী পেরিয়ে আসা আনন্দ-বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবস আজ। বিজয়ের গৌরবের- বাঁধভাঙ্গা আনন্দের দিন। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর-বিহ্বল হওয়ারও দিন। তীব্র শোষণের কুহেলী জাল ভেদ করে একাত্তরের এই দিনটিতে প্রভাতী সূর্যের আলোয় ঝিকমিকিয়ে উঠেছিল বাংলার শিশির ভেজা মাটি, অবসান হয়েছিল পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে তেইশ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়। নয় মাসের জঠর-যন্ত্রণা শেষে এদিন জন্ম নেয় একটি নতুন দেশÑ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ঝড়ের ভেতরে বিকশিত অটল বৃক্ষের জীবন্ত প্রতীক স্বাধীনতা নামের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ আজও প্রচ- ঝাঁকি দেয় রক্তে, শাণিত করে চেতনা। পূর্বাচলে আজ উদিত যে সূর্য, প্রতিদিনের হয়েও সে প্রতিদিনের নয়; তার রক্তিমতায় ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আমাদের মনে পড়বে; আকাশ যে কোমলতায় আজ উদ্ভাসিত, একাত্তরের সম্ভ্রমহারা দশ লাখ মা-বোন-জায়ার ক্রন্দনধোয়া সে উদ্ভাস। ভোরের যে রাঙা আলোটি আজ স্পর্শ করেছে ভূমি, স্বদেশের সেই পবিত্র ভূমি ভিজে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রক্তে; আর সেই রক্তস্রোতে মিশে আছে জাতীয় চার নেতার উষ্ণ শোণিত। দেনদরবার নয়, কারও দয়ার দানে নয়, সাগর সমান রক্তের দামে বাংলাদেশ অর্জন করেছে স্বাধীনতা, রক্ত সাগর পেরিয়ে বাঙালী জাতি পৌঁছেছে তার বিজয়ের সোনালি তোরণে। বিজয়ের পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্তিতে তোমাকে অভিবাদন, বাংলাদেশ। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ সবুজ দেশে ৪৫ বছর আগে আজকের এই দিনে উদয় হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন, যে স্বপ্নে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিল এ দেশের ৩০ লাখ মানুষ। আজ ৪৫ বছর পরও সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পায়নি, শেষ হয়নি মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কুয়াশায় জড়ানো হালকা শীতের বিকেলে রমনার রেসকোর্স ময়দানে দাম্ভিক পাকিস্তানী সেনারা যে অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বাঙালীর বুকে, হাতের সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নেতাদের সামনে। তবে এবারের ডিসেম্বর আমাদের জীবনে নতুন তাৎপর্য নিয়ে এসেছে। বিজয়ের দীর্ঘ সময় পরে হলেও ঘৃণ্য শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং দণ্ডাদেশ কার্যকর হয়েছে। শত ষড়যন্ত্র ও রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী ও একাত্তরের নরঘাতক- মতিউর রহমান নিজামী, আলবদরের প্রধান আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা ও মীর কাশেম আলীকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সারাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের মানুষের মনে একটা স্বস্তি এসেছে। জাতির কলঙ্ক কিছুটা হলেও মোচন হয়েছে। পাকিস্তান ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের বিরুদ্ধে এক অন্যরকম গণজাগরণ ও আবহে এবার বিজয় দিবস পালন করবে গোটা জাতি। এবারের বিজয় দিবস মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় মৌলবাদ, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ের মধ্য দিয়ে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়নের অঙ্গীকারের পথে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা নিয়ে এসেছে। ফ্লাশব্যাক ॥ বাঙালী আঘাত খেয়েছে বারবার কিন্তু কখনও আহত পাখির মতো আর্তনাদ করেনি, ভেঙ্গে পড়েনি ব্যর্থতার ক্রন্দনে। সমস্ত আঘাত সে বুক পেতে নিয়েছে, সর্বাঙ্গে রুধির মেখে অবিচারের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। সেই ১৯৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেটির উদয় ঘটে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে- বহু শতাব্দীর স্বপ্ন-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাধ্যমে। অবর্ণনীয় দুর্যোগে ল-ভ- হওয়া বাংলাদেশের বঞ্চিত ও শোষিত মানুষ রুখে দাঁড়ায় সর্বশক্তি দিয়ে। আত্মবিস্মৃত বাঙালী আত্মপরিচয় অনুসন্ধানে উৎসর্গ করে নিজ ও স্বজনকে। ছিনিয়ে আনে বিজয়, লাল-সবুজ পতাকা সংবলিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন সকালে জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনের কর্মকর্তা জন আর কেলি পৌঁছান সেনানিবাসের কমান্ড বাংকারে। সেখানে নিয়াজী নেই, ফরমান আলীকে পাওয়া গেল বিবর্ণ ও বিধ্বস্ত অবস্থায়। নিচু কণ্ঠে ফরমান আলী জানান, আত্মসমর্পণ সংক্রান্ত ভারতীয় বাহিনীর প্রস্তাব তারা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু তাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় ভারতে সেই সংবাদ পাঠাতে পারছেন না। কেলি প্রস্তাব দিলেন, জাতিসংঘের বেতার সঙ্কেত ব্যবহার করে তিনি বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন। আত্মসমর্পণের জন্য বেঁধে দেয়া সময় সকাল সাড়ে নয়টা থেকে আরও ছয় ঘণ্টা বাড়ানো ছাড়া ভারতীয় বাহিনীর সব প্রস্তাব মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণের বার্তা পৌঁছানো হয় জাতিসংঘের বেতার সঙ্কেত ব্যবহার করে। ভারতে তখন সকাল ৯টা ২০ মিনিট। কলকাতার ৮ নম্বর থিয়েটার রোডের (বর্তমান শেক্সপিয়ার সরণি) একটি দোতলা বাড়ি। বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সচিবালয় আর প্রধানমন্ত্রীর দফতর। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল। বরাবরের মতো সেদিনও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কক্ষের দরজা একটু খোলা। উদ্বিগ্ন প্রধানমন্ত্রী অভ্যাসবশে ডান হাতের আঙ্গুল কামড়াচ্ছেন। আনুমানিক সকাল দশটায় তাজউদ্দীন আহমদের ফোনটি বেজে উঠল। গুরুত্বপূর্ণ কেউ ছাড়া ওই ফোনে ফোন করতে পারে না। কী কথা হলো বোঝা গেল না। কিন্তু ফোন রেখে, চোখেমুখে সব পাওয়ার আনন্দ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানালেন, ‘সবাইকে জানিয়ে দাও, আজ আমরা স্বাধীন। বিকেল চারটায় পাকবাহিনীর আত্মসমর্পণ।’ প্রধানমন্ত্রী নিজেই অবশ্য খবরটি সবাইকে শোনালেন। আর বললেন, কাজের প্রথম পর্যায় শেষ হলো কেবল। এবার দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশ গড়ার কাজে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। এদিকে ঢাকায় পাকা খবর এসে পৌঁছেছে কিছুক্ষণ আগে। আত্মসমর্পণ হবে বিকেল সাড়ে চারটায়। ঢাকাবাসী কী করবে আর কী করবে না বুঝে উঠতে পারছে না। সকাল দশটা ৪০ মিনিটে মিত্রবাহিনী ঢাকায় প্রবেশ করল। এর আগেই মিরপুর ব্রিজ দিয়ে ঢাকায় ঢুকে পড়েছে কাদের সিদ্দিকীর বাহিনী। পৌষের এক পড়ন্ত বিকেলে ঢাকা রেসকোর্স ময়দান (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) প্রস্তুত হলো ঐতিহাসিক এক বিজয়ের মুহূর্তের জন্য। ঠিক যেখান থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরের সাতই মার্চ বর্জ্রকণ্ঠে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। বেলা একটা নাগাদ কলকাতা থেকে ঢাকা এসে পৌঁছান যৌথবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা, চীফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জ্যাকব, মুক্তিবাহিনীর উপঅধিনায়ক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খোন্দকার (সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী)। দুপুর একটার পর জেনারেল হেড কোয়ার্টারে বসে আত্মসমর্পণের দলিল তৈরির বৈঠক হয়। এক পক্ষে নিয়াজী, রাও ফরমান আলী ও জামশেদ খান। অপর পক্ষে জ্যাকব, নাগরা ও কাদের সিদ্দিকী। সিদ্ধান্ত হয়Ñ দলিলে স্বাক্ষর করবেন বিজয়ী বাহিনীর পক্ষে ভারতের ইস্টার্ন কমান্ড ও বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর জয়েন্ট কমান্ডিং ইন চীফ লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এবং পরাজিত বাহিনীর পক্ষে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজী। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জেনারেল অরোরা আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিমান ও নৌবাহিনীর চীফ অব স্টাফসহ কলকাতা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। নিয়াজী অভ্যর্থনা জানান যৌথবাহিনীর কমান্ডারকে। এরপর আসে সেই মাহেদ্রক্ষণ। পরাজিত পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজী রেসকোর্স ময়দানে এলেন। সামরিক বিধি অনুসারে বিজয়ী ও বিজিত সৈনিকরা শেষবারের মতো জেনারেল নিয়াজীকে গার্ড অব অনার জানায়। বিকেল চারটায় নিয়াজী ও অরোরা এগিয়ে গেলেন ময়দানে রাখা একটি টেবিলের দিকে। জেনারেল অরোরা বসলেন টেবিলের ডান দিকের চেয়ারে; বাঁ পাশে বসলেন জেনারেল নিয়াজী। দলিল আগে থেকেই তৈরি ছিল। জেনারেল অরোরা স্বাক্ষর করার জন্য দলিল এগিয়ে দেন নিয়াজীর দিকে। তখন বিকেল চারটা ৩১ মিনিট। অবনত মস্তকে জেনারেল নিয়াজী দলিলে স্বাক্ষর করে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করে নিলেন স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে। মুজিবনগর সরকারের পক্ষে এ সময় উপস্থিত ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ কে খন্দকার। দীর্ঘ ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালী জাতির জীবনে এলো নতুন প্রভাত। এলো হাজার বছরের কাক্সিক্ষত স্বাধীনতা। পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে বাঙালী জাতি অর্জন করে তাদের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি, লাল-সবুজের অহঙ্কৃত পতাকা, বিশ্বমানচিত্রে স্বাধীন সার্বভৌম জাতি হিসেবে নিজেদের গর্বিত পরিচয়। বিজয়ের মুক্তির নিশান ওড়ে বাংলার সর্বত্র। কর্মসূচী ॥ আজ শুক্রবার প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে মহান বিজয় দিবসের সূচনা হবে। আজ সরকারী ছুটির দিন। সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামবে কৃতজ্ঞ জনতার ঢল। বীর শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মহান ত্যাগের কথা স্মরণ করে কৃতজ্ঞ জাতি শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। দেশব্যাপী আজ সকল ভবন শীর্ষে উড্ডীন থাকবে রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বিদেশী কূটনীতিক, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যরাও শ্রদ্ধা জানাবেন স্মৃতিসৌধে। দিবসটি উপলক্ষে আজ সকালে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কোয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। এতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশের বিশিষ্টজনদের সংবর্ধনা দেবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সকল সরকারী-বেসরকারী টিভি চ্যানেলে প্রচার করা হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা, সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করেছে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে আলোকসজ্জা করা হবে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়ক-দ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকাসহ অন্যান্য পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা, ভবঘুরে কেন্দ্রসমূহে আজ পরিবেশন করা হবে উন্নতমানের খাবার। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের মিশনসমূহে বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দেশের অব্যাহত শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। এছাড়া ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে বিজয় উৎসব। বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ চার দিনের কর্মসূচী পালন করছে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ বিজয় র‌্যালি করবে আওয়ামী লীগ। ঢাকা মহানগরীর অন্তর্গত সকল থানা শাখা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় সংসদ সদস্যরা নিজ নিজ এলাকা থেকে বিজয় র‌্যালিসহ পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্থান ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমবেত হবেন ও সেখানে স্থাপিত শিখা চিরন্তনে পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় বিকেল তিনটায় শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ধানম-ি ৩২ নম্বর অভিমুখে বিজয় মিছিল শুরু হবে। এছাড়াও সকাল দশটায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। বিজয় দিবস উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার বিকেল তিনটায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা হবে। সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও আগামী ১৮ ডিসেম্বর রবিবার সন্ধ্যা ছয়টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে আওয়ামী লীগ। ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। অনুষ্ঠানে দেশবরেণ্য শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এছাড়া জাতীয় পার্টি, বিএনপি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, সিপিবি, সাম্যবাদী দল, গণফোরাম, গণতন্ত্রী পার্টি, জাকের পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ অজস্র সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পালন করছে বিস্তারিত কর্মসূচী। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরসহ বিভিন্ন মন্দির ও উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত হবে প্রার্থনা সভা। আজ বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানটের যৌথ আয়োজনে ‘সকলে মিলে দেশ-গান গাইবার, দেশ-কথা বলবার।’ অনুষ্ঠানে শিল্পীরা মানবপতাকা তৈরি করে সম্মিলিত সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করবেন। বিজয় ঘোষণার ক্ষণ চারটা ৩১ মিনিটে সম্মিলিত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হবে। শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে দেশসেরা ব্যান্ডসমূহের অংশগ্রহণে বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির আয়োজনে থাকবে ‘কনসার্ট ফর ফ্রিডম’। ফেসবুক গ্রুপ বিজয় উৎসবের উদ্যোগে ধানম-ির আবাহনী মাঠে ৪৫ ফানুস উড়িয়ে বিজয়ের ৪৫ বছর উদযাপন করবে। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে নৌবাহিনীর জাহাজসমূহ ঢাকা সদরঘাট, পাগলা নেভাল জেটি, চট্টগ্রাম নিউমুরিং নেভাল জেটি, চাঁদপুর বিআইডব্লিউ ঘাট, খুলনা বিআইডব্লিউ স্কিড ঘাট, খুলনার বিআইডব্লিউ স্কিড ঘাট, মংলা দিগরাজ নেভাল জেটি ও বরিশালের রকেট ঘাট সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ঢাবি ক্যাম্পাসে বিজয় উল্লাস ॥ বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার জানান, আলোক সজ্জায় সেজেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, বিজয়ের উল্লাসে রাস্তায় নেমে এসেছে ছাত্র-শিক্ষকসহ সর্বস্তরের মানুষ। বাঙালী সংস্কৃতি চর্চার পুণ্যভূমি টিএসসিতে চলছে ‘রক্তে রাঙা বিজয় আমার’ সেøাগানে তিনদিনব্যাপী বিজয় উৎসব। অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে টিএসসির সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবারের মতো ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এবারও চলছে এমন আয়োজন। বিকেলে টিএসসিতে সাংস্কৃতিক ইউনিয়নের পরিবেশনায় তিনদিনব্যাপী কর্মসূচী, কুইজ সোসাইটির কুইজ প্রতিযোগিতা, ধারাবাহিকভাবে কালচারাল সোসাইটির নৃত্য প্রদর্শন, আইটি সোসাইটির অনলাইনে মুক্তিযুদ্ধ ও ডিবেটিং সোসাইটির বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ফানুস উড্ডয়নের মাধ্যমে উন্মাদনার ভিন্ন আমেজ তৈরি করে যান। সাংবাদিক সমিতির ছিল ‘সংবাদ পত্রে বিজয় সংগ্রাম’ সেøাগানে আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এরপর ব্যান্ড অর্জনসহ বিভিন্ন ব্যান্ডের গান পরিবেশনা। রাত ১২টায় আতশবাজি ও মোমবাতি প্রজ্বলন করে দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
×