ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬

নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন

জাতিসংঘের নেয়া বৈশ্বিক লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০ সালের অনেক আগেই সরকার বাংলাদেশে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য নিরাপদ ও সহজলভ্য পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়েছে। সকলের জন্য নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন নিশ্চিতকরণসহ এসডিজি-৬ অর্জনে বাংলাদেশ যাতে বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বা রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে সে জন্য তার কৌশলপত্র প্রণয়ন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সংক্রান্ত জাতীয় কর্মশালার উদ্বোধনী বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এমডিজির মতো এসডিজির ক্ষেত্রেও আমাদের সাফল্য অর্জিত হবে। সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যেই যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি পাচ্ছে। আমরা শতভাগ মানুষকে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে চাই।’ সুপেয় পানির সঙ্কট বিশ্বব্যাপী এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে বলা হচ্ছে- আগামীতে যদি বিশ্বযুদ্ধ বাধে, তাহলে তা পানির জন্যই বাধবে। অথচ পৃথিবীর চার ভাগের তিন ভাগই পানি। এর বেশিরভাগই যে পানের অনুপযুক্ত লোনা পানি! বাংলাদেশের মতো জলাভূমি ভরপুর, বহুল বৃষ্টিপাতের দেশটিতে প্রাকৃতিকভাবে সুপেয় পানির সঙ্কট থাকার কথা ছিল না। সমস্যা হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে। সেচ ব্যবস্থায় পাম্প প্রক্রিয়ায় ক্রমাগত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে তলদেশের পানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েও সুপেয় পানি সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের দক্ষিণে রয়েছে বঙ্গোপসাগর, লোনা পানির বিশাল পারাবার। দক্ষিণের মানুষ লোনা পানি থেকে যত দূরে সরে যেতে চেয়েছে ততই সাগর এগিয়ে এসেছে তাদের দিকে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে জোয়ার বা জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বাড়ছে। বিশেষ করে ২০০৯ সালে আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় আইলায় খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট অঞ্চলের উপকূলীয় বাঁধ ছিন্নভিন্ন হয়ে লোনা পানি ঢুকে যাওয়ার পর ওই এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট বিরাজ করছে। অবশ্য কিছু মেরামত ও সংস্কার কাজ হয়েছে বটে; বিস্তীর্ণ অংশ এখনও ছোটখাটো ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ এমনকি জোয়ার-ভাটাতেও প্লাবিত হয়ে চলেছে এবং অবধারিতভাবে ক্রমবর্ধমান লবণাক্ততায় জেরবার হচ্ছে। লবণাক্ততার কারণে শুধু খাবারের পানি নয়, ফসল উৎপাদনের সমান্তরালে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মিঠা পানির মৎস্যসম্পদেও। তবে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জীবন-মরণ সঙ্কট হচ্ছে সুপেয় পানির অভাব। চাল, ডাল, সবজি, আমিষ উপকূলীয় এলাকার বাইরে থেকে রসদ সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু পানি? গত শুষ্ক মৌসুমেও সুন্দরবনসংলগ্ন বহু উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিতে দেখেছি। এসব উপজেলায় প্রায় ৫০ লাখ মানুষ বাস করেন। এক কলস পানি সংগ্রহের জন্য এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছুটতে হয় সেখানকার মানুষকে। তথ্যানুযায়ী পৃথিবীর প্রায় ১১০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জল পায় না। তাছাড়া ২৬০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানির অভাবে মৌলিক স্বাস্থ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশ্ব পানি দিবসে মানব জাতির জন্য ভয়াবহ এ রিপোর্ট প্রকাশ করে জাতিসংঘের পরিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক সেল। সরকার ইতোমধ্যে ‘ন্যাশনাল ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন এ্যাক্ট-২০১৪’ প্রণয়ন করেছে। পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে- বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২০১০। উল্লেখ্য, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে পানির গুরুত্ব বুঝতে পেরে জাতির পিতা ১৯৭২ সালে আন্তঃদেশীয় সীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনা বিষয়ে যৌথ নদী কমিশন গঠন করেন। স্বাধীনতার পরই তিনি উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশের সব ধরনের উন্নয়নের সঙ্গে নদ-নদী ও পানি সম্পদ অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বর্তমান সরকার জনগণের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যকর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আইন ও বিধিবিধানের পরিবর্তন এবং সময় উপযোগী অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সেসব প্রকল্প সাফল্য অর্জন করুক- সেটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
×