ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ নাগরিকের আকাক্সক্ষা

বাংলাদেশকে ভালবেসে এ দেশেই মরতে চান লুসি হল্ট

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

বাংলাদেশকে ভালবেসে এ দেশেই মরতে চান লুসি হল্ট

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশকে ভালবেসে মরতে চান ব্রিটিশ নাগরিক মিস লুসি হল্ট। এদেশে তার রক্তের কেউ নেই। তবুও এখানকার মাটি ও মানুষের ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাদা চামড়ার এই ভিনদেশী মানুষটি এখানে কাটিয়ে দিলেন প্রায় ৬০ বছর। মহান মুক্তিযুদ্ধের নিভৃতচারী নীরব সাক্ষী এই মানবদরদী নারী দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধাহত মানুষের সেবা দিয়েছেন অকাতরে। তাই তো এখানকার মায়ায় বরিশালের মাটিতেই মরতে চান লুসি। তিনি বলেন, ইংল্যান্ডের সেন্ট হেলেন শহরে লুসির জন্ম ১৯৩০ সালে। বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন হাসপাতালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে সেবায়েত হিসাবে যোগদান করেন। দু’বছর পর দেশে ফেরার কথা থাকলেও এখানকার প্রকৃতি, মানুষ ও মাটির ভালবাসা মুগ্ধ করে তাকে। দীর্ঘ ৫৬ বছর ধরে চলছে লাল সবুজের এই দেশের সঙ্গে তার হৃদয়িক মিতালি। তিনি গভীর ভালবাসা থেকে রপ্ত করেছেন পুরোপুরি বাঙালিয়ানা। তার হৃদয়জুড়ে এখন বাংলাদেশের প্রতি গভীর প্রেম। তিনি মনেপ্রাণে চান বাংলাদেশ ভাল করুক,আরও উন্নতি লাভ করুক। বরিশাল শহরে বসে বাসসর সঙ্গে আলাপকালে বেশ শুদ্ধ বাংলায় মনের ভাব প্রকাশ করেন লুসি। তিনি বলেন, বিনে পয়সায় কখনও সেলাই শেখানো, তাঁত প্রশিক্ষণ, পথশিশুদের পাঠদান, কখনওবা হাসপাতালে সেবা দিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলায়। কাজের শুরুটা হয়েছে বরিশাল থেকে। পরবর্তীতে রাজশাহী, ঢাকা, নওগাঁ, যশোর, খুলনা, গোপালগঞ্জ হয়ে আবারও তার ভালবাসার শহর বরিশালে ফিরে আসা। অক্সফোর্ড মিশন হোস্টেলের একটি ছোট কামরায় বাস করেন এই ব্রিটিশ নাগরিক। এখানে তার কাছে কেউ কেউ আসেন ইংরেজী থেকে বাংলায় অনুবাদের জন্য। আবার কেউ বাংলা থেকে ইংরেজী করার জন্য। হাসিমুখেই তিনি এসব কাজ করে দেন। খুশি হয়ে যে যা দেন তাই তিনি গ্রহণ করেন। কোনও নির্দিষ্ট চাহিদা নেই তার। অক্সফোর্ড মিশনের ম্যানেজার বেনডিক্ট বিমল বেপারি জানান, ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে মাসে ৭০ পাউন্ড ভাতা পান তিনি, যার প্রায় সবটাই অসহায়দের মাঝে বিলিয়ে দেন। দীর্ঘ বছর ধরে লুসিকে সাদাসিধে জীবনজাপন করতে দেখে আসছেন তিনি। এদেশে তার রক্তের কোন আত্মীয়-স্বজন না থাকলেও হৃদয়ের আতী¥য়তা করেছেন অনেক বাঙালীর সঙ্গে। এখন তারাই তার সব। আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি লুসির রয়েছে। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যশোরের ফাতেমা হাসপাতালে বেশ কয়েক মাস আয়া হয়ে সেবা দিয়েছেন আহতদের। কোন স্বীকৃতি বা লাভের আশায় নয় সম্পূর্ণ মানবিক দিক থেকেই তিনি বেসামরিক লোকদের সেবা দিয়েছেন। এদেশে ব্রিটিশ শাসকদের অপশাসন নিয়েও তার মনে তীব্র ক্ষোভ রয়েছে। তার মতে, ব্রিটিশরা এখানে (এই উপমহাদেশে) যা করেছে তা ঠিক করেননি। পূর্বপুরুষদের দুঃশাসন নিয়ে কেউ কিছু বললে বোবামুখে নিজেকে কষ্ট দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন। মিশনের ভেতরে কবরস্থানে তার নিজের কবরের জায়গা ঠিক করে রেখেছেন। ৮০ বছরেরও বেশি বয়সের লুসিকে শান্ত, দরদী ও পরোপকারী হিসাবেই মিশনের সবাই জানেন।
×