ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ের উৎসবে মুখর রাজধানী

ভয় নেই কোন ভয় জয় বাংলার জয়...

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

ভয় নেই কোন ভয় জয় বাংলার জয়...

মোরসালিন মিজান ॥ স্বপ্নের মতো দিন। নয় মাস যুদ্ধ করে পাওয়া। হ্যাঁ, ১৬ ডিসেম্বর। একাত্তর সালের এই দিনে বিজয় অর্জন করে বাঙালী। নয় মাস যুদ্ধ শেষে পাওয়া হয় বাংলাদেশ। গৌরবের স্মৃতি এখনও আবেগে ভাসায়। আনন্দের হিল্লোল তুলে মনে। আগামীকাল শুক্রবার মহান বিজয় দিবস। তার আগেই গোটা রাজধানী মেতেছে বিজয়ের আনন্দে। প্রতিপ্রান্তে চলছে উৎসব অনুষ্ঠান। যুদ্ধদিনের গৌরবগাথা বর্ণনা করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। আলোচনা স্মৃতিচারণ হচ্ছে। চলছে গান-নাচ। কবিতার ভাষায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে দেশপ্রেম। সব মিলিয়ে অন্যরকম আবেগী একটা সময়। প্রতিবছরের মতোই এখন রাজধানীজুড়ে চলছে বিজয়ের উৎসব। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রধানতম ভেন্যুটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ। এখানে মঙ্গলবার থেকে বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। উৎসবের উদ্বোধন করেন অমর একুশের গানের রচয়িতা ভাষাসৈনিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। এর পর থেকে বিভিন্ন পরিবেশনায় মুখর। দ্বিতীয় দিন বুধবার গানে গানে যুদ্ধদিনের কথা বলেন শিল্পীরা। গণসঙ্গীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী। প্রথমেই শিল্পীরা গাইলেন ‘বিজয় নিশান ওড়ছে ওই’ গানটি। পরের পরিবেশনা ‘যে ইতিহাস রচি আমি।’ তৃতীয় গানে জয় বাংলার জয় ঘোষণা করেন শিল্পীরা। গান- ভয় নেই কোন ভয়/ জয় বাংলার জয়...। ছায়ানট, ওস্তাদ মোমতাজ আলী খান সংগীত একাডেমির শিল্পীদের গানেও ছিল বিজয়ের আনন্দ। আবেগ। উৎসবে একাত্তরে গাওয়া গান পরিবেশ করেন স্বাধীন বাংলা বেতারের গায়িকা বুলবুল মহলানবীশ। সমর বড়ুয়া, আব্দুল ওয়াদুদের গানেও ছিল বিজয়ের সুর। দলীয় সঙ্গীতে বাঙালীর স্বপ্ন ও সংগ্রামের ইতিহাস ঘুরেফিরে আসে। কবিতার ভাষায়ও ফুটিয়ে তোলা হয় একাত্তর। অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করতে করতে মাটিতে লুটিয়ে পরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শিল্পীরা। একক আবৃত্তি করেন ফয়জুল আলম পাপ্পু, মজুমদার বিপ্লব, মোখলেসুর রহমান প্রামানিক ও তানভীর হাকিম। দলীয় আবৃত্তি করেন প্রকাশ ও কণ্ঠশীলনের শিল্পীরা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে বেণুকা ললিতকলা কেন্দ্র। সবশেষে ছিল পথনাটক। ঢাকার আরও বেশি কয়েকটি স্থানে একই সঙ্গে চলছে এই বিজয় উৎসব। বুধবার ধানম-ির রবীন্দ্রসরোবরের কবি রফিক আজাদ মঞ্চে গানে গানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রোকাইয়া হাছিনা, আব্দুল হালিম খান ও সানজিদা মঞ্জুরুল হ্যাপি। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরধ্বনি, ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠী। একক করেন শামসুদ্দোহা, সুপ্রভা সেবতি ও জালাল উদ্দীন হিরা। দলীয় আবৃত্তি করে স্বরব্যঞ্জন, সংবৃতা ও চারুবাক। দলীয় নৃত্যে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে ভোরের পাখি নৃত্যকলা কেন্দ্র। লোকনাট্যদল (টিএসসি) নিয়ে আসে পথনাটক। একইদিন রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে বহ্নিশিখা ও কৃষ্টিচর্চা কেন্দ্র। একক সংগীত পরিবেশন করেন সুমন চৌধুরী, শিমুল সাহা প্রমুখ। দলীয় আবৃত্তি করে উদ্ভাসণ ও কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন তামান্না তিথি, সৈয়দ শহিদুল ইসলাম নাজু ও শামিমা নাসরিন মিতু। সবার পরিবেশনায় ছিল একাত্তর। সেই সব দিনের কথা। দনিয়া মঞ্চে দলীয় সংগীত পরিবেশন করে সুরসাগর ললিতকলা একাডেমি, ঢাকা একতা সামাজিক-সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, লালন পড়শী একাডেমি। ছিল প্যান্টোমাইম পরিবেশনা ‘জেন্টলম্যান।’ সবশেষে ছিল পথনাটক। মিরপুরের খোন্দকার নূরুল আলম মঞ্চে একক সংগীত পরিবেশন করেন শাহ্জামান তোতা, শাহিনুর রহমান, অনুপমা সরকার ও তুষার চন্দন। আবৃত্তি করে মিথষ্ক্রিয়া আবৃত্তি পরিষদ। গানে গানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায় সঙ্গীত সরণী সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি করেন সাফিয়া খন্দকার রেখা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও চলছে বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা। বুধবার জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে ছিল বিভিন্ন আয়োজন। দুই শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এদিন বাবার স্মৃতিচারণ করেন। আব্দুস সালামের কন্যা সালমা নার্গিস ও শহীদ পেয়ারী মোহন আদিত্যর পুত্র নটো কিশোর আদিত্য। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে ছায়ানট। আবৃত্তি করে শ্রোত আবৃত্তি সংসদ। ছিল বধ্যভূমির সন্তানদলের একটি চমৎকার পরিবেশনা। এদিকে, বিজয় দিবসে উৎসবের নগরী হবে রাজধানী ঢাকা। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে বিজয় দিবসের বিশেষ আয়োজন নিয়ে থাকবে ছায়ানট। মূল মঞ্চটি হবে লাল রঙের। লাল পোশাক পরিধান করবেন শিল্পীরাও। দর্শকদের সবুজ পোশাক পরে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। এভাবে জাতীয় পতাকার রঙে সাজবে গোটা স্টেডিয়াম। জানা যায়, বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। সম্মেলক গান থাকবে নয়টি। গানগুলোর মধ্যে থাকছেÑ দুর্গম গিরি কান্তার, এখন আর দেরি নয়, মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম, বাংলা মা’র দুর্নিবার আমরা তরুণ দল, আমরা তো উজ্জ্বল সূর্য, তিরিশ লক্ষ জীবন দিয়া এবং লাখো লাখো শহীদের রক্তমাখা। একক গান করবেন শাহিন সামাদ ও চন্দনা মজুমদার। থাকবে কবিতাও। সৈয়দ হকের কবিতা থেকে পাঠ করবেন লিয়াকত আলী খান। নাচ পরিবেশন করবে ছায়ানটের ভরতনাট্যম বিভাগ, মণিপুরী বিভাগের শিল্পীরা। এর বাইরে নাচ নিয়ে আসবে নৃত্যনন্দ, জাগো আর্ট সেন্টার, ব্রতচারী সমিতির শিল্পীরা। শিল্পী- শ্রোতা সবাই মিলে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে উৎসব। গত বছরের তুলনায় উৎসবের পরিসর আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে প্রথমবারের মতো যুক্ত হচ্ছে ঢাকার অনেক নামকরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। স্কুল-কলেজের মধ্যে থাকছে ভিকারুননিসা, হলিক্রস, রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ, ঢাকা ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল এন্ড কলেজ। ইংরেজী মাধ্যম স্কুলেকেও যুক্ত করা হয়েছে উৎসবে। থাকছে সানিডেল, সাউথব্রিজ, সানবীমসের মতো প্রতিষ্ঠান। থাকছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি, লালমাটিয়া মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ কিছু প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ।
×