ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদ্রোহীদের নিরাপদে শহর ত্যাগের সুযোগ

চার বছর পর আসাদ বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আলেপ্পো

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

চার বছর পর আসাদ বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আলেপ্পো

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ সিরিয়ার আলেপ্পোতে অবশেষে চার বছর ধরে চলা যুদ্ধের অবসান হয়েছে। নিরাপদে আলেপ্পো ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ নিয়ে আসাদ সরকারের সঙ্গে সোমবার চুক্তি করেছে বিদ্রোহীগোষ্ঠী। আলেপ্পো এখন রুশ সমর্থিত আসাদ বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। চুক্তি অনুযায়ী কোণঠাসা অবস্থায় থাকা বিদ্রোহীদের নিরাপদে শহর ত্যাগের সুযোগ দেয়া হবে। তবে বিদ্রোহীরা চাইছে, বেসামরিক নাগরিকদেরও যেন তাদের সঙ্গে শহর ছাড়ার সুযোগ দেয়া হয়। অবশ্য আলেপ্পোর কিছু কিছু জায়গায় গোলাগুলির খবর দিয়েছে দ্য অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস। খবর বিবিসি ও এএফপির। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠকে রুশ রাষ্ট্রদূত ভিটালি চুরকিন জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে আমাদের হাতে যে তথ্য রয়েছে তাতে পূর্ব আলেপ্পোয় সামরিক অভিযান শেষ হয়েছে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, বিদ্রোহীদের স্থান ত্যাগ করার সুযোগ দিয়ে চুক্তি হয়েছে। চুরকিন আরও বলেন, বেসামরিক বাসিন্দারা চাইলে থাকতে পারে, চলে যেতেও পারে এবং নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নিয়ে মানবিক সাহায্যের সুযোগ নিতে পারে। বেসামরিক লোকদের ক্ষতি করবে না কেউ। সিরিয়া গৃহযুদ্ধে আলেপ্পোয় সরকারী বাহিনীর জয় বিদ্রোহীদের জন্য পরাজয়ের শামিল। আলেপ্পোতে থাকা সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, কয়েক ঘণ্টা ধরে শহরটিতে কোন বোমা বিস্ফোরণ বা গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কিরবি বলেছেন, আলেপ্পোতে তারা শুধু শান্তি দেখতে চান, প্রতিশ্রুতি নয়। এদিকে জাতিসংঘ বলেছে, আলেপ্পোতে রুশ সমর্থিত সরকারী বাহিনী নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। সংস্থাটি আরও বলেছে, সরকারী বাহিনী সেখানে অন্তত ৮২জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে এমন অকাট্য প্রমাণ তাদের কাছে আছে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্র হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছে, আলেপ্পোয় যে কোন নৃশংসতার জন্য দায়ী হবে সিরিয়া, তাদের মিত্র রাশিয়া ও ইরান। তবে এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে রাশিয়া। ২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরুর পর আলেপ্পো ছিল যুদ্ধে জর্জরিত। গত চার বছর দেশটির সবচেয়ে প্রাচীন এ শহর দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। পশ্চিম আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ ছিল প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের অনুগত সেনাবাহিনীর হাতে, আর পূর্ব আলেপ্পো ছিল বিদ্রোহীগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। এ সময় দুইপক্ষের যুদ্ধে হাজার হাজার সামরিক-বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। সবশেষ খবর অনুযায়ী, শেষ কয়েক ঘণ্টায় আলেপ্পোয় কোন বোমা হামলা বা যুদ্ধ হয়নি। পূর্ব আলেপ্পোর ছোট একটি এলাকায় কোণঠাসা অবস্থায় থেকে শেষ দিনগুলোতে যুদ্ধ চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। রাশিয়ার বিমান হামলার সহযোগিতায় সিরিয়ার সরকারী বাহিনী বিদ্রোহীদের অবস্থানগুলো পুনর্দখল করে। তবে সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বলেন, আলেপ্পোয় জয় মানে যুদ্ধ শেষ নয়। বিদ্রোহী সংগঠনগুলোর কর্মকর্তারা জানান, চুক্তির আওতায় বেসামরিক লোক ও যোদ্ধারা আলেপ্পো ছেড়ে নগরীর পশ্চিমাঞ্চলে যেতে পারবে। শীর্ষ বিদ্রোহী সংগঠন নুরেদ্দিন আল-জিনকির রাজনৈতিক অফিসের মুখপাত্র ইয়াসির আল-ইউসেফ বলেন, ‘উভয়পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, রাশিয়া ও তুরস্ক চুক্তিটির স্বীকৃতি দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বেসামরিক লোক ও আহতদের সরিয়ে নেয়া হবে। পরবর্তীতে যোদ্ধাদের হাল্কা অস্ত্রসহ শহর ত্যাগ করার অনুমতি দেয়া হবে।’ ওয়াশিংটন জানিয়েছে, তারা এই চুক্তির ব্যাপারে কোন পরামর্শ না দিয়ে আলেপ্পোর মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় এমন যে কোন উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে। আলেপ্পোয় বিদ্রোহীদের পরাজয়ে খুশি ইরান। বুধবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদ্রোহীদের পরাজয়ে তেহরান ফের নেত্বত্বের পর্যায়ে চলে এলো।
×