ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘আলফা- অন্ত্যজ শ্রেণীর গল্প’

প্রকাশিত: ০৩:৫৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

‘আলফা- অন্ত্যজ শ্রেণীর গল্প’

আনন্দকণ্ঠ : প্রথমেই আপনার চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করব। আপনি দুটো মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা তৈরি করেছেন, ‘একাত্তরের ‘যিশু’ এবং ‘গেরিলা’। কিন্তু সাম্প্রতিক সিনেমা ‘আলফা’ একদম ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তৈরি। আলফার মতো চরিত্রটি আপনি কেন বেছে নিলেন? নাসিরুদ্দিন ইউসুফ : দেশ ও জাতির প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যে বিস্তৃত পরিসরে সিনেমা দাঁড় করানোর প্রয়োজন ছিল সেটা সম্ভবত এখনও পর্যন্ত হয়নি। তবে গেরিলার মধ্য দিয়ে কিছুটা হলেও তা দাঁড়িয়েছে। বাঙালীর সার্বিক মুক্তির জন্য ছিল যে লড়াই সে লড়াইয়ে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল। তার একটা চিত্র ‘গেরিলায়’ পাওয়া যায়। সামগ্রিক চিত্র পাওয়া তো আর সম্ভব নয়। তবুও বেদনার জায়গাটা, ট্র্যাজেডির অংশটা, বিজয়ের পরিবেশ , বিশ্বাসের স্থানটা। এগুলো সম্ভবত গেরিলায় আছে এবং সিনেমা হিসেবে তা বেশ জনপ্রিয়ও হয়েছে। এ ছাড়া গ্রাম ও শহরের জনগোষ্ঠীর মুক্তিযুদ্ধের অংশগ্রহণের বিষয়টিও এ সিনেমায় পাওয়া যায়। অন্যদিকে ‘একাত্তরের যিশু’ সিনেমায় আমার লক্ষ্য ছিল, দুই হাজার বছর আগে যিশুর মানব মুক্তির লড়াইয়ে যে জীবনোৎসর্গ। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমি একাত্তরের যিশু সিনেমা তৈরি করার একটি চেষ্টা করেছি। বাংলার একটি অখ্যাত গ্রামের গির্জাকে কেন্দ্র করে এই গল্প। এই সিনেমায় ‘ডেসমন্ড’ চরিত্রটিই প্রধান ছিল। অন্য চরিত্রগুলো ছোট হলেও বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর চিত্রভাষ্য বলে আমি মনে করি। দুটো ছবিই দেশ ও বিদেশের মাটিতে সমাদৃত ও, পুরস্কৃত হয়েছে। তবুও আমি মনে করি, মুক্তিযুদ্ধের মতো সামগ্রিক বিষয় আরও বড় আকারে ও আয়োজনে ভাবতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেট বিশাল একটি অন্তরায়। মহাকাব্যিক ব্যঞ্জনা নিয়ে মহাকাব্যিক বাস্তবতা তুলে ধরা উচিত ছিল আমাদের। গেরিলায় সে পদক্ষেপটি আছে, তবে হয়ে ওঠেনি। এ ছাড়া বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন নিয়েও ভাল কোন সিনেমা তৈরি হয়নি। আনন্দকণ্ঠ : আপনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। একাত্তরে বহু বীর গেরিলা আপনার সহযোদ্ধা ও বন্ধু ছিলেন। রুমী, আজাদ, জুয়েলের মতো চরিত্র উপেক্ষা করে আপনি কেন ‘গেরিলায়’ একজন নারী চরিত্র বেছে নিলেন? তাও উপন্যাসের চরিত্র এটা কেন? নাসির উদ্দিন ইউসুফ : এটা উপন্যাসের চরিত্র হলেও তা একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে চিত্রায়িত। ১৯৭২ সালে ২নং সেক্টরের কমান্ডার খালেদ মোশারফ সৈয়দ সামসুল হক ভাইকে গাজী সাহাবুদ্দিনের সচিত্র সন্ধানীর অফিসে বিলকিস নামে চরিত্রটি সম্পর্কে বলেছিলেন। পরে সৈয়দ সামসুল হক এই চরিত্রটি তার উপন্যাসে চিত্রিত করেছিলেন। আমি সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করি মূল উপন্যাসে বর্ণিত চরিত্রটির কিছু অংশ বাদ দিয়ে, আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধের চরিত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। আমাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া নারী চরিত্রগুলোর সঙ্গে মিলিয়েই বিলকিস। অন্যদিকে তুমি প্রথমে যে প্রশ্নটি করেছ ‘আলফা’ চরিত্রটা আমি কিভাবে পেলাম বা কেন এ নিয়ে সিনেমা বানাতে গেলাম। আমরা যারা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, আমাদের বেশ কিছু স্বপ্ন ছিল। আমরা ভাবলাম দেশটা আবার একাত্তরের মতোই হবে, যেখানে মানুষের ধর্ম পরিচয় প্রাধান্য দেয়া হবে না। ধনী-গরিবের বৈষম্য থাকবে না। কিন্তু সেই চিত্র দেখতে পাইনি বলে আমি মে মাসের দিকে সেই আন্দোলন থেকে সরে এলাম। তারপর ভাবলাম একটা ছবি করি। এ ছাড়া মার্কেট ইকোনমির পাশাপাশি সোকল্ড গ্লোবালাইজেশনের সঙ্গে আমি এখনো একাত্ম হতে পারছি না। আমার চোখের সামনেই আমি সমাজ, ব্যক্তি, পরিবারগুলো ভেঙ্গে পড়তে দেখছি। এ রকম একটি সময়ে, যেখানে অনিয়ম-অত্যাচার ব্যাপ্তি লাভ করেছে, সে সময়ে আমার মনে হয়েছে আলফা নামের একটি চরিত্র তৈরি করি। আলফার কোন পরিচয় নেই। সে একা একজন মানুষ ও শিল্পী। ঢাকা শহরের একটি লেকে জলের ওপর তার বাস। সেখানে অন্ত্যজ শ্রেণীর সঙ্গে তার যে মেলামেশা, আদান-প্রদান, সবকিছু উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এ ছাড়া সাহিত্য কিংবা সিনেমায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যে পারিবারিক সংস্কৃতি, নীতিবোধ। তা একেবারেই অনুপস্থিত। এদের সম্পর্কে আমরা খুব বেশি কিছু জানি না। কমার্শিয়াল ছবিতে যে বস্তিবাসী দেখানো হয় তা কল্পনাপ্রসূত। এ কারণে আমার মনে হয়েছে অন্ত্যজ শ্রেণীর জীবনযাত্রাকে সিনেমায় তুলে ধরা উচিত। আনন্দকণ্ঠ : এই ছবিতে অন্ত্যজ শ্রেণীর জীবনযাত্রা ও কষ্ট কি উঠিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে? ইউসুফ : এসেছে এবং আলফার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। তবে এটি একটি মনস্তাত্ত্বি¡ক ছবি। নানা ঘটনায় তার মধ্যে মানসিক যে পরিবর্তন অর্থাৎ ছেলে থেকে মেয়ে হয়ে যাওয়ার বাসনা, তা প্রকাশিত হয়েছে। মাতৃত্ব লাভের যে আকাক্সক্ষা, তা উঠিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আনন্দকণ্ঠ : মাতৃত্ব লাভের ব্যাপারটা ছবিতে কেন প্রাধান্য পেল? ইউসুফ : ছবিতে দেখানো হয়েছে আলফা চরিত্রটা বহুদিন ধরে একটি তীরবিদ্ধ দুলদুল ছবি আঁকছে। আরেকটি ঘোড়ার ছবি এঁকেছে যে ঘোড়ায় নবী মুহম্মদ (সা:) শবে মেরাজের রাতে স্রষ্টার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। শবে মেরাজের রাতে নবী মুহম্মদ (সা:) যে ঘোড়ায় চড়েছেন ও তার যে ছবি পাওয়া যায় সে ঘোড়া লক্ষ্য করলে দেখবেন। তাতে ডানা দেয়া এবং তাতে কোন লিঙ্গও দেয়া হয়নি। শরীরটা পুরুষের মতো হলেও দেখতে নারীর মতো। গ্রাম-অঞ্চলে এ ধরনের অনেক ছবি পাওয়া যায়। এ ছবি আমাকে খুব ছোটকাল থেকেই টানত। আরেকটা হলো ‘হরগৌরি’ আখ্যান। ‘হর’ ও ‘গৌরী’ হলো শিব ও পার্বতী। তারা একবার ছদ্মবেশে প্রেমে মিলিত হয়। পরে তারা আর বিচ্ছিন্ন হতে পারেনি। তাদের যে মিলন হয়, তা আছে এখনও পর্যন্ত । গ্রীক পুরাণেও এমন ঘটনা পাওয়া যায়। হারমস ও আফ্রোদিতির মিলনের ফলে একটা সন্তান লাভ হয়, যা পুরুষ কিংবা নারী কোনটাই নয়। এদের ‘মেপো’ বলে। এ কারণে তৃতীয় লিঙ্গকে মেপো বলা হয়। আমাদের গল্পে এমন একজন চরিত্রকেও আমরা ‘আলফা’ সিনেমায় খুঁজে পাই। যে চারটি সন্তান লালন-পালন করে। সে কখনও মা হবে না, কিন্তু তার মধ্যে মাতৃত্বের সুপ্ত বাসনা রয়েছে। আলফার মধ্যে রূপান্তরের ঘটনা ঘটেছে। কারণ বিশ্বায়নের ফলে ব্যক্তি, সমাজ ও যে অনাচার, অন্যায়, বিপর্যয়, তা থেকেই ব্যক্তির মধ্যে যে পরিবর্তন, তাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আনন্দকণ্ঠ : প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর এ ব্যক্তিরা কি বিশ্বায়ন সম্পর্ক ধারণা রাখে। ইউসুফ : বোঝে, কারণ সে তো শিল্পী। সে রিক্সায় ছবি আঁকে এবং একজন শিল্পীর ঘরেই তার বেড়ে ওঠে। আমরা দেখিয়েছি তার বাড়ির নিচ দিয়ে শহরের সব আবর্জনা, পিৎজা, কোক, বার্গার সব ভেসে যায়। আমি আসলে তৃতীয় বিশ্বের পৃথিবীকে এখানে রূপক অর্থে উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। সেখানে একটা লাশ আসে, যা নিয়ে সবার মধ্যে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। সে লাশটিকে আসলে কে মারে, তা নিয়েও বস্তিবাসীর কানাঘুষা রয়েছে। অন্তজ শ্রেণীর লোক এ লাশটিকে বেওয়ারিশ ভাবতে নারাজ। তারা তাকে জলে ভাসিয়ে দেয়। যে জলে দিগন্তরেখা আছে । আনন্দকণ্ঠ : শিল্পাঙ্গনে সব ক’টি মাধ্যমের একটি সমষ্টিগত রূপ হলো চলচ্চিত্র। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ একটি সামগ্রিক বিষয়। আপনার কি মনে হয়Ñ না কেবল চলচ্চিত্রেই সম্ভব মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি সামগ্রিক প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলা। নাসির উদ্দিন ইউসুফ : খুব কঠিন ‘বার্থ অফ এ নেশন’ গ্রিফিথ যেভাবে তৈরি করেছেন। এটা কেউ ভাবতে পারেনি। তবে বিশাল ব্যাপার। বঙ্গবন্ধুর ওপর এখনও সিনেমা তৈরি হচ্ছে না। আমরা যে করতে পারব না তা নয়। কেউ না কেউ অবশ্যই করতে পারবে। দরকার পড়লে বিদেশীদের সাহায্য নেয়া হোক। মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বড় বাজেটের ছবি হোক। এমন অনেক উন্নয়ন প্রকল্প আছে যার আসলে কোন প্রয়োজনও নেই। অঢেল টাকা অপব্যয় করছি। যার আদৌ কোন দরকারও নেই। এসব প্রকল্পের টাকা দিয়ে হলেও মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সিনেমা হোক। আমার গেরিলা সিনেমা কিন্তু তরুণদের প্রবাহিত করেছে। ‘জয় বাংলা’ সেøাগানটি আমি সিনেমায় ব্যবহার করেছিলাম। তরুণরা তা লুফে নিয়েছিল। তারও বহু আগে অবশ্য আমি ১৯৯২ সালে ‘একাত্তরের যিশু’ সিনেমায় ‘জয় বাংলা’ ব্যবহার করেছিলাম। ১৯৭৫ সালের পর কোন নাটক, সিনেমায় প্রথম ‘জয় বাংলা’ সেøাগানটি ব্যবহৃত হয়। আনন্দকণ্ঠ : ‘একাত্তরের যিশু’ থেকে ‘গেরিলা’ এত দীর্ঘ ব্যবধান কেন? নাসির উদ্দিন ইউসুফ : আমি আসলে নাটক করি। নাটকে এক ধরনের এক্সসাইটমেন্ট কাজ করে। ব্যর্থতাটা দগদগে ঘায়ের মতো দেখা যায়। তখনই আবার কারেক্ট করি। নিশ্বাসের শব্দ শুনি। চোখের জল নামে, সেটা দেখি। এটা জীবন্ত। প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তিত হচ্ছে নাটক। সেই পরিবর্তনের সঙ্গে নির্দেশক, কলাকুশলী সবাইকে এডজাস্ট করতে হচ্ছে। এটা একটা চলমান কাজ। আনন্দকণ্ঠ : সেলিম আল দীনের পর আজকের দিনের মঞ্চ নাটকের যে সঙ্কট ও শূন্যতা, তা কি কোনভাবেই পূরণ করা সম্ভব? আবার ঠিক একই সময়ে আপনাদের মতো প্রভাবশালী নাট্যকর্র্মীরা যদি চলচ্চিত্রের দিকে ঝোঁকেন, তাহলে কি এই অঙ্গনে কিছুটা শূন্যতা তৈরি হবে না। নাসির উদ্দিন ইউসুফ : নাটক ও সিনেমার মাঝে কোন দ্বন্দ্ব নেই। পৃথিবীর বহু ফিল্মমেকার মঞ্চনাটক থেকে আসা। বার্গম্যান কিংবা ঋত্বিক ঘটকের কথাই বলা যায়। বার্গম্যান অবশ্য পরবর্তীতে নাটকেই ফিরে গেছেন। নাটক আসলে কুলীন আর্ট ফোরাম। এর সঙ্গে সিনেমার কোন দন্দ্ব নেই। বাংলা নাটকে সেলিমের চলে যাওয়া এক ধরনের শূন্যতা অবশ্য তৈরি করেছে। আমি এখন আর কারও লেখা পড়ে মুগ্ধ হই না, প্রণোদনা পাই না। সেই চ্যালেঞ্জও খুঁজে পাই না। সেলিমের লেখা দেখে আমি বিস্মিত হতাম। রবীন্দ্রনাথের পর এত চমৎকার রচনাশৈলীর এত চমৎকারভাবে বাংলার মানুষকে তুলে ধরা। একটা এপিক ব্যাপার আছে সেলিমের কাজে। এত চমৎকার প্রেক্ষাপট সেলিমের নাটকে। মাত্র ২৭ বছর বয়সে সেলিম ‘শকুন্তলা’ নাটক লিখেছে। সে যখন ‘প্রাচ্য’ লিখে হাতে দিয়ে বলল, নাটক কর। তখন খুব চ্যালেঞ্জ অনুভব করলাম। কারণ নাটকে ভেড়ার লড়াই, মোরগের লড়াই কিংবা কাছিম শিকার। এসব কিভাবে নাটকে তুলে ধরব। এই যে আমি আটকে গেলাম। প্রায় অসম্ভব ছিল। পরে গাজীর গানের মতো আমি গান গেয়ে চিত্রটা তুলে ধরেছি। আমার নাটক দেখে অনেকেই বিস্মিত হলো। কিভাবে করলাম আমি? এমনকি আমি নিজেও জানি না আমি করব! পরে নিজেই আবিষ্কার করলাম। এ ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। ১৯৮১ সাল থেকে আমার গ্রাম থিয়েটার চলছে। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে আমি গ্রাম থিয়েটার দেখেছি। তাদের সঙ্গে নাটক নিয়ে কথা বলেছি। সিলেট, রংপুর, বগুড়া গিয়ে বাঙালীর আদি কিছু রীতিনীতি সম্পর্কে জেনিছে বুঝেছি। এসব শিখতে ও জানতে আমার বহু সময় ব্যয় হয়েছে। আমার সঙ্গে সেলিমের একটা টিমওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল। সেলিমের কাজ নামাতে গিয়ে আমাদের এক বছরের মতো সময় দিতে হয়েছে। রিহার্সেল করতে হয়েছে। আমি আসলে বুঝতাম না। সেলিমের যে গ্রামের অভিজ্ঞতা, আমার সে অভিজ্ঞতা নেই। এখনও অনেক কিছু জানি না, বুঝি না। আমার আসলে শহরে বেড়ে ওঠা, একটা সীমাবদ্ব জীবনে আমাদের বসবাস। পাখি, বৃক্ষ, ঘাসফুলÑ এ সবকিছুর সঙ্গে আমাদের পরিচয় হয় না। আনন্দকণ্ঠ : এবার আবারও ফিল্ম প্রসঙ্গে আসা যাক। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে চিত্রনাট্যের যে সঙ্কট এ বিষয়টা আপনি কিভাবে দেখেন। নাসির উদ্দিন ইউসুফ : এখানে পেশাদারিত্বের খুব অভাব। চিত্রনাট্য কিভাবে থাকবে, যারা এসব নিয়ে পড়াশোনা কিংবা কাজ করছে, তাদের কি আমরা অবাধ স্বাধীনতা দিচ্ছি। আনন্দকণ্ঠ : আমরা জানি, বিজয়ের এ মাসেই আন্তর্জাতিক স্বল্প ও মুক্ত দৈর্ঘ্যরে চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজিত হয়েছে। কেমন হলো এবারের আয়োজন। নাসির উদ্দিন ইউসুফ : এ উৎসবটা পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আয়োজন হোক। এবার ২ হাজার ৫৬৭ ছবি এসেছে। তার মধ্যে আমরা ৫৪০টি ছবি বাছাই করেছি এবং তা ছয়টি স্থানে দেখানোর ব্যবস্থা করেছি। আমরা এবার দেখলাম, পৃথিবীর অন্যতম সেরা ছবিগুলোই এবার প্রতিযোগীতাই অংশ নিয়েছে। ‘কান, বার্লিন, অস্কারের মতো উৎসবের চলচ্চিত্র এসেছে এবারের আয়োজনে। হলি আর্টিজানের পর ১০৯টা দেশ আমাদের এখানে সিনেমা পাঠিয়েছে। এটা একটা বিশাল ব্যাপার। বেশ কিছু বিদেশেী অতিথিও এসেছেন। আমরা চাই বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের কাজ শুরু হোক, দূর হোক সব সীমাবদ্ধতা ।
×