সাজু আহমেদ ॥ বাংলাদেশে মঞ্চনাটকের ক্ষেত্রে ইতিহাস সৃষ্টি করলেন নিবেদিত মঞ্চকর্মী রফিক নটবর। প্রথমবারের মতো তিনি পূর্ণাঙ্গ মঞ্চনাটকে একক অভিনয় করলেন। এর আগে পূর্ণাঙ্গ মঞ্চনাটকে মেয়েদেরই একক অভিনয়ের ক্ষেত্রে দেখা গেছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার মিলনায়তনে বুধবার সন্ধ্যায় তার অভিনীত প্রথম একক অভিনয় ‘আমি রফিক বলছি’ নাটকের প্রথম মঞ্চায়ন হয়। এর মাধ্যমে ঢাকা প্রসেনিয়াম থিয়েটার নামে একটি নাট্যদলেরও সূচনা হলো। আজ একই সময়ে ‘আমি রফিক বলছি’ নাটকের দ্বিতীয় মঞ্চায়ন হবে বলে জানা গেছে। ওপার বাংলার নাট্যকার মানিক রায় চৌধুরী রচিত ‘আমি রফিক বলছি’ নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন গাজী ফারুক। নাটকটির প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে অভিনেতা রফিক নটবর বলেন- প্রযোজনাটি একাত্তরে আমাদের মুক্তির স্বপ্ন এবং বর্তমান বাস্তবতার আখ্যান। নাটকে আমি একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করছি। নাটকে দেখা যায় একজন মুক্তি যোদ্ধা যিনি কবরে গিয়েও শান্তি পান না। এক সময় তিনি কবর থেকে উঠে এসে জীবিত মানুষদের কাছে আর্তি জানান যে, স্বপ্ন নিয়ে তারা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তার বাস্তবায়ন ৪৫ বছরেও হয়নি। এজন্য তিনি দেশের সকল মানুষকে দেশের সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
রফিক নটবর একজন পুরোদস্তুর থিয়েটার কর্মী। নিজেকে মনে করেন মঞ্চদাস। অভিনয়ে হাতেখড়ি কাপাসিয়ায় অধ্যাপক রবীন্দ্র কুমার বকসীর কাছে। তারপর ঢাকায় এসে যোগ দেন পালাকার থিয়েটারে। অভিনয়ের গুরু পালাকারের অধিকারী আমিনুর রহমান মুকুল। অবিচ্ছিন্নভাবে ১০ বছর কাটিয়েছেন পালাকারে। অভিনয় করেছেন পালাকার প্রযোজনা ‘বাসন’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘কালবেলা’সহ বিভিন্ন নাটকে। এছাড়া চারুনীড়ম স্কুল অব এ্যাক্টিং থেকে অভিনয়ের নানা বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন অভিনেতা-শিক্ষক গাজী রাকায়েতের কাছে। দীর্ঘদিন সান্নিধ্য লাভ করেছেন চারুনীড়ম স্কুল অব এ্যাক্টিংয়ের প্রিয় শিক্ষক আবুল হায়াত, নাহিদ আহমেদ পিয়ালের। চারুনীড়মের হয়ে অভিনয় করেছেন- ‘অবাক দেশ এবং বুড়ো’, ‘শেষ নবাব’ নাটকে। এছাড়া দৃষ্টিপাতের ‘রাজা হিমাদ্রী’ নাটকেও অভিনয় করেছেন তিনি। ঢাকার উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিয়মিতভাবে অভিনয় চালিয়ে যাচ্ছেন রফিক। মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি বেশকিছু টিভি নাটকেও কাজ করেছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে হিমেল আশরাফের ‘সাপলুডু (চ্যানেল আই), ‘প্রেমের নাম বেদনা’ (বৈশাখী টেলিভিশন), সৈয়দ জামীমের ধারাবাহিক ‘একদিন প্রতিদিন’, ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’ (এশিয়ান টিভি), মনতাজুর রহমান আকবরের ‘পাখাল’ (মোহনা টেলিভিশন), ‘গোল্ডেন স্বর্ণা’ (চ্যানেল আই), ‘ব্রেসলেট’ (এসএটিভি), ধারাবাহিক ‘পাখি এবং মানুষেরা’ (আর টিভি) অন্যতম। প্রচারের অপেক্ষায় রয়েছে বিটিভিতে মমতাজুর রহমান আকবরের ধারাবাহিক ‘কাজী সাহেবের তিন পুত্র’, বৈশাখী টিভিতে মুনির আহমেদের ধারাবাহিক ‘বিপদ ডটকম’। তবে ভবিষ্যতে আরও ভাল ভাল অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনেতা হিসেবে নিজের অবস্থানকে সুসংহত করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তার জন্য শুভ কামনা।