ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

৩ থেকে ৬ মাস পিছিয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজের বাস্তবায়ন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজে ধীরগতি

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ কাজে ধীরগতি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারের সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া ‘দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হতে মিয়ানমারের নিকটে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ প্রকল্পে বিরাজ করছে ধীর গতি। লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনও ৩ থেকে ৬ মাস পিছিয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজের বাস্তবায়ন। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এ চিত্র। গত ১৭ অক্টোবর প্রকল্পটি পরিদর্শন করেছে সংস্থাটির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। ফিরে এসে সম্প্রতি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তিনি। এ অবস্থায় প্রকল্পটি নির্ধারিত সময় বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা করার সুপারিশ করেছে আইএমইডি। সেই সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়েকে তদারকি কার্যক্রম জোরদার করার তাগিদ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইএমইডির দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সংশোধিত ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) উল্লেখিত ক্রয় পরিকল্পনা হতে পিছিয়ে পড়া সময় সমন্বয়ের মাধ্যমে পুষিয়ে নেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। শুধু তাই নয়, সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তা এক মাসের মধ্যে আইএমইডিকে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৪ হাজার ৯১৯ কোটি ৬ লাখ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তা থেকে ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। ২০১০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়নের কথা। আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অক্টোবর মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৬৮৬ কোটি ৪০ লাখ ৩২ হাজার টাকা। যা মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কয়েকটি প্যাকেজের ভিত্তিতে। এসব প্যাকেজের বাস্তবায়ন অগ্রগতি হচ্ছে- কাজ-১ : এক্ষেত্রে দোহাজারী হতে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে এ অংশ নির্মাণ শেষ করার জন্য দুটি লট এ বিভক্ত করা হয়। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। দরপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল ২৮ নবেম্বর। অথচ পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব কার্যক্রম গত ১ এপ্রিলের মধ্যেই শেষ করার কথা ছিল। সে হিসেবে ক্রয় পরিকল্পনা অনুযায়ী এখনও প্রায় ৬ মাস পিছিয়ে রয়েছে। কাজ-২: এ অংশে কনস্ট্রাকশন সুপারিভশন কন্সালটেন্সি সার্ভিস কাজের জন্য গত ১৫ জুলাই ইওআই আহ্বান করা হয়। এতে ১৯টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এসব কাজ এখনও সাড়ে ৩ মাস পিছিয়ে রয়েছে। কাজ-৩: এক্ষেত্রে ম্যানেজমেন্ট কন্সালটেন্সি সার্ভিস কাজের জন্য গত ৬ সেপ্টেম্বর ইওআই আহ্বান করা হয়েছে। আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের ইওআই দাখিলের শেষ সময়সীমা ছিল গত ১০ অক্টোবর। পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময় থেকে সাড়ে ৬ মাস পিছিয়ে রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ : এক্ষেত্রে সর্বমোট ১ হাজার ৩৫৫ দশমিক শূন্য ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৩১৮ একর এবং কক্সবাজার জেলায় ১০৩৬ দশমিক ৫৭ একর জমি অধিগ্রহণের কথা। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৮৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এখন পর্যন্ত এ খাতে ব্যয় হয়েছে মাত্র ১ হাজার ৬৮৫ কোটি ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা। সময়ভিত্তিক কর্ম পরিকল্পনা : এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক আইএমইডিকে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য এখনও সময়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হয়নি। তবে এটি প্রণয়নের কাজ চলছে। সূত্র জানায়, প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হচ্ছে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে করিডরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন। পর্যটন শহর কক্সবাজারকে রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় নিয়ে আসা। পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন করা এবং সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, রাবারের কাঁচামাল এবং বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন সহজ হবে।
×