ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চার মাসে এলসি নিষ্পত্তি ৮৩ শতাংশ;###;বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশেরও বেশি

সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি

রহিম শেখ ॥ চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে (জুলাই-অক্টোবর) মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বেড়েছে সাড়ে ২২ শতাংশ; এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে সাড়ে ২৬ শতাংশ ও ৮৩ শতাংশ। এ সময় শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা এবং নিষ্পত্তিও বেড়েছে। বেসরকারী খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ শতাংশেরও বেশি । ইতিবাচক ধারায় রয়েছে শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণও। ফলে নতুন বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদোক্তা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ, বিদ্যুত পরিস্থিতির উন্নতি ও ব্যাংক ঋণের সুদহার কমে আসায় উদোক্তারা মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে নতুন বিনিয়োগের পালে হাওয়া লেগেছে; যা বেসরকারী খাতে সার্বিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি চলতি অর্থবছরেও ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর এই ৪ মাসে ১১৯ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে; যা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। গেল অর্থবছরের একই সময়ে এ পণ্যটির আমদানি হয়েছিল ৯৭ কোটি ৫৫ লাখ ডলার বা ৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকার। ফলে পণ্যটির আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির এলসি খোলা হয়েছে ১৫১ কোটি ৮৮ লাখ ডলারের; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের একই সময়ে পণ্যটির এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ১২০ কোটি ১৩ লাখ ডলার। অন্যদিকে, এ সময়ে এই পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে রেকর্ড ২০৯ কোটি ৫৬ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের একই সময়ে পণ্যটির এলসি নিষ্পত্তি হয়েছিল ১১৪ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা ও নিষ্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে দশমিক ৯৬ শতাংশ ও ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ সময়ে শিল্পের কাঁচামালের এলসি খোলা হয়েছে ৫২৩ কোটি ২৮ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫১৮ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। অন্যদিকে, এ সময়ে শিল্পের কাঁচামালের এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৫৩২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৯২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানি বাড়লে তা নতুন বিনিয়োগ বৃদ্ধির ইঙ্গিত বহন করে। আর বেসরকারী খাতে ঋণের যোগান বাড়লে বুঝতে হবে সার্বিক বিনিয়োগ বাড়ছে। তবে দেশে সার্বিক বিনিয়োগ খুব যে চাঙ্গা হয়েছে, এমনটি মনে হয় না। এজন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা, তা গভীরভাবে খতিয়ে দেখা উচিত। সাধারণত দেশে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের জন্য মেয়াদি ঋণের চাহিদা করেন উদোক্তারা। আর মেয়াদি শিল্প ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বৃদ্ধিকে মূল নিয়ামক হিসেবে গণ্য করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, ধীরে ধীরে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি হচ্ছে। ফলে বেসরকারী খাতে ঋণের চাহিদা আগের চেয়ে বেড়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, দেশে পুরনো বিনিয়োগের পাশাপাশি নতুন বিনিয়োগও হচ্ছে। মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বৃদ্ধি সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে। তবে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি যে হারে বাড়ছে নতুন বিনিয়োগ সেভাবে হচ্ছে না। এজন্য সন্দেহ আছে যে মূলধনী যন্ত্রপাতির নাম দিয়ে অন্য পণ্য আমদানি হচ্ছে কিনা। এটা কাস্টমসই বলতে পারবে। কারণ, এটা চেক করার দায়িত্ব তাদের। মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির আড়ালে অর্থ পাচার হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওভার ইনভয়েসিং (আমদানির ক্ষেত্রে বেশি মূল্য দেখানো) ও আন্ডার ইনভয়েসিং (রফতানির ক্ষেত্রে মূল্য কম দেখানো) অনেক দেশেই হয়ে থাকে। কাজেই আমাদের দেশের আমদানিকারক ও রফতানিকারকের ক্ষেত্রে কিছু অংশ যে হয় না, তা নয়। তবে সার্বিকভাবে আমদানি না বাড়লে রফতানি বাড়বে কী করে। রফতানি বৃদ্ধির জন্য আমদানি বাড়ারও দরকার আছে। জানা গেছে, দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরে আসায় বেসরকারী খাতের ঋণ প্রবাহেও গতি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবর শেষে বেসরকারী খাতে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৫ হাজার ৮০ কোটি টাকা; যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে গেল বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এ খাতে ঋণ বেড়েছিল ১৩ দশমিক ২২ শতাংশ। এছাড়া গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে এ খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। এ সময়ে শিল্প স্থাপনের মেয়াদি ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধিও ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এই ৩ মাসে শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪৪ কোটি টাকা; যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের একই সময়ে শিল্পের মেয়াদি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ১ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। এদিকে, চলতি বছরের অক্টোবর মাস শেষে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কের ঘরে নেমে এসেছে। এ সময়ে ব্যাংক ঋণের গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের মাস সেপ্টেম্বরে যা ছিল ১০ দশমিক ১৫ শতাংশ। এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ব্যাংক ঋণের সুদহার ১১ শতাংশের ওপরে ছিল।
×