ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘনের জবাবে এ পদক্ষেপ

পরমাণু জাহাজ তৈরিতে ইরান

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

পরমাণু জাহাজ তৈরিতে ইরান

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি পরমাণু শক্তিচালিত জাহাজ তৈরি শুরু করতে মঙ্গলবার তার দেশের বিজ্ঞানীদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্ব শক্তিগুলোর সঙ্গে তার দেশের ২০১৫ সালের স্বাক্ষরিত এক চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র লঙ্ঘন করার জবাবে তিনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান। খবর ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও ইয়াহু নিউজের। পরমাণু বিশেষজ্ঞরা বলেন, রুহানির পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে বলে সম্ভবত ওই পরমাণু চুক্তিতে নির্দেশিত সর্বোচ্চ মাত্রার উর্ধে ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে হবে। ইরান কোন পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারে এ আশঙ্কা দূর করতে চুক্তিটি করা হয়েছিল। গত মাসে মার্কিন কংগ্রেস তেহরানের ওপর কোন কোন নিষেধাজ্ঞা সম্প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর রুহানির ওই ঘোষণাই প্রথম বাস্তব প্রতিক্রিয়া। এ সিদ্ধান্ত চুক্তির আওতায় তুলে নেয়া অন্যান্য নিষেধাজ্ঞা পুনরায় আরোপ করা সহজতর করে তুলবে। হোয়াইট হাউস বলেছে, ওই ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য পাঁচটি শক্তির সঙ্গে গত বছর স্বাক্ষরিত ইরানের পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘিত হয়নি। কিন্তু রুহানির নির্দেশ ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন বিরোধ যোগ করেছে, যা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর আরও অবনতির দিকে যাবে বলেও মনে হয়। হোয়াইট হাউস জানায়, তারা ইরানের নির্দেশ সম্পর্কে অবহিত এবং নৌযান সম্পর্কে এরূপ যে কোন কাজে ইরানের প্রতিশ্রুতির কাটামোর ভেতরই করা হবে বলে রুহানি উল্লেখ করেছেন। মুখপাত্র জোশ আর্স্টে নিউস ব্রিফিংয়ে জানান, ইরানীদের আজকের ঘোষণা ইরানকে কোন পরমাণু অস্ত্রের অধিকারী হওয়া থেকে বিরত রাখার আন্তর্জাতিক চুক্তির পরিপন্থী নয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র জন কারাবি বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা ইরান চুক্তিটি মেনে চলছে কি না তা বিশ্লেষণ করতে সমর্থ হবে। এ সংস্থাটি ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে থাকে। মঙ্গলবার এক নিউজ ব্রিফিংয়ে রুহানির ঘোষণা প্রসঙ্গে কারাবি বলেন, সেই বিষয়ে অনেক কিছুই, এর অর্থ কি, তা আমরা জানি না। জাহাজ চালনার জন্য পরমাণু চুক্তি চালিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা যে কোন দেশের জন্য এক বিরাট উদ্যোগ এবং এটি বাস্তবায়ন করতে কয়েক দশক লাগতে পারে। রুহানি ওই প্রযুক্তিটিকে নৌযান চলাচলে ব্যবহার্য এক পরমাণু চালক যন্ত্র বলে বর্ণনা করেন। কিন্তু সেটি কি কেবল জাহাজকেই বুঝিয়ে ছিল, না সম্ভবত সাবমেরিনকেও বুঝিয়েছিল, তা তিনি জানাননি। ইরান ২০১২ সালেই বলেছিল যে, সে তার প্রথম পরমাণু শক্তি চালিত সাবমেরিন তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে। ইরানী প্রেসিডেন্টের ঘোষণা ওয়াশিংটনের সঙ্গে উত্তেজনার মাত্রা ছড়িয়ে দিতে পারে। নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরমাণু চুক্তিটি বাতিল করে দেয়ার সঙ্কল্প ব্যক্ত করলে দুই দেশের উত্তেজনা এরই মধ্যে বেড়ে যায়। এ চুক্তির আওতায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই পাওয়ার বিনিময়ে ইরান এর পরমাণু জ্বালানি উৎপাদন কর্মসূচী সীমিত করে। রুহানি ইরানের শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচীর উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পরমাণু ও শক্তিচালিত নৌযানের জন্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা তৈরিরও নির্দেশ দেন। কিন্তু পরমাণু চুক্তির আওতায় ইরানের জন্য শতকরা ৩ দশমিক ৬৭ ভাগ বিশুদ্ধতার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা ১৫ বছরের জন্য অনুমোদিত নয়। এ মাত্রায় বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম এরূপ নৌযান চালানোর পক্ষে যথেষ্ট হওয়ায় সম্ভাবনা নেই। অনেক পরমাণু শক্তিচালিত নৌযানে শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি বিশুদ্ধতায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু ফ্রান্সসহ পৃথিবীর কোন দেশের নৌবাহিনীতে শতকরা ১০ ভাগেরও কম বিশুদ্ধতায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ব্যবহার করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার এক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মার্চ মাসে প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ কথা বলা হয়। রুহানি রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইরনায় প্রকাশিত এক চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু চুক্তির অধীন এর প্রতিশ্রুতি পুরোপুরি পালন না করার দায়ে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ইরান নিষেধাজ্ঞা আইনের মেয়াদ সম্প্রসারিত করতে মার্কিন কংগ্রেসের সাম্প্রতিক আইনের পরিপ্রেক্ষিতে আমি নৌযান চলাচলে ব্যবহারের জন্য এক পরমাণু চালক যন্ত্রের নক্সা ও নির্মাণের পরিকল্পনা করতে ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থাকে নির্দেশ দিচ্ছি। এর আগে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যরা বলেন, বিলের মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘিত হয়নি। আইনটিতে কেবল তাহলেই ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আবার আরোপ করার ক্ষমতা ওয়াশিংটনকে দেয়া হয়েছে, যদি ইরান চুক্তিটি লঙ্ঘন করে।
×