ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মোহাম্মদ মাসুদ

গায়ে মাখি স্বাধীন-সূর্যকিরণ

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

গায়ে মাখি স্বাধীন-সূর্যকিরণ

’৫২-এর ভাষা আন্দোলনের ভেতর দিয়েই বাঙালী তার রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে পশ্চিম পাকিস্তানের (বর্তমান পাকিস্তান) বিরুদ্ধে প্রথম জেগে ওঠে। নিজ স্বাধীনতা অর্জনে প্রতিবাদী সুর একত্রে ধ্বনিত করে। তবে পাকিস্তানী-শক্তি বাঙালীদের প্রাপ্য অধিকার ও অর্জিত ক্ষমতা থেকে দীর্ঘকাল ধরে বঞ্চিত করছিল। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বাঙালী জয়লাভ করার পরও ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে বাঙালীকে পরাধীনতার বেড়ি পরিয়ে বাংলা ভূখণ্ডে একচেটিয়া আধিপত্য করতে চেয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন-পাগল বাঙালী ১৯৬২ সালে শিক্ষা-আন্দোলন ও ১৯৬৬ সালে ৬ দফা নিয়ে গর্জে ওঠে। ’৬৯-এর বাঙালী আরও দৃঢ় হয়ে রাজপথে নামে। গণ-আন্দোলনে মুখে আইয়ুব খানের পতন হয়, আসে ইয়াহিয়া খান। এ আন্দোলনে অনেক বাঙালী শহীদ হয়েছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও জয়লাভ করা সত্ত্বেও ইয়াহিয়া খান ক্ষমতা দেয়নি বাঙালীকে। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক এক ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডাক দেন- স্বাধীনতার। তাঁর তাৎপর্যময় ভাষণই স্বাধীনতার হীরকখণ্ডের আলোয় আলোকিত হয়েছে বাঙালী। প্রতিটি বাঙালী পেয়েছে আত্মমর্যাদার স্বীকৃতি। মৃত্যুকে পায়ে ঠেলে দিয়ে পাকিস্তানী জান্তাদের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার জন্য এদেশের সব শ্রেণিপেশার মানুষ সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছে। বাংলার প্রতিটি প্রান্ত গর্জে উঠেছে তার অস্তিত্ব রক্ষায়, সবকিছুই ছিল উপেক্ষিত। একমাত্র স্বাধীনতার বিজয় ছাড়া। রক্ত-কান্না-লাশ-সম্ভ্রমক্ষয়ী ৯ মাস যুদ্ধে বাঙালী অর্জন করে- স্বাধীন-সূর্য। এভাবেই ’৫২ থেকে ’৭১ পর্যন্ত নানা আন্দোলনের ভেতর দিয়ে ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ উদিত হয়। সন্তানহারা মা, ভাইহারা বোন, বাবাহারা সন্তানসহ স্বজনহারা প্রতিটি বেদানার্থ মুখও সেদিন জীবনের সেরা হাসিতে মেতেছিল। গায়ে মেখেছিল স্বাধীন-সূর্য আলো। আজ বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযুদ্ধ যেমন তাৎপর্যমণ্ডিত তেমনি অনুপ্রেরণার দীপ্ত-আলো হয়ে প্রজ্বলিত হয়ে আছে তরুণপ্রজন্মের নিকট। সাউথইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে
×