‘স্বাধীনতাকামী সংগ্রামীদের দেহ থেকে যখন রক্ত ঝরতে শুরু করবে একমাত্র তখনই আমরা স্বাধীনতা অর্জনে সক্ষম’- মহাজ্ঞানীদের এমন যথার্থ উক্তি অস্বীকার বা অগ্রহণ অসাধ্য। সত্যিই তাই! বাঁধাহীন মুক্ত-স্বচ্ছন্দজীবন উপভোগ করার অধিকার নিহিত স্বাধীনতায়। মানুষ চাইলেই বিজয়ী হতে পারে না। এর জন্য কঠোর সংগ্রাম, সাধনা আর আত্মত্যাগী মনোভাব যে কতখানি প্রয়োজন তার অগ্নিসাক্ষী হয়ে আজও জ্বল জ্বল করছে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর।
আসলেই তাই, আমাদের এ বিজয় মোটেও একদিনে আসেনি। লাখো বীর সেনার অতুলনীয় প্রতিদান এখানে ডানা বেঁধে আছে। যার প্রত্যক্ষদর্শী না হয়েও ঘটনাখানি কতটা নির্মম ভাবতেই শরীরের শিহরণ যেন অনিবার্য।
সত্যিই বিজয় কথাটির মর্মার্থ কেবলই বিজয়। যা প্রমাণ করে দিয়েছিল বাঙালী মাথা নোয়াবার জাতি নয়, তাদের আত্মত্যাগী সংগ্রামী মনোভাব নির্বিশেষে সবার যুদ্ধে অংশগ্রহণ যেন বলার অপক্ষো রাখেনি।
‘হিন্দু না মুসলমান? এই জিজ্ঞাসে কোন্জন? কা-ারি তব ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।’
কে হিন্দু কে মুসলিম কে আমির কে ফকির এ যেন কেবল শিকেতেই উঠানো থাকল। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবারই যেন একই নিষ্ঠা স্বাধীন বাংলা অর্থাৎ বিজয়। বাংলার বীর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সমগ্র জাতি যেন এক কাতারে এসে দাঁড়াল। ১৯৭১ সালের দিনগুলো একদিকে অতি নির্মম হলেও অন্যদিকে অতি সম্মানের অতি সৌহার্দ্যরে।
সত্যিই এ অতীত যেন আমাদের কেবল সাহসীই করে না, বারংবার আমাদের রন্ধ্রে শক্তি ফিরিয়ে দেয়।
সেদিন ঘোর অমানিশার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল বাংলার ৫৬ হাজার বর্গমাইলজুড়ে। কালো চিতার সে আঁধারঘেরা সময়ে চেতনার মশাল জ্বালিয়েছিল আত্মোৎসর্গকারী কতগুলো প্রাণ। আত্মোপ্রত্যয়ের জরাজীর্ণতা কেটে পা চালিয়েছিল সামনে এবং দীর্ঘ নয় মাসের পথ-পরিক্রমা শেষে ৩০ লাখ মানবপ্রাণ আর রক্ত দিয়ে গড়েছিল এক তুমুল ভাস্কর্য। যার নাম বিজয়ের স্বাধীনতা। এরপর হাঁটিহাঁটি পা-পা করে কেটে গেছে ৪৫টি বছর। আজ ৪৫তম বিজয়ের এদিনে চলে আসে কিছু হতাশা। স্বাধীনতা অর্জন থেকে রক্ষা করা আরও নাকি কঠিন। আজ তরুণরা কি পারে না, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিজয়ের চেতনায় চিত্রিত হতে?
সরকারি ব্রজলাল কলেজ, দৌলতপুর, খুলনা থেকে