ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রমজীবীর অধিকার

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

শ্রমজীবীর অধিকার

পরিবেশের ওপর নির্ভর করে মানুষের কর্মস্পৃহার গতিপথ। সুষ্ঠু পরিবেশ সব সময়ই সুষ্ঠু কাজের সহায়ক। সেই সঙ্গে কর্মীর অধিকার যদি হয় সুনিশ্চিত, তবে উন্নত ফল লাভ অসম্ভব নয়। কাজ করার ক্ষেত্র যদি হয় সমস্যাসঙ্কুুল, অনিরাপদ, সুরক্ষাহীন হয় অধিকার, অহরহ চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটে; তবে পরিবেশ, পরিস্থিতি ও অধিকার রক্ষার বিষয়গুলো ম্লান হয়ে পড়া শুধু নয়, বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে বাধ্য। বাংলাদেশে শ্রমজীবী মানুষের জন্য কর্মপরিবেশ ও অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রটি প্রসারিত বলা যাবে না। শ্রমিক অধিকার রক্ষায় আইনী বিধিবিধান থাকলেও তার ব্যবহার সীমিত। ক্ষেত্রবিশেষে কাঠামোও দুর্বল। এটা তো বাস্তব যে, শ্রম অধিকারের সুরক্ষাদান নিরাপদ কর্মপরিবেশ সৃষ্টির কাজটি কঠিন হলেও দুঃসাধ্য নয়। মালিকশ্রেণীর অনেক কূপম-ূক মানসিকতা থেকে শুরু করে আইনী সুরক্ষার অনুপস্থিতি, শ্রমিকদের অসচেতনতা, বিকল্প কর্মের অভাবসহ নানা সমস্যা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। অধিকার লঙ্ঘিত হলে আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ আছে। কারণ, আইনী কাঠামো দুর্বলভাবে যদিও হয় তবু তা আছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের আইনী সহায়তা প্রার্থনার সংস্কৃতিটি এখানে প্রায় অবর্তমান। এর পেছনেও কাজ করে মালিকশ্রেণীর হুমকি-ধমকি, পুলিশের হয়রানি কিংবা শেষ পর্যন্ত ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কার মতো নানা উপাদান। আশার কথা হচ্ছে, গণমাধ্যমের জোরালো ভূমিকায় শিক্ষার হার ও নারীর ক্ষমতায়নে ইতিবাচক পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে কর্মজীবি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। তারাও জানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ অর্থনীতিকেও বেগবান করে। এগিয়ে যায় দেশ। অবশ্য সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার দায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সব পক্ষের ওপর। তাই সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ নিশ্চিতের দায় যেমন সবার তেমনিভাবে প্রাপ্য অধিকার রক্ষার দায়ও সবার। সরকারের পাশাপাশি মালিকপক্ষের ভূমিকাও এখানে জরুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন, সুষ্ঠু কর্মপরিবেশ এবং শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করতে দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত। শিল্পপতিদের নিজ নিজ কারখানায় কর্মপরিবেশ উন্নয়ন, শ্রম অধিকার নিশ্চিত, পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত, অধিকসংখ্যক নারী ও প্রতিবন্ধী শ্রমিক নিয়োগসহ শ্রমিকদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি শিল্প মালিকদের শুধু ব্যবসা করার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে দক্ষ কর্মী তৈরিতে তাদের প্রশিক্ষণের দিকেও বিশেষ মনোযোগী হওয়া জরুরী। প্রধানমন্ত্রী এমনটাও বলেছেন, জনগণও চায় যে, একটি কারখানা শুধু পয়সা কামাই করবে, এমন চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে একটু উদ্যোগী হতে হবে। শ্রমিক বঞ্চনার ইতিহাস নতুন নয়। সব যুগে, সব সমাজে এটি ছিল। অক্লান্ত শ্রম দিয়েও জীবনের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ করতে পারে না। অনেক সময় তারা প্রাপ্ত অধিকার আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে বাধ্য হয়। বর্তমান সরকার শ্রমিক কল্যাণে বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। গ্রহণ করেছে বহুবিধ কর্মসূচী। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ শিল্পসম্পর্ক স্থাপনে শ্রম কল্যাণ ফাউন্ডেশন এবং শ্রমিকদের জন্য কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে; যা শোভন কর্মপরিবেশের সহায়ক। বেশিরভাগ পণ্য শিল্প মজুরি নিম্নমান, স্বল্পমূল্য ইত্যাদির ফাঁদে আটকে আছে। শেখ হাসিনা মনে করেন এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা জরুরী। দেশে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা জরুরী। শ্রম বাজারকে আরও প্রসারিত করা প্রয়োজন। সে জন্য দরকার শ্রমিকদের দক্ষতা বাড়ানোর পদক্ষেপ। কলকারখানায় নিরাপত্তাহীনতা অত্যন্ত ক্ষতিকর ও শ্রমবিরোধী। শিল্পের বিকাশে অবশ্যই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার রক্ষা জরুরী আজ।
×