ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জাদুঘরে একাত্তরের রণাঙ্গনের গল্প শোনালেন তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

জাদুঘরে একাত্তরের রণাঙ্গনের গল্প শোনালেন তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাক হানাদারদের প্রতিরোধে তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন একাত্তরের রণাঙ্গনে। মাতৃভূমির মর্যাদা রক্ষায় লড়াই করেছিলেন শত্রুর বিরুদ্ধে। স্বদেশকে স্বাধীন করতে সুসজ্জিত পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন আকাশপথ, স্থলপথ ও নৌপথে। এমন তিন বীর মুক্তিযোদ্ধা শোনালেন সেই যুদ্ধ দিনের অসীম সাহসিকতার কথা। গল্পচ্ছলে উঠে এলো সত্য মুক্তিযুদ্ধের সত্য ঘটনাগুলো। মিলনায়তন ভর্তি দর্শকও যেন তাঁদের বীরত্বগাথার কথা শুনে অনুভব করলেন একাত্তরের খরস্রোতা সেই সময়কে। সোমবার সকালে জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলা শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলেন বীর উত্তম ও বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত কমডোর এ ডব্লিউ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তৌফিকুর রহমান এবং অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম। তিন মুক্তিযোদ্ধার গল্প বলার এ আয়োজনে সভাপতিত্ব করেন বীর প্রতীক উপাধিপ্রাপ্ত আরেক মুক্তিযোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল কাজী সাজ্জাদ আলী জহির। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। একাত্তরে পাকিদের বিরুদ্ধে আকাশপথে লড়াইয়ের স্মৃতি মেলে ধরেন অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিন আহমেদ। বলেন, সেই সময় আমি ছিলাম পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সে। অনেক আগ থেকেই আমাদের মনে বৈষম্যগুলো দাগ কাটত। ৩৫০ জনের মধ্যে আমরা বাঙালী ছিলাম মাত্র ৩০ জন। এক সময় আমরা ইস্ট পাকিস্তান এ্যাসোসিয়েশন গঠন করি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকেই আমরা মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম। ২৫ মার্চ কাল রাতে যে বর্বরতা ও গণহত্যা ঘটেছিল- এটা হওয়ার কথা ছিল ১৮ মার্চ। পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পাঠাতে দেরি হচ্ছিল বলে সেটা ২৫ মার্চ রাতে হয়। পরবর্তীতে আমরা ভারত সরকারের কাছে প্রস্তাব করি আমাদের বিমান দেয়া হোক, তারা রাজি হলো। তিনটি বিমান নিয়ে একাত্তরের সেপ্টেম্বরে যাত্রা শুরু করে বিমান বাহিনী। আমরা ছিলাম ৯ জন পাইলট। তাদের মধ্যে আবার ৬ জন বেসামরিক। পরে আমরা সামরিক প্রশিক্ষণ নিলাম। নারায়ণগঞ্জে ৩ ডিসেম্বর আমরা আক্রমণ করলাম। ৫ তারিখের মধ্যে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীকে আমরা নিশ্চিহ্ন করে দিলাম। অথচ আমাদের অপারেশনে কোন যুদ্ধ বিমান ছিল না। মুক্তিযুদ্ধে এদেশের সর্বসাধারণের পরোক্ষ সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ ও ভারতের জনগণের সাহায্য না পেলে কিন্তু আমরা দেশ স্বাধীন করতে পারতাম না। আর মনে রাখতে হবে পাকিস্তানের সুসজ্জিত বাহিনী এদেশের কৃষক শ্রমিক, ছাত্র জনতার কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল তৌফিকুর রহমান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাস্তায় বেরিয়ে দেখি শুনশান নীরবতা। তখন আমার বয়স ১৫ বছর। জগন্নাথ হলে লাশের সারি দেখে আমি ঘুমাতে পারি না। পরের দিন রাতে আবার হত্যাযজ্ঞ চলে। আর যখন বুঝলাম পাক হানাদাররা আমাদের সঙ্গে যা খুশি তাই করতে পারে তখনই সিদ্ধান্ত নিলাম অস্ত্র হাতে নেব। চার বন্ধু মিলে বাড়িয়ে পালিয়ে চলে গেলাম মেলা ঘরে যাই। সেখানে যুদ্ধ করার প্রশিক্ষণ নেই। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহের দিকে ধামরাইয়ের পথে রওনা হই। আমাদের কমান্ডার ছিলেন রেজাইল করিম মানিক। গ্রুপটি মানিক গ্রুপ নামেই পরিচিত ছিল। যদিও বতর্মানে সবাই এই দলটিকে ঢাকা উত্তর গেরিলা দল হিসেবেই জানে। এই দলে আরও ছিলেন নির্মাতা নাসির উদ্দীন ইউসুফ এবং চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদসহ অনেকে। উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ঢাকা-আরিচা সড়কের ভায়াডুবি ব্রিজ অপারেশনে আমরা সফল হলেও অকুতোভয় মানিক ভাই প্রাণ হারান। পাকিস্তানীদের সঙ্গে আমাদের বিজয়ের একটি বড় কারণ আমি মনে করি আমাদের সাহস। পাকিস্তানী বাহিনীর এই যুদ্ধের কোন কারণ ছিল না বলে তাদের মনোবলও ছিল না। অবসরপ্রাপ্ত কমডোর এ ডব্লিউ চৌধুরী বলেন, আমি তখনও ফ্রান্সে। একজন সাব-মেরিনার হিসেবে সেখানে বসেই জাতির জনকের ভাষণ শুনেছি। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন ৮ জন। যে কোন উপায়েই হোকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলাম আমরা। নানা দেশ পাড়ি দিয়ে আমরা দেশে এসে নৌসেনাদের নিয়ে অপারেশন জ্যাকপট সফলভাবে করেছিলাম। সভাপতির বক্তব্যে লে. কর্নেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, পাকিস্তানীরা বলত ওরা মার্শাল জাতি আর আমরা নাকি ভীরু। আমরা ওদের দেখিয়ে দিয়েছি কারা ভীরু। নিয়াজী হারামজাদা জাতি বলে গালি দিয়েছিল। আমি বলতে চাই দেখো ওই জাতিই তোমাদের শিক্ষা দিয়েছে। তার বক্তব্যে ফুটে উঠে গণহত্যার ব্যথা ও নির্মমতা। শহিদুল আলমের আলোকচিত্রে মালয়েশিয়ার অভিবাসী জীবন ॥ আলোকচিত্রী শহিদুল আলমের আলোকচিত্রে উঠে এসেছে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত অভিবাসী জীবনের চিত্র। ‘দ্য বেস্ট ইয়ার্স অফ মাই লাইফ : বাংলাদেশী মাইগ্র্যান্টস ইন মালায়েশিয়া’ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে সেই সব ছবি দেখতে পেল দর্শনার্থীরা। সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল একদিনের এ প্রদর্শনী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের বিজয় উৎসব ॥ মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে চলছে সপ্তাহব্যাপী ‘মানবাধিকার দিবস থেকে বিজয় দিবস’ শীর্ষক বিজয় উৎসব। ‘মুক্তিযুদ্ধ : তারুণ্যের ভাবনা’ প্রতিপাদ্যে অনুষ্ঠিত উৎসবের তৃতীয় দিন ছিল সোমবার। এদিন সেগুন বাগিচার জাদুঘর কার্যালয়ের বৈকালিক আয়োজনের সূচনা হয় তরুণ প্রজন্মের ভাবনায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনায়। মুক্তিযুদ্ধ : তারুণ্যের ভাবনা শীর্ষক আলোচনায় অংশ নেয় ইউনিভার্সিটি অফ লিবারাল আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে বাংলা একাডেমির আয়োজন ॥ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বুধবার বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বাংলা একাডেমি। সকাল ৮টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থল, মিরপুরস্থ শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু হবে দিনের কর্মসূচী।
×