ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জিএফএমডি সম্মেলন শেষ

অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাসের সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যয় হ্রাসের সুপারিশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যয় কমানোর সুপারিশ করেছে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি)। অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ীদের একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে। সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জিএফএমডি শীর্ষ সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া অভিবাসন ক্ষেত্রে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরির বিষয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সকল দেশ একমত হয়েছে। তিন দিনব্যাপী নবম জিএমএফডি শীর্ষ সম্মেলন সোমবার শেষ হয়েছে। সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। এতে বক্তব্য রাখেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিষয়ক সিনিয়র এ্যাডভাইজর ফ্রাংকোয়িস ফৌনাট, জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মারকুস এডেরার, মরোক্কোর প্রবাসী ও অভিবাসী মন্ত্রণালয়ের সচিব এল হাবিব নাদির, ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ডেভরিম ওজতুর্ক, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক, জেনেভায় জাতিসংঘ মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এম শামীম আহসান প্রমুখ। সমাপনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় সরকার, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ীদের একযোগে কাজ করতে হবে। এই তিনপক্ষ একযোগে কাজ করলে অভিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব। তিনি বলেন, আপনাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ এই শীর্ষ সম্মেলন সফলভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। সে জন্য তিনি উপস্থিত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ প্রতিনিধি এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসনবিষয়ক সিনিয়র এ্যাডভাইজর ফ্রাংকোয়িস ফৌনাট বলেন, অভিবাসন সম্মেলনে এবার ব্যবসায়ী সমাজকে আমরা অন্তর্ভুক্ত করতে পেরেছি। এই সম্মেলনে বেশ কয়েকটি নতুন বিষয় আনা হয়েছে। যেটা খুবই ইতিবাচক ও মাইলফলক হয়ে থাকবে। বিশেষ করে কানেকটিভিটির সঙ্গে অভিবাসী উন্নয়নের বিষয়টি আমরা নিয়ে এসেছি। এছাড়া গ্লোবাল কম্প্যাক্ট গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে সকলে একযোগে কাজ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া সম্ভব হবে। অনুষ্ঠানে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মারকুস এডেরার ও মরোক্কোর প্রবাসী ও অভিবাসী মন্ত্রণালয়ের সচিব এল হাবিব নাদিরের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে জিএফএমডির চেয়ারম্যানশিপ হস্তান্তর করা হয়। আগামী বছর জিএফএমডি দশম শীর্ষ সম্মেলন জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হবে। জার্মানি ও মরক্কোর পক্ষ থেকে যৌথভাবে এই সম্মেলন সফলের জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে অভিবাসন ক্ষেত্রে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা তৈরির বিষয়ে সব দেশ একমত হয়েছে, বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। জিএফএমডির সম্মেলন শেষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, অভিবাসন ক্ষেত্রে বৈশ্বিক কোনও ব্যবস্থা নেই। এখন সব দশ একমত হয়েছে। অভিবাসন ক্ষেত্রে একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা দরকার। আমরা প্রথমে ধারণা করেছিলাম, এটা নিয়ে মতবিরোধ হবে, কিন্তু এখন সব দেশ একমত হয়েছে। ব্রেক্সিট বা ইউরোপে অভিবাসী বিতারণ করার সস্তা জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ তুলে শহীদুল হক বলেন, এই সবগুলো বিষয় অভিবাসীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অভিবাসনকে শুধুমাত্র শ্রমের চলাচল হিসেবে দেখলে হবে না এটাকে ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষিতে দেখতে হবে। অভিবাসনকে রাজনীতির হাতিয়ার বা নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখারও আহ্বান জানান সচিব। অভিবাসন খরচ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে শহীদুল হক বলেন, আমরা একটা গ্লোবাল কমপ্যাক্ট করার চেষ্টা করছি এবং সেখানে অভিবাসন খরচ বড় আকারে আসবে। এই কমপ্যাক্টকে বাংলাদেশ কীভাবে দেখছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা চাই এই বৈশ্বিক ব্যবস্থা সবার জন্য বাধ্যতামূলক হোক। এতে যদি সবাই একমত না হয়, তবে সব দেশ অংশীদারিত্ব নেবে অথবা এর কিছু অংশ বাধ্যতামূলক এবং কিছু অংশ অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে হবে। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নবম গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিএফএমডি) শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এতে ১৩০টি দেশের প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ৩০টিরও অধিক সংস্থা, আন্তর্জাতিক সংস্থা, গ্লোবাল সিভিল সোসাইটি এবং ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধিরা তিনদিনব্যাপী এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছেন। এর মধ্যে বিভিন্ন দেশের ৬০০ এর বেশি সরকারী কর্মকর্তা, ২৫০ জন সুশীল সমাজ প্রতিনিধি রয়েছেন। সম্মেলন শেষে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দশম সম্মেলনের চেয়ারম্যানশিপ জার্মানি ও মরক্কোর কাছে হস্তান্তর করা হয়। সোমবার এই সম্মেলন শেষ হয়। আগামী বছর দশম জিএমএফডি শীর্ষ সম্মেলন জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হবে।
×