ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতারক হাজী আলম গ্রেফতার

নিখোঁজ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাসে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

নিখোঁজ ব্যক্তিকে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাসে ৫০ লাখ টাকা আত্মসাত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে নিখোঁজ এক ব্যক্তির পরিবারের কাছ থেকে চারদফা ৫০ লাখ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক হাজী আলম নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। রবিবার গভীররাতে রাজধানীর শাহআলী থানাধীন দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব-৪। সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজারের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের কার্যালয়ে আয়োজিত র‌্যাব-৪ এর সিও খন্দকার লুৎফর কবির এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ১৪ জুলাই ২০১৬ তে বনানী রেল স্টেশনের কাছ থেকে নিখোঁজ হন ইয়াসিন মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ (৩৫)। পরে হাজী আলম ও তার সহকারীরা ইয়াসিনের মা ডাঃ সুরাইয়া পারভীনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার ছেলের খোঁজ দেয়ার কথা বলে ২ কোটি টাকা দাবি করে। সমঝোতার এক পর্যায়ে ৩০ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্তু নিখোঁজের মা’র দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ৪ দফায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রের মূল হোতা হাজী আলম। তিনি জানান, প্রতারক হাজী আলম ভুক্তভোগীর পরিবারকে বলে, ইয়াসিনকে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। যদি সময় মতো টাকা না দেয়া হয় তাকে আর ফেরানো যাবে না। এই বলে টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়। পরে র‌্যাব বেশ কিছুদিন ধরে ওই প্রতারক চক্রকে ধরার চেষ্টা করছিলেন। রবিবার গভীররাতে গোপন সংবাদ পেয়ে র‌্যাব-৪ এর একটি দল শাহআলীর দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে প্রতারক চক্রের মূল হোতা হাজী আলমকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদের প্রাথমিক পর্র্যায়ে, টাকা আত্মসাত করার বিষয়টি স্বীকার করে প্রতারক হাজী আলম। তার অন্য দুই সহকারী মজিবর এবং লাবু। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এদিকে নিখোঁজ ইয়াসিনের নিজেদের বাড়ি রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী ডিওএইচএসে। মা সুরাইয়া পারভীন তালুকদার (৬৭) চিকিৎসক। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর তার স্ত্রী পাঁচ বছরের সন্তান নিয়ে থাকছেন ওই বাড়িতে। একমাত্র মেয়ে লন্ডন প্রবাসী। ডাঃ সুরাইয়া পারভীন একা থাকায় ওই বাড়িতে কয়েকজন কর্মচারী থাকেন। মাঝেমধ্যে অন্য আত্মীয়রা এসে খোঁজখবর নেন। ডাঃ সুরাইয়া পারভীন তালুকদার জানান, ১৪ জুলাই ছেলেকে তুলে নেয়ার বিষয়ে ওই দিনই বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন। জিডিতে বলা হয়, ইয়াসিন তার ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ের দাওয়াতে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে যাওয়ার জন্য ১৪ জুলাই ১১টা ২৫ মিনিটে বাসা থকে বের হন। ইয়াসিন নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি বনানী রেলস্টেশনের ঠিক সামনে দাঁড়ান। সেখান থেকে বেলা সাড়ে ১১টায় চাচাত ভাই সিদ্রাত মুহাম্মদকে তুলে নেয়ার কথা ছিল। সিদ্রাত সময়মতো না আসায় ১১টা ৩৯ মিনিটে ইয়াসিন ফোন করেন। সিদ্রাত বনানী ১১ নম্বর সড়কে আছেন এবং ১০ মিনিটের মধ্যে ইয়াসিনের কাছে পৌঁছে যাবেন বলে জানান। ১১টা ৪২ মিনিটে সিদ্রাত আবার ইয়াসিনের কাছ থেকে ফোন পান। ফোন ধরে সিদ্রাত তর্কবিতর্ক ও চিৎকারের শব্দ শুনতে পান। কিন্তু ইয়াসিন ফোনে কিছু বলার সুযোগ পাননি। তিন মিনিট পর ইয়াসিনের ফোনটি বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্রাত ১১টা ৫০ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখেন ইয়াসিন নেই। তার গাড়িটি পড়ে আছে। জিডিতে আরও উল্লেখ্য ছিল, তখন বনানী রেলস্টেশনের এক টিকেট বিক্রেতা সিদ্রাত জানান যে ইয়াসিনের গাড়ির পাশে একটি কালো রঙের মাইক্রোবাস দাঁড়িয়ে ছিল। সাধারণ পোশাক পরা একজনের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির পর তারা তাকে মাইক্রোবাসটিতে তুলে নিয়ে যান। বনানী থানার ওসি ফরমান আলী জানান, ওইদিন থানায় ইয়াসিনের নিখোঁজের ব্যাপারে তাদের থানায় জিডি নথিভুক্ত হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে। এখনও ইয়াসিনের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
×