ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইয়াঙ্গুনগামী ফ্লাইট

আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে বিমান, জরুরী অবতরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে বিমান, জরুরী অবতরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইটের রেশ না কাটতেই আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়েছে বিমানের আরও একটি ফ্লাইট। এবার ঢাকা থেকে ইয়াংগুনগামী এ ফ্লাইটে কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেম নষ্ট হওয়ায় জরুরী অবতরণ করতে হয়েছে। সোমবার দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। এতে চট্টগ্রামের আকাশসীমা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বেশ ক’জন যাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের জরুরী অক্সিজেন মাস্ক পরিয়েই ঢাকায় আনা হয়। একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ায় বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ শাখার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ভাবমূর্তি সঙ্কটে বিমান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দীর্ঘদিনের নিয়মিত যাত্রীরাও। কমে যাচ্ছে বিমানের যাত্রীর সংখ্যা। বিমানের প্রকৌশল শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার আসাদুজ্জামান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেছেন, দুপুর দেড়টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইয়াংগুনের উদ্দেশে ছেড়ে যায় ওই ফ্লাইট। আধা ঘণ্টা উড়ার এতে কেবিন এয়ার প্রেসার কমে যাওয়ায় ঢাকায় ফিরতে হয়। সন্ধ্যার দিকে ওই ত্রুটি মেরামতের পর সেটা আবার ইয়াংগুনের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যায়। বিমান জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাক শাকিল মেরাজ জানান, দুপুর দেড়টায় ৩৮ জন যাত্রী নিয়ে বিজি-০৬০ (ড্যাশ এইট উড়োহাজাজটি) শাহ জালাল বিমানবন্দর ছেড়ে যাওয়ার পর চট্টগ্রামে পৌঁছার আগেই ক্যাপ্টেন হাতিম দেখতে পান কেবিন এয়ার প্রেসার কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আর সামনে যাওয়া নিরাপদ নয়। এতে ক্যাপ্টেন বাধ্য হয়েই এক ঘণ্টা পর বেলা আড়াইটায় ঢাকায় ফিরে আসেন। বিমানের এয়ার সার্ভিস শাখার মহাব্যবস্থাপক নুরুল ইসলাম হাওলাদার জনকণ্ঠকে জানান, যাত্রীদের শাহজালালের লাউঞ্জে নিয়ে গিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। পরে তাদের সন্ধ্যার দিকে আবার ওই ফ্লাইটেই ইয়াংগুন নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যাত্রীরা অসুস্থ হয়েছিলেন কিনা সে বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। বিমান সূত্র জানায়, বিমানের এই ড্যাশ এইট উড়োহাজাটি মিসর থেকে লিজে আনা। এর ক্যাপ্টেনও হাতিমও মিসরের নাগরিক। তিনি পেশাদার হলেও ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে বিমানে চাকরি করছেন। কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেম নষ্ট হওয়ায় কি ধরনের বিপদ ঘটার আশঙ্কা জানতে চাইলে বিমানের একজন প্রকৌশলী জনকণ্ঠকে বলেন, আকাশে উড়ার পর যতই উপরের দিকে ওঠে ততই অক্সিজেন ও বাতাসের চাপ কমে যায়। উড়োজাহাজের ভেতর ও বাইরের বাতাসের চাপের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান ঘটে। কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেম এ ব্যবধানের মধ্যে প্রয়োজনীয় ভারসাম্য রক্ষা করে। এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম ও কেবিন এয়ার প্রেসারাইজেশন সিস্টেমের মধ্যেও ভারসাম্য থাকে বলেই যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে থাকে। এ সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেলে ভেতরে অক্সিজেন সঙ্কটের শিকার হতে হয়। এজন্য বাধ্য হয়েই তাৎক্ষণিক সামনের সিটে থাকা অক্সিজেন মাস্ক স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপরের কেবিন থেকে নিচে পড়ে যায় এবং যাত্রীরা সেটা মুখে লাগাতে বাধ্য হন। এমন পরিস্থিতির মুখে ক্যাপ্টেন হাতিম চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আসতে বাধ্য হন। এ সম্পর্কে বিমানের একজন সাবেক পরিচালক জনকণ্ঠকে বলেন, ভূপৃষ্ঠ থেকে দশ হাজার ফুট ওপরে উঠলেই অক্সিজেন ও বাতাসের চাপ কমতে থাকে। ৪০ হাজার ফুট ওপরে উঠলে সেটা আরও কমে যাওয়ায় ভেতরে যে যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে অক্সিজেন পায় এই প্রেসারাইজেশন সিস্টেমের কারণে। এ কারণেই ফ্লাইট টেক অফের আগেই কেবিন ক্রুরা এমন জরুরী পরিস্থিতিতে কিভাবে ওপরের কেবিনে থাকা মাস্ক পরতে হয়- তার কৌশল জানিয়ে দেয়। এই প্রেসার সিস্টেম নষ্ট হওয়ার পর আধা ঘণ্টার মধ্যেই ফ্লাইট জরুরী অবতরণ আবশ্যক হয়ে পড়ে। নইলে শ্বাসকষ্টে যাত্রীদের মৃত্যুও ঘটতে পারে। এদিকে একের পর এক কেন যান্ত্রিক ত্রুটির ঘটনা ঘটছে সে সম্পর্কে বিমানের কোন কর্মকর্তাই মুখ খুলতে রাজি হননি। এসব ঘটনার দায় দায়িত্ব রক্ষণাবেক্ষণের শাখার হলেও প্রকৌশল বিভাগ বলছে- এমনটি ঘটতেই পারে।
×