ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আজ হানাদারমুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

আজ হানাদারমুক্ত দিবস

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ আজ ১৩ ডিসেম্বর। বগুড়া মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর সঙ্গে টিকতে না পেরে পালিয়ে যায় এক পর্যায়ে তারা আতœসমর্পন করে। ডিসেম্বর প্রথম সপ্তাহের পর পাকি সেনাদের পলায়নের পালা শুরু হয়। মহাস্থানগড়ে মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে গঠিত মিত্র বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানীরা বগুড়ার দিকে পালাতে থাকে। ১০ ডিসেম্বর ভোরে মিত্র বাহিনীর ৬৪ মাউন্টেইন রেজিমেন্টের ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিং বগুড়া শহরের উত্তর দিকে ঠেঙ্গামারা এলাকার লাঠিগাড়িতে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয় হানাদার পাকিস্তানী সেনাদের তাড়া করলে কোনভাবেই টিকতে পারে না। তারা আতœ সমর্পনের মেসেজ পাঠায়। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পাকি সেনাদের আত্মসমর্পনের আয়োজন করা হয় উত্তর দিকে শহরতলির বৃন্দাবনপাড়ায় সুলতানের বাড়ির উঠানে। ১৩ ডিসেম্বর বেলা ৩ টায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার এলাহী বক্স তার ৪শ’ সৈন্য নিয়ে মিত্র বাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার প্রেম সিংয়ের নিকট আতœসমর্পন করে। এর পরই উত্তরাঞ্চলের দায়িত্ব প্রাপ্ত জেনারেল নাজার হুসেন শাহ বগুড়া সেনানিবাস থেকে নাটোরে পালিয়ে যায। ১৬ ডিসেম্বর বিকালের মধ্যেই বগুড়া সেনানিবাস মিত্র বাহিনীর দখলে চলে যান। মিত্র বাহিনীর জেনারেল লাছমান সিং আতœসমর্পনকৃত দুই পাকি সেনাকে নাটোর পাঠিয়ে দেন নাজার শাহকে বগুড়ায় নিয়ে আসার জন্য। পাকি জেনারেল নাজার ফিরে না এলে ব্রিগেডিয়ার রাঘুবর সিংকে হেলিকপ্টারে নাটোর পাঠানো হয়। ১৮ ডিসেম্বর পাকি জেনারেল নাজার বগুড়ায় এসে মিত্র বাহিনীর জেনারেল লাছমান সিংয়ের কাছে নিজের পিস্তল তুলে দিয়ে আতœসমর্পন করেন। মূলত বগুড়ার পাকি সেনাদের পতন শুরু হয় ১৩ ডিসেম্বর। নীলফামারী স্টাফ রির্পোটার, নীলফামারী থেকে জানান, ১৩ ডিসেম্বর নীলফামারী হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে উত্তরের জেলা তিস্তা বিধৌত নীলফামারীকে পাকি সেনা ও তাদের দোসরদের হাত হতে মুক্ত করে। সেই সঙ্গে উত্তোলন করে মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। দিবসটি পালনে জেলা প্রশাসন, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড যৌথভাবে আনন্দ শোভাযাত্রা আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। নীলফামারী শহরকে মুক্ত করতে চারদিক দিয়ে আক্রমন শুরু হয়। ১২ ডিসেম্বর মধ্য রাতে মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকলে খানসেনারা পিছু হটে সৈয়দপুর ক্যান্টনম্যান্টে গিয়ে আশ্রয় নেয়। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করতে থাকে এবং তৎকালিন নীলফামারী মহকুমা শহরটি হানাদারমুক্ত করা হয়। সেদিন সকালে স্বাধীনতাকামী হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং চৌরঙ্গী মোড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা উত্তোলন করে। মানিকগঞ্জ নিজস্ব সংবাদদাতা মানিকগঞ্জ, থেকে জানান, ১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিন পাক বাহিনী মানিকগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন ১৪ ডিসেম্বর সকালে দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন তৎকালীন এমএলএ খন্দকার মাযহারুল ইসলাম চাঁন মিয়া। দীর্ঘ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে মানিকগঞ্জে শহীদ হন ৫৮ জন মুক্তিযোদ্ধা। হত্যা করা হয় প্রায় সাত হাজার নিরীহ মানুষকে। আহত হয় ৪০ মুক্তিযোদ্ধা। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই মুক্তি বাহিনীর আক্রমনে পাক সেনারা মানিকগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ছেড়ে পিছিয়ে আসতে শুরু করে মহুকুমা শহরের পিটিআই ক্যাম্পে । ১৩ ডিসেম্বরে দুপুরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা হামলায় পাক বাহিনী মানিকগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এদিকে বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৩ ডিসেম্বর থেকে মানিকগঞ্জ বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ১৩ দিনব্যাপী বিজয় মেলা শুরু। চলবে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেলা মঞ্চে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের উপর আলোচনাসহ নানা আয়োজন । ধামইরহাট নিজস্ব সংবাদদাতা, নওগাঁ থেকে জানান, ১২ ডিসেম্বর॥ আজ ১৩ ডিসেম্বর নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা হানাদার মুক্ত দিবস। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকি হানাদার বাহিনী পরাজিত হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় ধামইরহাট উপজেলা ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাকি বাহিনী সব কিছু গুটিয়ে পিছু হটে চলে যায়। আর ওইদিনই ধামইরহাট উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। বেড়া সংবাদদাতা, বেড়া, পাবনা থেকে জানান, আজ ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকবাহিনীর হাত থেকে পাবনার বেড়া উপজেলা মুক্ত হয়। এইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে বেড়াকে শত্র“মুক্ত ঘোষণা দিয়ে বেলা ১১ টায় থানা কম্পাউন্ডে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারি পুরাতন কলেজে অত্যন্ত গোপন বৈঠকে একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করা হয়। এই বাহিনী গঠনে সমন্বয়কারী থাকেন (অব) পিএনজি আব্দুল মজিদ মোল্লা। এসএম আমীর আলীকে কমান্ডার করে অধ্যাপক আবু সাইয়িদ অস্ত্র গোলা বারুদ সংগ্রহের দায়িত্ব নেন। ২৮ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধা দল গঠন করা হয়। ১ এপ্রিল নগরবাড়ি ঘাটে প্রথম মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে পাকবাহিনী মোকাবেলার কঠিন শপথ নেয়া হয়। ৯ এপ্রিল পাকিস্থানী বিমানবাহিনীর জঙ্গি বিমান নগরবাড়ি ঘাটে বোমা বর্ষণ করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। এসময় তারা বহু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে হত্যা করে যমুনা নদীতে ফেলে দেয়। ১১ এপ্রিল ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান সুবেদার আলী আকবরের নেতৃত্বে ইবিআর ও ইপিআরের দু’শতাধিক সদস্য মুক্তিযোদ্ধার সাথে যোগ দেয়। ১৯ এপ্রিল সাঁথিয়ার শহিদনগরের ডাব বাগানে পাকিস্থানী বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য যুদ্ধে উভয়পক্ষের শতাধিক নিহত হয়। পরবর্তীতে ১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা পরিকল্পিতভাবে বেড়া থানায় আশ্রয় নেওয়া পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ওপর প্রবল আক্রমণ করলে তারা আতœসমর্পণে বাধ্য হয়। ১৩ ডিসেম্বর বেড়া হয় শত্রুমুক্ত হয়। মির্জাপুর নিজস্ব সংবাদদাতা, মির্জাপুর থেকে জানান, ১৩ ডিসেম্বর মির্জাপুর হানাদার মুক্ত দিবস। ৭১’র এই দিনে বীরমুক্তিযোদ্ধারা মির্জাপুরকে পাকহানাদারমুক্ত করে। এজন্য মির্জাপুরবাসীকে দিতে হয়েছে অনেক রক্ত এবং লড়তে হয়েছে সম্মুখ যুদ্ধে। ৭১’র ৩ এপ্রিল জামুর্কী ইউনিয়নের গোড়ান-সাটিয়াচড়ায় ঢাকার বাইরে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়। এরপর একে একে পাথরঘাটা, নয়াপাড়া, হিলড়া এবং ভররাসহ অনেক স্থানে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধ হয়। ৭ মে মির্জাপুর এবং আন্ধরা গ্রামে পাকবাহিনী প্রথম গণহত্যা চালায়। এছাড়া ১০ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা রবিসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাকবাহিনী এবং তাদের এদেশী দোসররা শতাধিক নিরীহ বাঙ্গালিকে ধরে নিয়ে হত্যা করে। অবশেষে ১৩ ডিসেম্বর এই দিনে পাকবাহিনীরা মুক্তিবাহিনী এবং মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়ে মির্জাপুর হানাদার মুক্ত হয়।
×