ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রী ১ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন ॥ ২৫ দেশের অংশগ্রহণের সম্ভাবনা

এবার বড় পরিসরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

এবার বড় পরিসরে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা

এম শাহজাহান ॥ রফতানি বাণিজ্যকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবার ২২তম ঢাকা আন্তর্জাতিক মেলা বড় পরিসরে করার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে দেশীয় পণ্যের দেশীয় ভোক্তা বাড়ানোর কৌশল গ্রহণ করতে যাচ্ছে সরকার। বাণিজ্যমেলার মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদিত পণ্য ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের সামনে মেলে ধরা হবে। শুধু তাই নয়, বেশি সংখ্যক বিদেশী উদ্যোক্তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি ও প্রদর্শন করার জন্য বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। আগামী ১ জানুয়ারি এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) যৌথ আয়োজনে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা-২০১৭ (ডিআইটিএফ) অনুষ্ঠিত হবে। মেলা চলবে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর শের-ই-বাংলা নগরে আন্তর্জাতিক মেলা অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৮ সালের পর থেকে ঢাকার পূর্বাচলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার স্থায়ী কমপ্লেক্সে এ মেলা অনুষ্ঠানের চিন্তা-ভাবনা করছে ইপিবি। আগামী ১৪ ডিসেম্বর বুধবার মেলার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সভা আয়োজন করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এবারের মেলা যাতে অন্যান্য বারের চেয়ে আরও পরিসর এবং ভাল পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে সে ব্যাপারে করুনীয় নির্ধারণ করা হবে। যদিও মেলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। শীঘ্রই রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের পেছনের অংশে বরাবর বাণিজ্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়। মেলা সামনে রেখে সম্মেলন কেন্দ্রের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তার কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এজন্য সাময়িকভাবে রাস্তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়া মেলার মূল ভেন্যুতে সারি সারি সাধারণ স্টলের কাজ চলছে। এবারের মেলায় অংশ নেয়া বড় প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে প্রাণ আর এফএল, ওয়ালটন, বেস্টবাই, স্বপ্ন, আক্তার ফার্নিচার, হাতিল ফার্নিচার দ্রুত প্যাভিলিয়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। দৃষ্টিনন্দন ও বড় প্যাভিলিয়নগুলোতে লিফট সিস্টেম চালু হবে, যাতে ক্রেতারা সহজে দ্বিতলা বা তৃতীয় তলা থেকে পণ্য কিনে তা নিয়ে যেতে পারেন। ক্রেতা আকর্ষণে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা ও ডিসকাউন্ট ঘোষণা করা হবে। দেশীয় প্রতিষ্ঠান ওয়ালটন পণ্যসামগ্রী প্রথমবারের মতো ক্রেতারা মেলা থেকে অনলাইনে কেনাকাটা করার সুযোগ পাচ্ছেন। এছাড়া সনি র‌্যাংগস, হিটাচি এবং কয়েকটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানও অনলাইনে কেনাকাটা ও মূল্য পরিশোধের উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে মেলা উপলক্ষে বাড়তি কোন চার্জ না নেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। এদিকে, এবারের মেলায় ২৫টি দেশ অংশগ্রহণ করতে পারে বলে ইপিবি সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইপিবি’র ভাইস চেয়ারম্যান মাফরুহা সুলতানা জনকণ্ঠকে বলেন, এবারের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা বড় পরিসরে অনুষ্ঠিত হবে। মেলার সার্বিক প্রস্তুতি ভাল। সরকারের পক্ষ থেকে এ মেলা সফল করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেলার উদ্বোধন করবেন। এছাড়া বেশি সংখ্যক বিদেশী ও দেশী উদ্যোক্তা তাদের উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এবারের মেলায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করছি। জানা গেছে, এবারের মেলায় প্রতিবন্ধীদের প্রবেশের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া ফোয়ারা, ওয়েব পেজ-ই-শপ, এটিএম বুথ, ই-পার্ক, মা ও শিশুকেন্দ্র ও অস্থায়ী শিশুপার্ক স্থাপন করা হবে। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও আগের তুলনায় জোরদার করতে ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সাধারণত মেলায় ১৩টি ক্যাটাগরি থাকে। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ প্যাভিলিয়ন, সংরক্ষিত প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন, বিদেশী প্যাভিলিয়ন, সাধারণ মিনি প্যাভিলিয়ন, সংরক্ষিত মিনি প্যাভিলিয়ন, প্রিমিয়ার মিনি প্যাভিলিয়ন, বিদেশী মিনি প্যাভিলিয়ন, রেস্তরাঁ, প্রিমিয়ার স্টল, বিদেশী প্রিমিয়ার স্টল, সাধারণ স্টল ও ফুড স্টল প্রভৃতি। এছাড়া নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানাতে বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন থাকবে। মা ও শিশু কেন্দ্র থাকছে ২টি। প্রাথমিক চিকিৎসা কেন্দ্র থাকবে একটি। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার, পুলিশ ও পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। বিক্রি পণ্যের ওপর ভ্যাট আদায় করতে একটি অস্থায়ী শুল্ক অফিস স্থাপন করা হবে। কাস্টমস কর্মকর্তারা ভ্যাট ফাঁকিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া মেলায় সব ধরনের খাবারের দাম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা হবে। এজন্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের একটি টিম সার্বক্ষণিক মেলায় নিয়োজিত থাকবেন। কোন ফুট কোর্ট কিংবা রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে দাম বেশি নেয়া এবং খাদ্য ভেজালের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালানো হবে। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত দর্শনার্থীরা মেলায় যাতায়াত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য ২০ টাকা করা হতে পারে। এদিকে, গত মেলায় বিশ্বের ২১টি দেশ অংশগ্রহণ করেছিল। এসব দেশ হচ্ছে-মরিশাস, ঘানা, নেপাল, ভারত, পাকিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, ইরান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানি, নেপাল, হংকং, জাপান ও আরব আমিরাত। এবার আরও কয়েকটি নতুন দেশ মেলায় অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
×