ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ওয়াজেদ

হার্ট অব এশিয়ার কাঠগড়ায় পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬

হার্ট অব এশিয়ার কাঠগড়ায় পাকিস্তান

একাত্তর সালে প্রতিটি বাঙালীর কাছে ‘পাকিস্তান’ ছিল একটি ঘৃণিত মৃত নাম। বাঙালী নিধনে পাকিস্তানী শাসক ও তাদের লেলিয়ে দেয়া হানাদার বাহিনীর নয় মাস ধরে অব্যাহত গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসযজ্ঞ জাতি হিসেবে বাঙালী ভুলে যেতে পারে না। মানবতাবিরোধী এই যুদ্ধাপরাধের জন্য পাকিস্তানকে কোন মাসুল গুনতে হয়নি। প্রতিশ্রুতি দিয়েও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেনি। বরং এসব যুদ্ধাপরাধীদের তারা বীরের মর্যাদা দিয়েছে। যদিও যুদ্ধে পরাজিত হয়ে হানাদার পাকিস্তানীরা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। বুঝে নিয়েছিল, ‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি।’ লাখ লাখ বাঙালীকে হত্যা করেও স্বাধীনতাকে পর্যুদস্ত করতে পারেনি। রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি, মুজাহিদ বাহিনী নামক সন্ত্রাসী সংগঠন গড়ে ও তাদের দিয়ে বাঙালী নিধন চালিয়েও কামিয়াব হতে পারেনি। বাঙালী বীরের জাতিতে পরিণত হয়েছিল একাত্তরে। সম্মুখ সমরে পরাজিত করেছিল শত্রুবাহিনীকে। পরাজিত হওয়ার পরও পাকিস্তানীরা থেমে থাকেনি। বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র তাদের আজও অব্যাহত রয়েছে। পঁচাত্তরপরবর্তী সময়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে তারা সক্ষম হলেও একপর্যায়ে পর্যুদস্ত হয়। বাঙালী আবার তাদের নিজস্ব সত্তা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অব্যাহত রেখেছে। অনেকের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। পাকিস্তান এই যুদ্ধাপরাধীদের তাদের নাগরিক হিসেবে মর্যাদা দিয়ে বিচারের বিরুদ্ধে অবস্থান শুধু নয়, বাংলাদেশে অরাজকতা তৈরিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে তাদের এ দেশীয় এজেন্ট জামায়াত ও বিএনপির মাধ্যমে। কিন্তু গণরোষে তারা পিছু হটতে বাধ্য হলেও দেশে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ঘটাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। পাকিস্তানে প্রশিক্ষিত সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে নাশকতার কাজ চালিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু সর্বার্থে সাফল্য পাওয়ার কোন সুযোগ তারা পায়নি। জঙ্গী নির্মূলে বাংলাদেশের জনগণ একাট্টা হওয়ার পর তাদের নাশকতামূলক কর্মকা- বর্তমানে স্তিমিত। বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা পাকিস্তান অব্যাহত রেখেছে বলেই আকস্মিকভাবে বাংলাদেশের কাছে একাত্তরপূর্ব পাওনা দাবি করছে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে তাদের পাওনা বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়ে আসছে বারবার। কিন্তু তারা তাতে কর্ণপাত করছে না। ১৯৫ পাকিস্তানী যুদ্ধাপরাধীর বিচারের প্রতিশ্রুতি ছিল লারকানার কসাই হিসেবে খ্যাত ভুট্টোর। কিন্তু কারও বিচার হয়নি। বাংলাদেশের জনগণ এখনও সেই বিচারের দাবিতে অনড়। পাকিস্তানের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যাচ্ছে। যে নৃশংসতা পাকিস্তানীদের মজ্জাগত তা তারা প্রয়োগ করে আসছে বালুচদের ওপর। বালুচরাও স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। সেখানেও গণহত্যা, নিপীড়ন চালিয়ে দমননীতি অব্যাহত রেখেছে। নিজ দেশে শুধু নয়, এশিয়ার অন্যান্য দেশেও পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ রফতানি করছে। পাকিস্তান নিজেই এখন সন্ত্রাসবাদের অভয়ারণ্য। সন্ত্রাসী প্রশিক্ষণদানের কাজটি তারা চার দশক ধরেই চালিয়ে আসছে। পরামাণু শক্তিধর দেশটি এশিয়ার জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাগ্যিস একাত্তরে পাকিস্তান পরমাণু শক্তিধর ছিল না, তাহলে তারা তাদের আকাক্সিক্ষত ‘বাংলার মিট্টি চাহিয়ে’ অর্থাৎ বাংলার মানুষ নয়, মাটি চাই- এর লক্ষ্য পূরণ করতে পারত। একাত্তরে বাঙালীর কাছে পরাজিত পাকিস্তান পরমাণু অস্ত্রধারী দেশে পরিণত হওয়ার পর তার দাপট বেড়ে গেছে প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপরও। ধর্মীয় উন্মাদনা ছড়ানোর কাজটিতেও তারা পারঙ্গম বহুকাল ধরেই। তার সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী তৈরি। এদের পাকিস্তান অন্যান্য দেশে রফতানি করছে। বাংলাদেশ, ভারত ও আফগানিস্তানে এদের অতীত তৎপরতা সবারই জানা। এশিয়ার হৃদয় আজ ক্ষতবিক্ষত। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদ রফতানির কারণে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। নাশকতামূলক ও চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মানুষ হত্যা, আতঙ্ক ছড়ানোর কাজটি নির্বিঘেœ চালিয়ে আসছে। এমনিতেই সন্ত্রাস ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। উপমহাদেশ এবং এশিয়ার বৃহৎ পরিসরে ছড়িয়ে পড়েছে তার জাল। বুনট আরও নিবিড় হতে চাইছে প্রতিদিন। এই জাল কাটতে দ্রুত অস্ত্র শানিয়ে নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছে আক্রান্ত দেশগুলোর। সমসাময়িককালের খুব বড় বিপদ সন্ত্রাস। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে বিশ্বকেই। শুধু সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে নয়; যারা তাদের সাহায্য করে, আড়াল করে, আশ্রয় দেয় বা লালন করে, তাদের বিরুদ্ধেও। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে নীরবতা ও নিস্ক্রিয়তা শুধু সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের প্রভুদের শক্তি যুগিয়ে আসছে। যারা রক্তপাত ঘটাচ্ছে এবং ভয়ের আবহ ছড়িয়ে দিচ্ছে, সেই সন্ত্রাসবাদী নেটওয়ার্কগুলো ধ্বংস করতে বিশ্বের শান্তিকামীদের সম্মিলিত ইচ্ছাশক্তির পরিচয় প্রদান করা জরুরী। এক্ষেত্রে পাকিস্তানকে নিবৃত্ত করা না গেলে সন্ত্রাসবাদ আরও বিকশিত হবে। এটা প্রমাণিত যে আইএস, মুসলিম ব্রাদারহুড, আল কায়দার সঙ্গে পাকিস্তানী জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোর সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। গোটা এশিয়া অঞ্চলের শান্তি এবং সুস্থিতি নষ্টের পেছনে রয়েছে সন্ত্রাসবাদ। এতে কারা মদদ দিচ্ছে, তা সবারই জানা। তারপরও এদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে না। পাকিস্তান মনে করে জঙ্গীদের মধ্যে ভাল জঙ্গীও রয়েছে। সেই জঙ্গীদের তারা মদদ দিচ্ছে। জঙ্গীদের মহৎ করে দেখানোর পাকিস্তানী প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ কোন দেশ ও সরকার নেয়নি। সন্ত্রাস পরিকাঠামো কিভাবে নির্মূল করা যায়, তার কোন রূপরেখাও নির্ণীত হয়নি। পাকিস্তান যে সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত, তা আবার উচ্চারিত হলো গত তিন ও চার ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হার্ট অব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে। পাকিস্তান সীমান্ত থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে ভারতের অমৃতসরে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে চল্লিশটি দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা অংশ না নিলেও তাদের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে সম্মেলনে ‘পাকিস্তানকে একঘরে’ করার কাজটি সুচারুরূপে সম্পন্ন হয়েছে। বলা যায়, পাকিস্তান আসলেই ‘চপেটাঘাত’ খেয়েছে। একাত্তরের ডিসেম্বরে ঢাকায় আত্মসমর্পণের পঁয়তাল্লিশ বছর পর এবারের ডিসেম্বরে ভারতে সন্ত্রাসবাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়ে তীব্রভাবে সমালোচিত হয়েছে। এই শীর্ষ সম্মেলনে সন্ত্রাস দমনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে পাকিস্তানকে টার্গেট করেছে ভারত-আফগানিস্তানসহ চল্লিশটি দেশের মন্ত্রী ও প্রতিনিধিরা। এবং তা করা হয়েছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সারতাজ আজিজের উপস্থিতিতেই। সম্মেলনের শীর্ষবিন্দু ছিল সন্ত্রাস। এই সম্মেলন শুধু আফগানকেন্দ্রিক। দীর্ঘ যুদ্ধে দীর্ণ হয়ে পড়া রাষ্ট্রটির পুনর্গঠনে প্রতিবেশী, হিতাকাক্সক্ষী ও মিত্র দেশগুলোর ভূমিকা নির্ধারণের মঞ্চ এটি। ২০১১ সালের দুই নবেম্বর ইস্তানবুলে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে এই মঞ্চ গঠিত হয়। এতে ১৪টি দেশ সদস্য, ১৭টি দেশ সহযোগী এবং ১২টি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংগঠন সহায়ক সদস্য। আফগানিস্তান, আজারবাইজান, চীন, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, কিরঘিজস্থান, পাকিস্তান, রাশিয়া, সৌদি আরব, তাজিকিস্তান, তুরস্ক, তুর্কমেনিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এই মঞ্চের সদস্য। অস্ট্রেলিয়া, ইইউ, কানাডা, ডেনমার্ক, মিসর, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ইরাক, জাপান, নরওয়ে, পোল্যান্ড, স্পেন, সুইডেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থক সদস্য। এবার ষষ্ঠ সম্মেলনে সব দেশের প্রতিনিধিই অংশ নিয়েছে। সম্মেলনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল যোগাযোগের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা হুমকি মোকাবেলার জন্য আফগানিস্তান এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি। তালেবানী হানায় অবিরাম আক্রান্ত হচ্ছে আফগানিস্তান, তালেবান শিবিরগুলো সে দেশের মাটি থেকে উৎখাত হয়ে গেছে। কিন্তু পাকিস্তানে ঘাঁটি গেড়ে তারা আফগানে ক্রমাগত নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের সেনারা আমেরিকার চাপে কয়েক বছর আগে তেহরিক-ই-তালেবান অর্থাৎ পাকি তালেবানদের বিরুদ্ধে অভিযান চালালেও আফগান তালেবানদের বিরুদ্ধে তারা কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে পাকি ভূখ-কে আফগান তালেবানরা নিরাপদ আশ্রয়ই মনে করছে। উত্তাল আফগানিস্তান মানেই অস্থির দক্ষিণ এশিয়া। কারণ, ঐতিহাসিক এবং ভূ-রাজনৈতিকসহ একাধিক বিষয়। এশিয়ায় আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থানের গুরুত্ব অপরিসীম। স্থলবেষ্টিত এই দেশটির অবস্থান দক্ষিণ এশিয়া, পশ্চিম এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ার ঠিক মধ্যস্থলে। এই প্রথম এই মঞ্চের একটি সদস্য দেশ অন্যান্য সদস্য দেশের দ্বারা এমনভাবে সমালোচিত হলো যে পাকি প্রতিনিধি মুখ লুকাবার স্থানও পায়নি। আফগানে মার্কিন সামরিক ক্রিয়াকলাপ প্রায় সমাপ্ত হয়ে যাওয়ার পরও সেই দেশে ক্রমাগত শক্তি অর্জন করেছে জঙ্গীবাদী তালেবান এবং অন্যান্য জঙ্গীবাদী সংগঠন। এই পরিস্থিতির জন্য হার্ট অব এশিয়ার মঞ্চে সরাসরি কাঠগড়ায় পাকিস্তান। আফগানিস্তানের ভৌগোলিক অবস্থান এবং চীন-আফগান বহুমাত্রিক সম্পর্কের নিরিখে সেই দেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করা পাকিস্তানের পক্ষে স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, স্নায়ুযুদ্ধের দিনগুলোতে রাশিয়া সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে উগ্রপন্থীদের বিদ্রোহের সময় থেকেই পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদী বিভিন্ন সংগঠনের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনকে সেই প্রভাব বিস্তারের প্রক্রিয়ার অপরিহার্য অঙ্গ করে তুলেছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পাকিস্তানের ভারত নীতিতে আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে ঘাঁটি করা সন্ত্রাসীদের ব্যবহার। পরমাণু অস্ত্রধারী একটি রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদীদের এভাবে প্রশয় দিলে যা ঘটা স্বাভাবিক তাই ঘটেছে দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই জাল বিস্তার করতে শুরু করেছে সন্ত্রাসবাদীরা। এর ফলস্বরূপ উপর্যুপরি সন্ত্রাসী হামলায় নিজে ক্ষতবিক্ষত হওয়া সত্ত্বেও এ পর্যন্ত পাকিস্তান সে নীতিতে অনড়। হার্ট অব এশিয়া মঞ্চে একঘরে হওয়া এই নীতিরই পরিণতি। এবং ভবিষ্যতেও অন্যান্য বহুদেশীয় মঞ্চে পাকিস্তান এভাবেই সমালোচিত হতে পারে। কারণ, সন্ত্রাসবাদ বর্তমানে পুরো বিশ্বের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। তবে এই সমালোচনা থেকে পাকিস্তান কোন শিক্ষা নেবে বলে মনে হয় না। যদিও আন্তর্জাতিক সমাজ পাকিস্তানের কাছ থেকে সন্ত্রাসবাদবিরোধী সুস্পষ্ট পদক্ষেপ আশা করে। সম্মেলনের উদ্বোধনকালে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি সরাসরি পাকিস্তানের নামোল্লেখ করে বলেছেন, আফগানের উন্নয়নে পাকিস্তান ৫০ কোটি ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ওই টাকা পাকিস্তানেই সন্ত্রাসবাদী ও চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কাজ লাগানো হোক। পাকিস্তান যদি জঙ্গীদের সাহায্য করে যায় তা হলে কোন অঙ্কের টাকাই আমাদের সাহায্য করতে পারবে না। সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সামনেই গানি বলেছেন, ২০১৪ সালের শীতের সময় থেকে অঘোষিতভাবে যুদ্ধ শুরু করেছে পাকিস্তান। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগান পুনর্গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্রাসেলসে সাম্প্রতিক বৈঠকের পর তার তীব্রতা আরও বেড়ে গেছে। সীমান্ত পেরিয়ে কিভাবে সন্ত্রাস আসে, সেটা আমাদের নিশ্চিত করা দরকার এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তহবিল গঠন দরকার। তার বক্তব্যের সময়ে পাকিস্তানের আজিজ অস্বস্তিকর অবস্থায় পতিত হন। পরে অবশ্য তিনি সাফাই দেন যে, হিংসার সাম্প্রতিক উত্থানের জন্য শুধু একটা দেশের ওপর পুরো দায় চাপিয়ে দেয়াটা অতি সরলীকরণের চেষ্টা। এসব ভাষ্যে কারও মন গলেনি অবশ্য। তাই অমৃতসর ঘোষণায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী চালিত জঙ্গীগোষ্ঠী লস্কর-ই- তৈয়বা, হাক্কানি নেটওয়ার্ক, জইশ-ই-মহম্মদের নামোল্লেখ করে বলা হয়েছে, অবিলম্বে এসব জঙ্গীকে নির্মূল করতে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ঐকমত্য তৈরি করতে হবে। এছাড়া আইএস, আল কায়দা, তালেবান, এলইটি, জেইএম, স্টাটাম, জামাতউল আহরার, পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামী আন্দোলন, ইসলামিক মুভমেন্ট অব উজবেকিস্তান, জুনাদুল্লাহ ইত্যাদি এশীয় অঞ্চলের জঙ্গীগোষ্ঠীর আর্থিক সাহায্য, আশ্রয় দান, রসদ জোগানো সব রকম মদদ দান বন্ধের উল্লেখ করা হয় ঘোষণায়। ঘোষণাপত্রে গোড়াতেই বলা হয়েছে, আমরা চাই, যে কোন ধরনের সন্ত্রাসবাদ নিশ্চিহ্ন করতে এবং সন্ত্রাস পরিকাঠামো ও জঙ্গীদের স্বর্গোদ্যান ধ্বংস করতে আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংঘবদ্ধ প্রয়াস করা হোক। অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানো, অন্য দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অন্য দেশের ভূখ- দখলের জন্য অস্ত্র ব্যবহার না করার বিষয়গুলোতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে হবে। সন্ত্রাসবাদ এই মুহূর্তে শান্তি ও সুস্থিতির প্রশ্নে সবচেয়ে বড় বিপদ বলেই এসব বন্ধে ঐকমত্য হতে হবে। আফগান প্রেসিডেন্ট তাদের অপর পার থেকে যেভাবে সন্ত্রাস রফতানি করা হচ্ছে, তা নিয়ে স্পষ্ট আলোচনা হওয়া উচিত বলে জানান। আর আফগানের শান্তি সুরক্ষিত করতে হবে এশিয়ার সব দেশকেই। তিনি এমনটাও জানিয়েছেন যে, সম্প্রতি এক তালেবান কমান্ডার বলেছে, যদি তারা পাকিস্তানে কোন আশ্রয় না পেত তাহলে তারা একমাসও টিকত না। বাংলাদেশে গণহত্যা চালানো পাকিস্তান নামক ঘৃণ্য রাষ্ট্রটিকে এশিয়ার দেশগুলো সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো পাকিস্তান যদি এখনও সতর্ক না হয়, তবে পুরোপুরি একঘরে হতে বাধ্য। সোনায় মোড়ানো বাংলাকে শ্মশানে পরিণত করেছিল পাকিস্তানীরা। পঁয়তাল্লিশ বছর পর হলেও তাদের সেসব অপরাধের জবাব প্রদান শুধু নয় শাস্তিও পেতে হবে। বিজয়ের মাসে বাঙালী আবারও আশাবাদী, গণহত্যাকারী পাকিস্তানকে বিচারের কাঠগড়ায়ও দাঁড়াতে হবে।
×