ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পাথরখেকোর খপ্পরে রোয়াংছড়ির ঝিরি

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

পাথরখেকোর খপ্পরে রোয়াংছড়ির ঝিরি

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ১১ ডিসেম্বর ॥ বান্দরবানের রুমা-রোয়াংছড়ি সীমান্তরেখা ম্রক্ষ্যংখালের সাকলাই ঝিরি-ঝর্ণা থেকে অবাধে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে, ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করে প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ রক্ষায় পাথর উত্তোলস বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং মৌজা ও পান্তলা মৌজার মানচিত্রে সীমারেখা হচ্ছে ‘সাকলাই ঝিরি’। রুমা-বান্দরবান সড়কের ম্রোংগো ডাকবাংলো হয়ে ম্রক্ষ্যংখালের সাকলাই ঝিরির উজানে ভেতরে বোল্ডার পাথরের স্তূপ চোখে পড়ে। মাটি খুঁড়ে বোল্ডার পাথর উত্তোলন করে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বোল্ডারের স্তূপ করার কাজে নিয়োজিত শ্রমিক সর্দার আব্দুল্লাহ বলেন, পাথরের স্তূপগুলো বান্দরবানের হাফেজঘোনার বাসিন্দা বশর কোম্পানির। তিনি আরও বলেন, পাথর উত্তোলনে অনুমতির কাগজপত্র আছে কি-না আমি জানি না। এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের দেখাশোনা করা তার দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন শ্রমিক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। স্থানীয় লোকজন জানায়, রোয়াংছড়ি ও রুমা উপজেলা সীমারেখা ম্রক্ষ্যংখালের ‘সাকলাই’ ঝিরিতে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে গত অক্টোবর মাস থেকে মাটি খুঁড়ে বোল্ডারের পাথর স্তূপ করা শুরু হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে অবাধে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। বর্তমানে বোল্ডারের পাথর স্তূপগুলো পরিমাণে দুই লাখ ঘনফুটের বেশি জামানো হয়েছে। এসব পাথর ট্রাকে করে বান্দরবানসহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হবে। পাথর উত্তোলনকারী মোহাম্মদ বশর কোম্পানি বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলার অধীনে একটি অনুমতিপত্র আছে। অনুমতিপত্র দেখাতে বলা হলে তিনি বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর পাথর সরবরাহ করার জন্য পাথর উত্তোলনের কোন অনুমতি প্রয়োজন হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবানের হাফেজঘোনার বাসিন্দা বশর কোম্পানি শ্রমিক লাগিয়ে পাথর উত্তোলন করছেন। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নানা জায়গা থেকে অবৈধভাবে আহরিত এসব পাথর বিভিন্ন ঠিকাদারের কাছে সরবরাহ করে ব্যবসা করছেন। অব্যাহত পাথর উত্তোলনের কারণে একদিকে প্রশাসন ব্যাপকহারে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ ও পরিবেশ। তবে এখানে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের নেই কোন কার্যকরী পদক্ষেপ। ডলুঝিরিপাড়ার বাসিন্দা সুইসিঅং ও সাবেক ইউপি সদস্য থুইসাচিং বলেন, অবাধে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকায় ছড়া-ঝিরিগুলোতে পানিপ্রবাহের উৎস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে, উত্তোলন বন্ধ করা না গেলে ভবিষ্যতে এ ঝর্ণার পানি শুকিয়ে যাবে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ থেকে জারিকৃত খনি ও খনিজসম্পদ বিধিমালা-২০১২-এর ৯৫ বিধি অনুসারে খাল, ঝিরি ও নদীতে ভাসমান পাথর ব্যতীত মাটি খুঁড়ে ও পাহাড় কর্তন করে পাথর উত্তোলন করা যাবে না। শর্তারোপ করে পাথর আহরণের অনুমতি দেয়া হলেও তা মানছেন না স্থানীয় পাথর ব্যবসায়ীরা। এদিকে ম্রক্ষ্যংপাড়া চনুমং মারমা জানান, অক্টোবর মাসের শুরু থেকে বশর কোম্পানি প্রায় ৫০ জন শ্রমিকের মাধ্যমে বোল্ডার পাথর উত্তোলন করে স্তূপ করেছে। ফলে এই সাকলাই ঝর্ণার পানি উৎসের প্রবাহ শুকিয়ে যাবে। পানির অভাবে ডলুঝিরির দুটি পাড়ার ৮০টি পরিবারকে এখান থেকে ভবিষ্যতে অন্যত্র চলে যেতে হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করেন। এ ব্যাপারে রোয়াংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ দাউদ হোসেন চৌধুরী বলেন, রোয়াংছড়ি উপজেলায় পাথর উত্তোলনের কারোর কোন অনুমতিপত্র নেই, ঝিরিতে অবাধে পাথর উত্তোলনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
×