ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিয়ে মুজিবর রহমানের প্রামাণ্যচিত্র

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলকে নিয়ে মুজিবর রহমানের প্রামাণ্যচিত্র

মারুফ রায়হান ॥ ভারতের তরুণ প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা মুজিবর রহমান সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন। ইতোমধ্যে ৪০টির মতো প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছেন। যার অধিকাংশই ব্যক্তিত্বনির্ভর। শুধু কালজয়ী সাহিত্যিক নয়, সমাজসেবী, শিক্ষাবিদ, গুণী সুরস্রষ্টাদের জীবন ও কর্ম নিয়েও নির্মাণ করেছেন তথ্যচিত্র। বাংলা একাডেমি ও ধানম-ির ইএমকে সেন্টারে প্রদর্শিত তার নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘রবীন্দ্রনাথ: জীবন ও সময়’। প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর আগে নির্মাতার সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তার কাজ ও আগামী পরিকল্পনা নিয়ে অনেক কথাই উঠে আসে। চলচ্চিত্র নির্মাতা একজন গবেষকও বটে। তার সর্বশেষ কাজ কবি নজরুলকে নিয়ে ‘নজরুলÑজীবন পরিক্রমা’। এটি প্রায় আড়াই ঘণ্টার ছবি। বিশিষ্ট নজরুল গবেষক অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম এই প্রামাণ্যচিত্রের উপদেষ্টা। এক গ্রামীণ কিশোর দুখু মিয়া কাল পরিক্রমায় হয়ে উঠলেন একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জাতীয় কবি। কবির জীবনযাত্রা ধাপে ধাপে তুলে ধরা হয়েছে প্রামাণ্যচিত্রটিতে। ‘রবীন্দ্রনাথ: জীবন ও সময়’ প্রামাণ্যচিত্রটিতে বহু দুর্লভ ডকুমেন্ট ও স্থিরচিত্রের সন্নিবেশ ঘটেছে। ৯৬ মিনিটের প্রামাণ্যচিত্রটি দেখতে ক্লান্তি আসে না। রবীন্দ্রনাথের গান বাঙালীর শ্রুতি আকর্ষণ করে। ছবিতে অকৃপণভাবেই রবীন্দ্রসঙ্গীত ব্যবহৃত হয়েছে। এসব দৃশ্য নির্মাণে পরিমিতি, নাটকীয়তা ও প্রাসঙ্গিকতা লক্ষণীয়। কবিগুরুর বিভিন্ন বয়সের চরিত্র উপযুক্ত পাত্রদের দিয়ে ফুটিয়ে তোলা সহজ কাজ নয়। মুজিবর বললেন, তার পরিকল্পনা ছিল আড়াই ঘণ্টার চলচ্চিত্র নির্মাণ, কিন্তু উপদেষ্টা কবি শঙ্খ ঘোষ তাকে এটি দেড় ঘণ্টায় নিয়ে আসার পরামর্শ দেন। ছবিতে বিশেষভাবে লক্ষণীয় কবিগুরুর বিদেশ ভ্রমণ পর্যায়ের রচনা ও বক্তব্যের চকিত উপস্থাপন। পরিচালক মুজিবর রহমানের জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৫ মে মুর্শিদাবাদের শঞ্জিপুরে প্রত্যন্ত গ্রামে। ইংরেজী সাহিত্যে সাম্মানিক স্নাতক কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ থেকে। উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় এসে জড়িয়ে পড়েন থিয়েটারের সঙ্গে। দুই বছর গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে পরে পাড়ি জমান মুম্বাইয়ে। শুরু হয় সংগ্রাম। চতুর্থ সহকারী হিসেবে যোগ দেন নিমবাস টেলিভিশনের ধারাবাহিক নাটকে। আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নিÑ সুযোগ পেলেন বালাজি ও সাহারা টেলিফিল্মের কাজে। পরে দায়িত্ব পেলেন প্রধান সহকারী পরিচালকের। মুম্বাইয়ে এসব হিন্দী সিরিয়ালগুলোয় কাজ করতে করতে এক সময় জি বাংলা টিভির জন্য নির্মিত একটি সিরিয়ালের চিত্রনাট্য ও সংলাপ লেখার কাজ পান। এজন্য কলকাতায় ফিরতে হয়। সে সময় বাবা জোর করে বিয়ে দেন। কারণ তার বিশ্বাস ছিল চলচ্চিত্রে যারা কাজ করে তাদের চরিত্রস্খলন ঘটে। টেলিভিশন ও ধারাবাহিক দিয়ে মুজিবরের কাজ শুরু হয় কলকাতায়। এরপর টেলিভিশনের জন্য বেশ কিছু অনুষ্ঠান রচনা ও পরিচালনা করলেন। কিন্তু সংসার চালানোর জন্য রোজগার করতে হবে। শুরু করেন বিজ্ঞাপনচিত্র, কর্পোরেট ফিল্ম ও ডকুমেন্টারি নির্মাণের কাজ। কসমস মিডিয়া কমিউনিকেশন নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। ছোট-বড় মিলিয়ে ৪০টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। তার প্রথম কাজ মুন্সি প্রেমচাঁদকে নিয়ে, তারপর একে একে নির্মাণ করেন বেগম রোকেয়া, রবীন্দ্রনাথ, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, স্বামী বিবেকানন্দের জীবন নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র। কাজী নজরুল ইসলামের ওপর প্রামাণ্যচিত্রটি শেষ হয়েছে। ভারতীয় রাগসঙ্গীতের ওস্তাদ ও প-িতদের নিয়ে নির্মিত মুজিবরের ছবিগুলোর দৈর্ঘ্য ১৮-২০ মিনিটের মধ্যে। মুজিবর জানান, প্রামাণ্যচিত্রগুলো সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছানোর জন্য গঠন করেছেন ওরিয়েন্টাল মিডিয়া ফোরাম। আগামীতে মূলধারার চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশের বর্ষীয়ান লেখক সৈয়দ আনওয়ারুল হাফিজের ঢাউশ উপন্যাস ‘তিন বিঘা জমি’-র প্রাথমিক চিত্রনাট্যও লেখা হয়ে গেছে। এটি বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী-কলাকুশলীদের সমন্বয়েই নির্মাণের ইচ্ছা তার।
×