ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাঁপাইয়ে একটি পশু করিডর বন্ধে পাল্টে গেছে সীমান্তের চিত্র

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

চাঁপাইয়ে একটি পশু করিডর বন্ধে পাল্টে গেছে সীমান্তের চিত্র

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ মাত্র একটি খাটাল বন্ধে ভারতীয় গরু পাচার ও মানুষ হত্যা বন্ধের পাশাপাশি পাল্টে গেছে সীমান্তের চিত্র। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বহু চেষ্টা ও কৌশল গ্রহণ করার পর চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুরো সীমান্তে গরু দস্যুদের তৎপরতা কমাতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি গরু রাখালদের সীমান্ত অতিক্রম ঠেকাতে বিজেবির কঠোর নজরদারির কারণে গত তিন মাসে বিএসএফের গুলিতে হত্যার ঘটনা তেমন নেই বা কমে এসেছে। পুরো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা ১৪৭ কিলোমিটার বেষ্টিত। এরই মধ্যে নদীপথ হচ্ছে প্রায় ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে পদ্মার ২১ কিলোর পুরোটাই সীমান্ত হওয়ার কারণে চোরাকারবারিরা বর্ষা ও শুকনো দুই মৌসুমেই বেপরোয়া হয়ে উঠে। এর মধ্যেই আবার দুটো ছিল সরকারী পশু করিডর বা গবাদিপশুর বিট-খাটাল। একটি জুহুরপুর ট্যাক সীমান্তে আর অপরটি শিবগঞ্জ উপজেলার মাসুদপুর সীমান্তে। তবে সদর উপজেলার জোহরপুর সীমান্তের গবাদিপশুর বিট-খাটাল নিয়ে বিজিবি অনেকটাই বেসামাল হয়ে পড়েছিল। সামনাসামনি পদ্মার ওপারে একটি বিওপি ক্যাম্প আর এপারে অপর একটি বিওপি থাকার কারণে দুই পারের নিরাপত্তা রক্ষীদের ম্যানেজ করে একাধিক প্রভাবশালীরা ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের মাধ্যমে ভারতীয় পশু আনতে খুবই বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল। এই সীমান্তের ওপারে মুর্শিদাবাদ জেলার মধ্যে দুটি সাপ্তাহিক হাট আছে। একটি হাটে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে গরু আনা হতো শুধু বাংলাদেশে ঠেলে দেয়ার জন্য, যার কারণে বর্ষা ও শুকনো মৌসুমে প্রভাবশালীদের চ্যালা-চামুন্ডারা আইন প্রয়োকারীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে দেদার গরু পার করে এনে বাগডাঙ্গা ইউপির মধ্যে অবস্থিত একটি বিওপি ক্যাম্পের সামনে তা জড়ো করত। যার কারণে এখানে বিভিন্ন গোয়ন্দা সংস্থার সদস্যসহ একাধিক আইন প্রয়োগকারীরা রাতদিন পড়ে থাকত। আর গাদি গাদি অর্থ নিয়ে বাড়ি ফিরত। এখানকার পুরো পশু আসত জোহরপুর বিট বা খাটাল দিয়ে। বিধায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি ব্যাটালিয়ন কর্মকর্তারা এই বিটটি বন্ধের জন্য বহুদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছে। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোহরপুরের গবাদিপশুর করিডর বা বিট-খাটালটি বাতিল করেছে। এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস.এ মুনীরুদ্দীন বাতিল আদেশের কপি পঠিয়েছেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার, মহাপরিচালক বর্ডার গার্ড, পুলিশ সুপার চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ সাতটি সংস্থাকে। এর মধ্যে বিট-খাটাল ও পশু করিডর মালিকও রয়েছে। এই খাটাল বন্ধের মধ্য দিয়ে বিজিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত ভারতীয় গরু পাচার হয়ে আসা অনেকটাই রুখে দিয়েছে। বন্ধ হয়েছে চোরাকারবারিদের তৎপরতা। একই সঙ্গে ভারতীয় গরু আসার আড়ালে ব্যাপক হারে নানান ধরনের মাদক আসত। এছাড়াও এই করিডর সংলগ্ন কোন কাস্টমস অফিস না থাকায় এরা গরু নিয়ে রাজশাহী এলাকার গোদাগাড়ী কাস্টমস ব্যবহার করত। এখানে ছিল জাল-জালিয়াতি ও রাজস্ব ফাঁকি। সেটাই একই সঙ্গে বন্ধ হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না তাদের কর্মকর্তারা। নানান অপরাধের হাত থেকেও বেঁচেছে এরা করিডর বন্ধ হওয়ার কারণে। এক কথায় বিজিবিসহ সকল সংস্থাতে আইনশৃঙ্খলা ফিরে আসাসহ সুদৃঢ় হয়েছে প্রশাসন। এদিকে পশু করিডর পাওয়া আব্দুল হান্নান গংয়ের সদস্য জানিয়েছে তাদের এই খাটাল বন্ধ করায় কোটি টাকার লোকসান গুনতে হবে। কারণ এই খাটালের অনুমোদন বের করতে বহু হাতে তাদের যে পয়সা খরচা করতে হয়েছিল তার পুরোটাই পানিতে গেল।
×