ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

নফরদের মন

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

নফরদের মন

বিজয়ের ৪৫ বছর পরও এই লেখা লিখতে হচ্ছে। তাতে মনে হচ্ছে, প্রায় দু’দশক আগে যে লেখা লিখেছিলাম ক্ষুব্ধ হয়ে তার যৌক্তিকতা আছে। লিখেছিলাম, বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ছিলেন, বিধ্বস্ত দেশটিকে একটি ভিত্তি দিয়ে গেছেন। কিন্তু তখনও তো ছিল ষোড়শ বাহিনী, তখনও তো ছিল দখল আর লুটপাট আর হিংস্রতা এবং বঙ্গবন্ধু বিরোধিতা। ঐ জটিল ও সংঘাতময় সময়ে যদি তিনি না থাকতেন তাহলে দেশের অস্তিত্ব থাকত কিনা সন্দেহ। তবে তাতে অবশ্য খুশি হত পাকিস্তান ও তার মিত্ররা এবং বাঙালী নফররা। এই নফরদের সৃষ্টি হয়েছিল পাকিস্তানী সময়েই। হ্যাঁ, আমরাও পাকিস্তানে ছিলাম কিন্তু পাকিস্তানত্ব ছুড়ে ফেলতে আমরা দ্বিধা করিনি। কিন্তু যারা নফর থাকতে চেয়েছে তারা নফরই রয়ে গেল। খাঁচার পাখি ছেড়ে দিলেও নাকি খাঁচায় ফিরে আসে বা উড়ে গেলেও বেশিদিন বাঁচে কিনা সন্দেহ। এই নফররাও স্বাধীনতায় বাঁচতে চায়নি। নফরত্ব ধরে রাখতে চেয়েছে, এমনকী যারা স্বাধীন হয়েছেন বলে মনে করেন তাদের মনের এক কোণেও সেই নফর যুগের প্রতি একটু ভালোবাসা রয়ে গেছে। যেন সেই হিন্দি ফিল্মÑ ‘দিল দিয়া দর্দ লিয়া’-র মতো। কোথায় যেন একটু বেদনা কুরে কুরে খায় ঘুণপোকার মতো। নূরজাহানের সেই একটি গান ছিল নাÑ ‘দিল দিল-ই তো হ্যায় পাথ্থর তো নেহি।’ গণহত্যা করেছ, ধর্ষণ করেছ, পৃথিবীতে যত রকমের নিপীড়ন আছে তাও করেছ, বুট দিয়ে লাথি মেরে ‘শূয়ারকা বাচ্চা’ বলেছ, তারপরও দিল তো পাথর নয়, ভালোবাসা যায় না। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ জিয়াউর রহমান যিনি নফরদের রাজত্ব বা নফররাজ কায়েম করেছিলেন এবং এই রাজত্ব হস্তান্তর করেছিলেন এরশাদের কাছে। তারপর খালেদা জিয়া ও নফরদের নেতা নিজামীর কাছে। মাঝে মাঝে মনে হয় ২৫ বছর আমরা নফরদের অধীনে থাকলাম কীভাবে? না, শুধু রাজনীতিবিদদের দোষ দিলে চলবে না। আমরাও কম-বেশি দায়ী। আমরা কি নিজ নিজ অবস্থান থেকে নফররাজ অস্বীকার করতে চেয়েছি। হত্যা, বুদ্ধিজীবীদের যতটুকু সম্ভব তারা করেছেন, সেটি এ দেশের বৈশিষ্ট্য, ব্যতিক্রমও বটে কিন্তু নিয়ম তো নয়। এরা করেছেন, ক্ষমতার কাছে-ধারে যাননি কিন্তু সব আমলেই অনাদৃত থেকেছেন। তবে, হ্যাঁ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ ক্ষমতার বাইরে থাকলে তাদের কদর বাড়ে। এই নফররা তো জনগণের একটি বেশ বড় অংশ। নফর নেতারা কমপক্ষে শতকরা ৩০ ভাগ ছোটা ছোটা নফর সৃষ্টি করতে পেরেছেন। জিয়াউর রহমানের কথা মনে হলে তাদের চোখে আঁসু আসে। তিনি যে শুধু মুক্তিযোদ্ধা নিধন নয়, পাকিস্তানী টুপি পরিয়ে দিতে চাইলেন বাঙালীদের সেটি মনে আসে না। নফররা তাদের স্মৃতি অমলিন রাখার জন্য সুক্ষ্ম স্থ’ূল অনেক কাজ করে গেছে। তার একটি হলো জাতীয় সংসদ ভবন এলাকাকে গোরস্থানে পরিণত করা। তাদের পাশে নানা ভবন, স্থাপনা, বিদ্যাপিঠ, সড়ক করে যাওয়া। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কারও এমনকি সরকারেরও মনে হয়নি এত বছরে যে, স্বাধীন দেশে তাদের নামে কিছু থাকার মানে তাদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা। আজ থেকে বছর বিশেক আগে শাহরিয়ার কবির ও আমি খুলনা গিয়েছিলাম একসঙ্গে, নির্মূল কমিটির সভা করতে। এর আগেও খুলনা গিয়েছি, কিন্তু সেবার দেখলাম, যে প্রধান সড়ক দিয়ে যাচ্ছি তার নাম খান এ সবুর রোড। প্রেসক্লাবে পৌঁছে সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনারা এত কিছুর প্রতিবাদ করেন। এটির প্রতিবাদ করলেন না।’ এখানে বঙ্গবন্ধুর নামে একটি সড়ক নেই, চার নেতার নামে নেই কিন্তু সবুর খানের নামে আছে। আওয়ামী লীগ, বামপন্থী, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষজন কতোজনকে জিজ্ঞেস করলাম। সবার একই উত্তর, উনি খুলনাকে পাকিস্তানে এনেছেন। সবুর খান কীভাবে আনলেন খুলনাকে পাকিস্তানে? তিনি ছিলেন মুসলিম লীগের মাস্তান। কিন্তু মিল সৃষ্টি করে গেছেন। সেই মিল এখনও চালু। তখনই মনে হল, দিল দিয়া দর্দ লিয়া। শাহরিয়ারকে বললাম, ঘাতক-দালাল নির্মূল করবে কীভাবে এরা যে মনের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। এলো আওয়ামী লীগ আমল, এদিকে কারও খেয়ালই হল না। বিষয়টি যে গুরুত্বপূর্ণ তাও মনে হয়নি কারও। তারপর যখন আওয়ামী লীগের পপুলার মেয়র হলেন, তখন আমি আর শাহরিয়ার রিট করলাম। তখন মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী ছিলেন বেঞ্চে। তিনি বললেন, খান এ সবুর রোডের এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজ হলসহ স্বাধীনতা বিরোধী সবার নাম মুছে ফেলতে হবে। খুব সম্ভব তার পর পরই তাকে রিটের বেঞ্চ থেকে অবমুক্ত করা হয়। আমরা তো মহাখুশি। কিন্তু নাম বদল হয় না। আওয়ামী মেয়রের কাছে অনেক দেন-দরবার হল। খুলনার বিএম-এর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলমের নেতৃত্বে অনেক মিছিল-টিছিল হল, তিনিও আওয়ামী নেতা, কিছু হল না। আমি তখন ডা. বাহারুলকে বলেছিলাম, যিনি ভোটের কারণে পাকিস্তানী এজেন্ডা পূরণ করতে চান তিনি পরের বার জিতবেন না। জেতেনওনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের এজেন্ডাটা পূরণ করলেন না ক্ষমতায় থাকাকালীন। কারণ, সবুর খানের প্রতি দরদ। অনেক মুক্তিযোদ্ধার গহীন গভীরে এরকম নফর মন লুক্কায়িত থাকে। সরকারের যেসব সচিবকে এসব বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছিল তারা বিষয়টিকে পাত্তাও দিলেন না। হাইকোর্ট জনস্বার্থমূলক এ রকম অনেক রায় দেয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে তা অগ্রাহ্য হয় এবং অগ্রাহ্য যে হচ্ছে তা দেখার মতোও কোন মনিটরিং সেল নেই। খুলনার কোন রাজনৈতিক দল, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোন সংস্থা এ আদেশ মানতে রাজি হয়নি। তাদের মনোভাব, ‘দিল দিলই তো হ্যায় পাত্থর তো নেহি।’ আজ যখন এ লেখা লিখছি, তখন পৃথিবীতে অনেক দেশে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে দুর্নীতিবিরোধী দিবস। বিশ্ব হাত ধোওয়া দিবসও পালিত হয় বাংলাদেশে নিয়মিত, গণহত্যা দিবস পালিত হয় না। এ বিষয়ে আমাদের দেয়া বিবৃতিও কোন পত্রিকা ছাপেনি। অথচ এই গণহত্যার কারণে সৃষ্টি বাংলাদেশের। দক্ষিণাঞ্চলেও সবচেয়ে নৃশংস ও বড় বড় গণহত্যা হয়েছে ১৯৭১ সালে। সে কারণেই বাংলাদেশের প্রথম গণহত্যা-নিপীড়ন আর্কাইভ ও জাদুঘর আমরা খুলনায়ই শুরু করি। ভাড়া বাড়িতে আমরা আর কার্যক্রম চালাতে পারছিলাম না। তখন পরিত্যক্ত একটি বাড়ির জন্য আবেদন করি। খুলনার প্রশাসনের কর্তারা সবচেয়ে ভগ্নপ্রায় বাড়িটি এর জন্য নির্দিষ্ট করে এবং আমরা যাতে সেটিও না পাই তার জন্য প্রক্রিয়াগত যত রকমের বাধা সৃষ্টি করা দরকার তা করে। এরা সব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের আমলা। আসলে তাদের দোষ দিই না। ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরের অবস্থা কী হয়েছিল তারা তা দেখেছেন। যে বিচার বিভাগের হম্বিতম্বি আজকাল শুনি তারাও ১/১১-এর বিচারকের অবিচার সম্পর্কে মুখ খোলেন না। আওয়ামী লীগ আমলে যে কদিন মন্ত্রী হয়েছেন তার থেকে বেশিদিন বিপাকে থেকেছেন। সুতরাং নিরপেক্ষ বা বিএনপির পক্ষে থাকা যে বেহ্তর তা তারা জানেন। অথচ প্রচুর চেষ্টার পর যখন এ সংক্রান্ত ফাইল প্রধানমন্ত্রীর কাছে যায় তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বরাদ্দ করেন। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ হয়ত মনে কষ্ট পাবেন, জননেত্রী শেখ হাসিনাও হয়ত, কিন্তু কথাটা বলেই ফেলি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সমর্থকদের একটি বড় অংশ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগকে আলাদা করে দেখেন যতই তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হন না কেন। হয়ত এসব কারণেই। খান এ সবুরের নামে সড়ক বাতিল করার জন্য আবারও আমি সম্পূরক রিট করি। এবার আদালত ক্ষুব্ধ হন এবং সেই পুরনো আদেশ পুনর্ব্যক্ত করে। শাহ আজিজের নাম বাতিল হয় কিন্তু সবুরের নয়। আরও পরে, সেই ডাঃ শেখ বাহারুল ও ছাত্রলীগের কিছু কর্মী এখন সবুর খানের নামের ফলক উপড়ে ফেলে। সাইন বোর্ডে কালো কালি লেপে দেয়। তখন অনেকে নাম বাতিল করে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ভবন চাঁদা তুলে ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কিছু অনুদানে সংস্কার করে আমরা জাদুঘর চালু করেছি। প্রশাসনের কর্তাদের অনেক অনুরোধ করেছি, এমপিদেরও, কেউ আসেননি। সপ্তাহ দুয়েক আগে এইচটি ইমাম সেই জাদুঘর পরিদর্শনে গেলে সমস্ত কর্মকর্তা ও ছোটখাটো নেতারা সময় পেয়েছিলেন জাদুঘরে আসার। আমাদের সান্ত¡না, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের প্রধান দর্শক। এটাই তো আমরা চেয়েছিলাম। না, সম্পূরক আদেশ দেয়ার পরও সরকার কোন নির্দেশ দেয়নি এসব নাম মুছে ফেলার। অথচ সারা দেশে অনেক স্থাপনা, ভবন, বিদ্যাপিঠে বাঙালীর শত্রুদের, পরাজিত শক্তির আন্ডাবাচ্চাকাচ্চাদের নামগুলো জ্বলজ্বল করছে। এ শর্তই দেয়া হচ্ছেÑ এরা শত্রু নয়, ১৯৭১ সালে মিথ্যা মিথ্যা ‘কেচ্ছা’ এদের নামে বানান হয়েছে। ১৯৭১ সালের এইসব ‘কেচ্ছা’ সত্যি হলে এসব নাম থাকে কি করে? বদ্ধ উন্মাদ ছাড়া স্বাধীন দেশে কেউ পরাজিত-গণহত্যাকারীদের নাম অম্লান রাখার জন্য ‘সৌধ’ করে? আমি জানি, এর উত্তর কারও পক্ষে দেয়া সম্ভব নয়। নফররাজের বৃত্ত থেকে বেরুবার জন্য বর্তমান সরকার চেষ্টা করছে না, তা কিন্তু নয়। কিন্তু সেগুলো বিচ্ছিন্ন ব্যবস্থা, সামগ্রিক নয়। যেমন, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাÑঅভাবিতভাবে বৃদ্ধি, তাদের প্রচুর সুযোগ-সুবিধা দেয়া ইত্যাদি। অন্যদিকে, জামায়াত নিষিদ্ধে আগ্রহ নেই তাদের। শিক্ষার ক্ষেত্রে মাদ্রাসাকে গুরুত্ব দেয়া, একদিকে জঙ্গী-মৌলবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, অন্যদিকে মাদ্রাসায় জঙ্গীবাদ ও জিহাদ কেন প্রয়োজন তা পড়ানো। জামায়াত-বিএনপি নফররাজ দৃঢ় করার জন্য নানা ব্যবস্থা নিয়েছিল এবং নিচ্ছে। সেগুলো এখন ফল পাচ্ছে। ধর্মকে ব্যবহার এখন এমন পর্যায়ে গেছে যে বলতে হয়, মুক্তিযুদ্ধের সরকারের আমলে সবচেয়ে বেশি ইসলামীকরণ ও সামরিকায়ন হচ্ছে। সেনাবাহিনীর তিনটি সংস্থা প্রশাসন ভাগ করে নিয়েছে। উড্ডয়ন সব বিমান বাহিনী, জলপথ সব নৌবাহিনী, বাকি সব সেনাবাহিনী। নফররাজের মূল দর্শন হচ্ছে পাকিস্তানকে মানা। আমাদের পোশাক, ক্ষমতায় সামরিকদের ক্ষমতায়ন, বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ, দৃষ্টিভঙ্গিতে এ নফররাজের বিভিন্ন বিষয় পরিস্ফুট হচ্ছে। এখন সারাদেশে বিজয়সেনা থেকে ওয়াজ মাহফিল বেশি হচ্ছে। এবং সেখানে নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী নেতা-এমপিরা। পরিসংখ্যান ব্যুরো সংখ্যাতত্ত্ব বলে, দেশের ৫২ ভাগ মানুষ জানেন না বিজয় দিবস কি? এর কারণ কিছু নয়, সর্ব পর্যায়ে, সর্বস্তরে ইতিহাস পড়ানোতে অনীহা। কারণ, পাকিস্তানে ইতিহাস পড়ানো হয় না। এখানে কেন হবে? তথাকথিত ইসলামী হুঙ্কার উঠলেই সরকার হাঁটু গেড়ে বসে। এটি খুবই ইন্টারেস্টিং যে, ১৪ দল বিভিন্নভাবে জামায়াত-বিএনপির এজেন্ডাই পালনে আগ্রহী। বিএনপি-জামায়াতের ক্ষমতায় যাওয়ার কী দরকার? আরও অনেক কিছুর উল্লেখ করা যায়। কিন্তু স্পেসের অভাব ও ভীতু হওয়ার কারণে পরিধি বাড়ালাম না। এটা মানি, বাংলাদেশে আবার অন্যায্য বা অন্যায় কিছু একেবারে বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেয়া হয় না। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। নফরদের নাম উজ্জ্বল করার বিপরীতেও দু’ একজন করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। হাইকোর্টের আদেশও যখন দু’বার মানা হলো না এবং যখন প্রায় ব্যর্থ, তখন দেখি নতুন একটি সংবাদপত্র ‘প্রতিদিনের সংবাদ’ ‘রাজাকারের দিবস’ নামে প্রথম পাতায় একটি কলাম শুরু করে। পত্রিকাটির সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা আবু সাঈদ খান। তার সঙ্গে যোগাযোগ করে আমি নফরদের কিছু নাম যোগাড় করি সেগুলো বিজয় দিবসেও জ্বলজ্বল করবে। এবং আরেকটি সম্পূরক রিট করি। আদালত আবারও একই নির্দেশ দেয় আগেও যখন তা কার্যকর হয়নি এখনও হবে কিনা সন্দেহ। তবুও আশা করতে দোষ কি! আমার জানা মতে যে কুড়িজনের নামে সড়ক-স্থাপনা-ফলক আছে তারা হলেনÑ স্বাধীনতাবিরোধী। তারা হলেনÑ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দ-প্রাপ্ত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী ও নেতা আবদুল আলিম, মৃত্যুদ- কার্যকর করা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ কায়সার আলী, মৌলভীবাজারের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এনএম ইউসুফ আলী। অপরদিকে সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিস, ফরিদপুরের আবদুর রাজ্জাক মিয়া, মৌলভীবাজারের মাহতাব উল্লাহ, গাইবান্ধার আবদুল আজিজ (ঘোড়া মারা আজিজ) ও আবদুল জব্বার, নোয়াখালীর তরিকুল্লাহ, ঝিনাইদহের মিয়া মনসুর আলী, কুমিল্লার রেজাউর রহমান, নাটোরের আবদুর সাত্তার খান মধু মিয়া ও কাছির উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণের মোঃ তামিমুল এহসান ও মোহাম্মদ উল্লাহ (হাফিজ্জি হুজুর), নেত্রকোনার আবদুর রহমান, মেহেরপুরের মিয়া মনসুর আলী ও সাবদার আলী এবং ঝিনাইদহের সফি আহমেদ। পরের দিন মানবকণ্ঠ ও জনকণ্ঠের সংবাদ অনুযায়ী শাহজাদপুরে সাইফুদ্দিন এহিয়া খান মজলিসের নামফলক অপসারণ করে ছাত্রলীগ। সারাদেশে তরুণদের এ ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল যা পালনে তারা ব্যর্থ হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল নামে যে সংস্থা আছে তাদের এ ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেয়া উচিত ছিল। দেয়নি, কারণ তারা শুধু সুবিধা পেতে আগ্রহী, আদর্শিক বিষয়ে নয়। বামপন্থী বা কি বলে যেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোও নয়। কারণ, মফস্বলের কোন কিছু নিউজ হয় না। এসব বোধ থেকে নতুন প্রজন্ম কতটা দূরে চলে গেছে এটি তার উদাহরণ। শুধু নতুন প্রজন্ম নয়, মুক্তিযোদ্ধা বলে যারা পরিচিত তারাও। তবে আশার খবর, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে [আবারও সেই প্রধানমন্ত্রী] ৯টি কলেজের নাম পরিবর্তনের কথা বলা হয় যেগুলো নফরদের নামে করা হয়েছে। সেগুলো হলোÑ টাঙ্গাইলের বাসাইলের এমদাদ হামিদা ডিগ্রী কলেজ, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের ধর্মপুর আবদুল জব্বার ডিগ্রী কলেজ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের মাওলানা সাইফুদ্দিন এহিয়া ডিগ্রী কলেজ, নাটোরের নলডাঙ্গার ডাঃ নাসির উদ্দিন তালুকদার কলেজ, সাতক্ষীরা সদরের বাটকেখালী এমএ গফুর মডেল কলেজ, মেহেরপুরের মুজিবনগর আনন্দবাস মিয়া মনসুর একাডেমি, হবিগঞ্জের মাধবপুরের সৈয়দ সঈদ উদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, চট্টগ্রামের লোহাগড়ার মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং রাঙ্গুনিয়ার সেলিনা কাদের চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ। [যুগান্তর, ৭.১২.১৬] একটি বিষয় নিজেদের কাছে পরিষ্কার হওয়া উচিত। নফর সংস্কৃতি ও উন্নয়ন এজেন্ডা একসঙ্গে চলে কিনা। পদ্মা সেতু হলো, জিডিপি বাড়ল, একটার জায়গায় বছরে দুটি জামা পরলাম কিন্তু মানসিকভাবে নফরই রয়ে গেলাম, সমাজ-সংস্কৃতিতে নফর সংস্কৃতি পরিপুষ্ট করলাম বা পাকিস্তানী মানসকেই পুষ্ট করলাম তা হলে তো প্রশ্ন উঠতেই পারে, নফরই যদি থাকব তাহলে ১৯৭১ সালের দরকার কি ছিল?
×