ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিপিএলে নবীন প্রতিভা

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

বিপিএলে নবীন প্রতিভা

সদ্যসমাপ্ত বিপিএল টুর্নামেন্ট থেকে আমাদের অর্জন অসামান্য। এবার বিপিএল স্থানীয়দের দাপটই ছিল বেশি। জাতীয় দলের তারকা খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলো ছড়িয়েছেন নবীনরাও। অনেক ‘অচেনা’ খেলোয়াড় চলে এসেছেন পাদপ্রদীপের আলোয়। টুর্নামেন্টে স্থানীয় নবীন খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্স দেখে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন লঙ্কান কিংবদন্তি ক্রিকেটার সাঙ্গাকারা। বিপিএল ফাইনালের নায়ক ফাইনাল ম্যাচ শেষে বলেই ফেললেন, ‘যেভাবে বাংলাদেশে দুর্দান্ত তরুণ খেলোয়াড়রা উঠে আসছে কিছুটা ভয়ই পেয়েছি! শ্রীলঙ্কার জন্য আগামী মার্চে সিরিজটা কঠিনই হবে।’ সাঙ্গাকারা উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের তরুণ প্রতিভা নিয়ে, ‘বাংলাদেশের স্পিন মজুদ ভাল, পেস আক্রমণ ভাল। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এসেছে ফিটনেসে। যেভাবে তরুণ ব্যাটসম্যান বেরিয়ে আসছে, সেটা খুবই রোমাঞ্চকর বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে তারা দুর্দান্ত।’ ঢাকা ডিনামাইট, রাজশাহী কিংস, চট্টগ্রাম ভাইকিংস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস, বরিশাল বুলস, রংপুর রাইডার্স, সিলেট সুপারস্টার্সÑ দেশের সাতটি জেলার নামের সঙ্গে কৌতূহলোদ্দীপক অভিধা বা বিশেষণ জুড়ে দিয়ে তৈরি নামগুলোই জানিয়ে দিচ্ছে এ প্রতিযোগিতার স্বাতন্ত্র্য। দেশী-বিদেশী ক্রিকেট তারকার সমন্বয়ে গড়া এমন সাতটি দল নিয়ে মাসাধিককাল আগে শুরু হয় বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল)। এটি ছিল বিপিএলের চতুর্থ আসর। সাতটি ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক দলের সমন্বয়ে ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো বিপিএল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস। পরের আসরেও শিরোপা ঘরে তোলে তারা। বর্তমান বিশ্বের ক্রিকেট পরাশক্তি ভারতে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ। গোটা বিশ্বের শক্তিমান দেশগুলোর ক্রিকেট তারকাদের অংশগ্রহণে অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জমজমাট ক্রিকেট আসর আইপিএলের সাফল্য অনেক। ওই আসরে বাংলাদেশের একাধিক ক্রিকেটার অংশ নিয়ে দেশের গৌরব বাড়িয়েছেন। আমাদের সাকিব ও মুস্তাফিজ খেলেছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা সব খেলোয়াড়ের সঙ্গে। এর ফলে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতার ঝুলিতে মূল্যবান সংগ্রহের সমান্তরালে আত্মবিশ্বাস ও উদ্যম বহুলাংশে বেড়েছে। এটি খেলোয়াড়ি সত্তার জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। বিপিএল চালু হওয়ায় বিদেশী খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই টিমে খেলার সুযোগ আরও বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে আমাদের ক্রিকেটারদের উন্নতি ও দেশের ক্রিকেটের মানের উৎকর্ষ ঘটেছে। এভাবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যত বেশি আন্তর্জাতিক স্বাদ ও রঙের সংযুক্তি ঘটবে, ততই এগিয়ে যাবে খেলাধুলা। টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ক্রিকেটারদের স্বল্প সময় ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় কিছু করার এক দারুণ লড়াই। এতে দায়িত্বশীলতা, পেশাদারিত্ব এবং টিমওয়ার্কের চূড়ান্ত রূপ প্রত্যক্ষ করা যায়। আর সে কারণেই আইপিএল এবং বিপিএল ক্রিকেট দর্শকদের কাছে এত বেশি আকর্ষণীয়। বিদেশী খেলোয়াড়দের সহযোগী (টিমমেট) এবং প্রতিপক্ষ হিসেবে যত বেশি টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া যাবে ততই দেশীয় ক্রীড়ার উৎকর্ষ ঘটবে। বিশেষ করে দেশের মাটিতে এ ধরনের আয়োজনে খেলোয়াড়রা আরও বেশি উদ্বুদ্ধ ও সমৃদ্ধ হওয়ার সুযোগ পান। শুধু ক্রিকেটেই নয়, দেশের মাটিতে ফুটবলের মতো জনপ্রিয় খেলায়ও আন্তর্জাতিক স্বাদ ও রঙের দেখা মিলেছে সাম্প্রতিককালে। দেশের ফুটবলামোদী মানুষের জন্য আশা ও আনন্দের কথা দেড় দশক পরে হলেও গত বছর থেকে আবার শুরু হয়েছে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ। এ টুর্নামেন্ট সর্বশেষ হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। সেটি ছিল দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কাপ। এ ধরনের টুর্নামেন্ট এবং বিপিএল আয়োজনে ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ক্রীড়ার বিশ্বমান অর্জনের জন্য এটি আবশ্যক। চ্যাম্পিয়ন ঢাকা ডিনামাইট টিমকে আমাদের অভিনন্দন।
×