ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সুচির প্রতি জাতিসংঘ

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

সুচির প্রতি জাতিসংঘ

মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যেতে সুচির প্রতি জাতিসংঘের আহ্বানটি তাৎপর্যপূর্ণ। রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইনের সংখ্যালঘুদের ওপর সেনাবাহিনীর নতুন করে হামলা ও দমন-পীড়নের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের এই উদ্যোগ। সরকারপ্রধান হওয়া সত্ত্বেও শান্তিতে নোবেলজয়ী সুচি রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে অদ্যাবধি কোন দৃশ্যমান ব্যবস্থা না নেয়ায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পড়েছেন ব্যাপক সমালোচনার মুখে। সুচির তীব্র সমালোচনায় ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদাদো। মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে ৭০ ব্রিটিশ এমপির আহ্বানটিও গুরুত্বপূর্ণ বৈকি। রাখাইন রাজ্যে দুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তার সুযোগ দিতে ১৪টি দেশ অনুরোধ জানিয়েছে মিয়ানমার সরকারের প্রতি। অতঃপর সে দেশের সরকার যদি বিশ্ব সম্প্রদায়ের আহ্বানে যথাযথ সারা না দেয় এবং সহযোগিতা না করে তাহলে পুনরায় গভীর সঙ্কটে নিপতিত হবে দেশটি। এতে করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুচির ভাবমূর্তিও ক্ষুণœ হবে দারুণভাবে। রাখাইন রাজ্যে সঙ্কট অবশ্য একদিনে সৃষ্টি হয়নি। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী দেশটির রাখাইনে কয়েক লাখ মুসলিম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গার বসবাস, যারা জন্ম ও উত্তরাধিকার সূত্রে মিয়ানমারের নাগরিক। তবে কোন অজ্ঞাত কারণে মিয়ানমারের বিশেষ করে ক্ষমতাবান সামরিক বাহিনী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত সরকার রোহিঙ্গাদের সে দেশের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। বরং তাদের দেশ ছাড়া করতে চায়। কারণে-অকারণে সুযোগ পেলেই সে দেশের সামরিক ও পুলিশ বাহিনী রোহিঙ্গাদের বসতিতে নৃশংস হামলা চালায়, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে। পাশাপাশি হত্যা-নির্যাতন-নারী ধর্ষণসহ বসতি উচ্ছেদ তো আছেই। বলা যায়, এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। নিকট অতীতে এ ধরনের হামলা ও নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ তার সীমিত সাধ্য ও সম্পদ নিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং সে দেশে প্রত্যাবর্তনে যথাসাধ্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে। তবে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তেমন উদ্যোগ সেভাবে কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। সর্বশেষ গত ৯ অক্টোবর কথিত রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের নামে মিয়ানমার পুলিশের ৯টি ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে কয়েকজন পুলিশকে হত্যা করার প্রেক্ষিতে সেখানে সৃষ্টি হয় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। নতুন করে শুরু হয় রোহিঙ্গা সঙ্কট ও সমস্যা। ইতোমধ্যে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গা চোরাইপথে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশের টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার ও অন্যত্র। কিছু গেছে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়। এমতাবস্থায় স্বভাবতই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। সে অবস্থায় বেসামরিক সরকারপ্রধান হিসেবে চাপ ও প্রত্যাশা গিয়ে পড়েছে অং সান সুচির ওপর। শান্তিতে নোবেলজয়ী গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী আট মাস আগে সরকারপ্রধান হিসেবে শপথ নিলেও মিয়ানমারে সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও প্রভাবশালী। সে অবস্থায় তাদের সামলে রাখাইনের রোহিঙ্গাসহ দেশজুড়ে বিভিন্ন সশস্ত্র নৃগোষ্ঠী ও আদিবাসীদের সমন্বয়ে কিভাবে শান্তিচুক্তি করতে পারেন সুচি, সেটাই এখন দেখার বিষয়। অদক্ষ ও অনভিজ্ঞ প্রশাসন দিয়ে মিয়ানমারের পরিস্থিতি সামলানো দিন দিনই কঠিন হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়াতে হবে অবশ্যই। তা না হলে হুমকির সম্মুখীন হবে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের অভিমুখী অভিযাত্রাও।
×