ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ ॥ গোয়েন্দা রিপোর্ট নিয়ে ব্যঙ্গ করলেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট

ট্রাম্প-সিআইএ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

ট্রাম্প-সিআইএ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্কে দূরত্ব তৈরির আভাস পাওয়া গেছে। সদ্য অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কথিত রুশ হস্তক্ষেপের ইস্যুতে মতানৈক্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ট্রাম্পকে জেতাতে রুশ হ্যাকাররা হস্তক্ষেপ করেছে- কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর এ রকম একটি রিপোর্ট প্রকাশের পর শনিবার সেটি নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। রিপাবলিকানরাও এদিন সিআইএর গোপন মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি প্রত্যাখ্যান করেন। খবর এএফপি ও ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইনের। ট্রাম্প ও শীর্ষ মার্কিন গোয়েন্দাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে কর্মকর্তাদের কেউ কেউ একে কয়েক দশকের মধ্যে প্রশাসনের জন্য জটিল সমস্যা বলে অভিহিত করেছেন। বিগত অনেক বছরের মধ্যে এমন জটিল অবস্থা আর দেখা দেয়নি। শুক্রবার ওয়াশিংটন পোস্টে খবর ছাপা হয় যে, এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যেভাবে হোক রাশিয়া যে হস্তক্ষেপ করেছে সে ব্যাপারে সিআইএ নিশ্চিত। তবে রাশিয়া সম্ভবত কোন অসৎ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এটি করেনি, কেবলমাত্র ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ানোই তাদের উদ্দেশ্য ছিল। এ রিপোর্ট প্রকাশের পর ট্রাম্প যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন তাতে তার সঙ্গে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলতে পারে। সরকারের ১৬টি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে তার সম্ভাব্য নয়া প্রশাসন কিভাবে কাজ করবে তা নিয়ে এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাস দমন এবং সাইবার যুদ্ধের জন্য প্রশাসনকে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ওপর বিশেষভাবে নির্ভর করতে হয়। ট্রাম্পের অন্তর্বর্তী দলের কর্মকর্তারা শুক্রবার সিআইএর ওই মূল্যায়ন প্রতিবেদনকে এর আগে তাদের দেয়া ইরাকের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র থাকার তথ্যের মতো ভুয়া বলে উড়িয়ে দেন। রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির মুখপাত্র শন স্পাইসার সিএনএনকে বলেছেন, ‘গোয়েন্দা রিপোর্টটি ভুল। এরা হচ্ছেন ওই সব লোক যারা বলেছিলেন সাদ্দাম হোসেনের কাছে ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে।’ ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ বিষয়ক অন্তর্বর্তী দলের কর্মকর্তারা এরই মধ্যে গোয়েন্দাবিরোধী প্রচারণা শুরু করেছেন। নিউইয়র্ক টাইমসে এ সম্পর্কিত প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে রুশ হ্যাকাররা হস্তক্ষেপ করেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নিশ্চিত। তারা রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির কম্পিউটার সিস্টেমে ঢুকেছিল, ডেমোক্র্যাটিক পার্টিরও অনুরূপ সিস্টেমে হাত দিয়েছিল। কিন্তু তথ্য খোয়া গেছে কেবল ডেমোক্র্যাটদের।’ ট্রাম্পের লোকজন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে যেভাবে তুলোধোনা করছেন তাকে পরবর্তী প্রশাসনের জন্য একটি অশনি সঙ্কেত বলেই মনে করেন সিআইএর কাউন্টার টেররিজম সেন্টারের সাবেক ডেপুটি ডিরেক্টর পল পিলার। তিনি বলছেন, ট্রাম্পের লোকজন যেভাবে কথাবার্তা বলছেন তাতে ভবিষ্যত প্রেসিডেন্ট এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে। ১৯৭০-এর দশকে সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে গোয়েন্দাদের সম্পর্কে দূরত্ব ছিল। তবে পিলার মনে করেন, ট্রাম্পের গোয়েন্দাদের কেবল দূরত্ব নয় অনেক তিক্ততা তৈরি হতে পারে। সিআইএর কর্মকর্তারা সিনেটের এক রুদ্ধদার বৈঠকে বলেছেন, ‘এটি স্পষ্ট যে, রাশিয়া চাইছিল ট্রাম্প যেন জেতেন। এখন অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে তাতে মনে হচ্ছে ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে গোয়েন্দাদের কাজ করতে সমস্যা হবে। ২০ জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্টে অভিষেক হওয়ার পর আমরা একটি অনিশ্চয়তার যুগে প্রবেশ করব।’ এবারের নির্বাচনে সম্ভাব্য রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তদন্তের নির্দেশ দেয়ার পর ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের ডিরেক্টর জেমস ক্ল্যাপারের নেতৃত্বে গোয়েন্দারা এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ২০ জানুয়ারির আগেই তদন্ত শেষ করতে তাদের বলা হয়েছে। রিপোর্টটি প্রকাশিত হলে ট্রাম্পের সঙ্গে গোয়েন্দাদের সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। এছাড়া এর মাধ্যমে ট্রাম্পের বাছাই করা সিআইএর পরবর্তী প্রধান মাইক পম্পেওর (কানসাস থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান সিনেটর) কাজও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। কারণ তাকে তখন সংস্থা ও সরকারের দ্বিমুখী চাপ সামাল দিতে হবে।
×