ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দিয়াজের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

দিয়াজের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং ভিসেরা প্রতিবেদন পাওয়ার পরই জানা যাবে। এমন কথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ সোহেল মাহমুদ। রবিবার বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে দিয়াজের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড। এদিকে নিহত দিয়াজের মা জাহিদা আমিন চৌধুরীর আহাজারিতে মর্গের বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। তিনি বারবার বলছিলেন, নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে আমার ছেলে দিয়াজকে লাশ হতে হলো। আমার ছেলের খুনীরা কি গ্রেফতার হবে না? সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, আত্মহত্যা না হত্যাÑ এমন প্রশ্ন ওঠায় আদালতের নির্দেশে শনিবার সকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদসংলগ্ন কবরস্থান থেকে ছাত্রলীগ নেতা দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের জন্য ঢামেক মর্গে পাঠানো হয়। রবিবার দুপুর ২টা থেকে দিয়াজের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত শুরু করেন মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডাঃ সোহেল মাহমুদ, ফরেনসিক বিভাগের প্রভাষক প্রদীপ বিশ্বাস এবং কবীর সোহেল। বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা তিন সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড ময়নাতদন্ত শেষে করেছি। যা পেয়েছি তা পর্যালোচনা করব। ঘটনাস্থল সরেজমিন পরিদর্শন করব। প্রথম দফা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করব। এরপর ওই ঘটনায় যারা সাক্ষী আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। তিনি জানান, দিয়াজের ভিসেরা, দাঁত ও গলার টিস্যু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের হিস্টোপ্যাথলজি বিভাগে পাঠানো হয়েছে। সেখানে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। প্রথম ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার কথা বলা হলেও পরিবারের দাবি এটা হত্যাকাণ্ড- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সোহেল মাহমুদ বলেন, আমরা আঘাতের চিহ্ন পেয়েছি। তবে এখন আমরা কিছুই বলব না। ঘটনাস্থল দেখে আসার পর প্রতিবেদন দেব। এদিকে, দুপুরে মর্গের বাইরে দিয়াজের মা জাহিদা আমিন চৌধুরী আহাজারি করছিলেন। ছেলের শোকে তিনি বারবার বিলাপ করে বলছিলেন, ওরা আমার ছেলেকে বাঁচতে দিল না। তিনি সংবাদিকদের জানান, ছেলে দিয়াজ চাকরিতে যোগদানের আগেই আমাকে বাংলাদেশ ব্যাংক দেখিয়ে বলেছিল, মা খুব শীঘ্রই এখানে জয়েন করব। তুমি দোয়া করো। আমিও তো ওকে মনভরে দোয়া করেছিলাম। কিন্তু নোংরা রাজনীতির শিকার হয়ে আমার কলিজার টুকরা দিয়াজকে লাশ হতে হলো। আমার ছেলের খুনীরা কি গ্রেফতার হবে না? এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জাহিদা আমিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলের খুনীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশ জেনেশুনেও তাদের গ্রেফতার করছে না। পুলিশের এহেন নিষ্ক্রিয়তার কারণে আমার পরিবারের অন্য সদস্যরাও খুন হতে পারে। তিনি বলেন, দিয়াজ আত্মহত্যা করেনি। আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। কারণ এবার ডাক্তার আঘাতের চিহ্ন পাওয়ার কথা বলেছেন। আমি আশাবাদী, এবার ময়নাতদন্তে সঠিক তথ্য আসবে। প্রমাণিত হবে যে আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ সময় দিয়াজের বড় বোন জোবাইদা সারোয়ার চৌধুরী ও ভগ্নিপতি উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি দিয়াজ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। গত ২০ নবেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর প্রবেশ গেটের সামনে অবস্থিত বাসার নিজ কক্ষ থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে তার লাশের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে জানানো হয়, দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন। এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে নতুন করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৪ নবেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দের আদালতে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন বাদী হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আনোয়ার চৌধুরী ও চবি ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ৬ ডিসেম্বর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দে তদন্তের জন্য দিয়াজের মরদেহ তোলার আদেশ দেন। একই সঙ্গে তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ টিম গঠন করে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার জন্য ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধানকে নির্দেশ দেয়া হয়। পরে মঙ্গলবার দিয়াজের লাশ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জামে মসজিদসংলগ্ন কবরস্থান থেকে উঠিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে আনা হয়।
×