ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে জাপান

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে জাপান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ভ্রমণে জাপানি নাগরিকদের ওপর যে সতর্কতামূলক পরামর্শ বা নিষেধাজ্ঞা ছিল তা প্রত্যাহার করে নিয়েছে দেশটি। তিনি বলেন, হলি আর্টিজান ঘটনার পর বাংলাদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তা ইস্যুতে ইতোমধ্যে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপে তাঁরা আশ্বস্ত হয়েছেন। তাই জাপানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়নে এখন সর্বোচ্চ জোর দিচ্ছে দুই দেশ। অর্থমন্ত্রী বলেন, চলমান যেসব জাপানি প্রকল্প আছে, সেসব প্রকল্পে কাজ করার জন্য শীঘ্রই জাপানি নাগরিকরা বাংলাদেশে আসবেন। রবিবার সচিবালয়ের এক সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এসব কথা জানান। এর আগে অর্থমন্ত্রী তিন দিনের জাপান সফর শেষে শনিবার দেশে ফিরে আসেন। এই সফরে তিনি জাপানের অর্থমন্ত্রী তারো আসো এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁর এ সফর নিয়েই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। মুহিত বলেন, বাংলাদেশে কাজ করার ক্ষেত্রে জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে। এখন থেকে তাদের নিরাপত্তার আর কোন অভাব হবে না। যেখানে যে ধরনের সহযোগিতা ও নিরাপত্তার প্রয়োজন হবে সেই মোতাবেক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তিনি বলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার ঘটনার পর বাংলাদেশে চলাফেরা কিংবা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানিদের যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটা এখন আর নেই। জাপান সফরের সময় সে দেশের অর্থমন্ত্রী এবং জাইকার প্রেসিডেন্ট দুজনের সঙ্গেই আমার ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। তারা আমাদের জানিয়েছে, বাংলাদেশে বসবাসরত আমাদের নাগরিকরা এখন মুক্ত। হলি আর্টিজানের ঘটনার পর আমরা তাদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে বলেছিলাম। ওই ঘটনার পর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকারের যে উদ্যোগ নিয়েছিল তাতে জাপান সরকার সন্তুষ্ট। আমাদের আস্থা ফিরে এসেছে এবং ভয়-ভীতি কেটে গেছে। তাই শীঘ্রই জাইকাসহ জাপানি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। অর্থমন্ত্রী বলেন, জাপানের ব্যবসায়ীরা তো অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে আসা-যাওয়া করতেন। মাঝখানে কিছুটা ছেদ পড়েছিল। এখন সেটা স্বাভাবিক। ব্যবসায়ীদের মতো সরকারী পর্যায়েও অচিরেই আসা-যাওয়া শুরু হবে। এদিকে, চলতি ডিসেম্বর মাসের ৫-৯ তারিখ পর্যন্ত জাপান সফর করেছেন অর্থমন্ত্রী। জাপানের নিষেধাজ্ঞা কেমন ছিল-সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, এক্ষেত্রে লিখিত কোন স্টেটমেন্ট ছিল না। তবে দেশটির নাগরিকদের সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবরে রংপুরে জাপানি নাগরিক কুনিও হোশিকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনার পরও বাংলাদেশে জাপানি নাগরিকদের ভ্রমণ বিষয়ে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্কতামূলক পরামর্শ জারি করে। তাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া জাপানি নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ না করার জন্য বলা হয়। এছাড়া হলি আর্টিজানের জঙ্গী হামলায় বেশ কয়েকজন জাপানি প্রকৌশলী নিহত হলে দেশটির পক্ষ থেকে তাদের নাগরিকদের চলাচলের ওপর সতর্কতামূলক পরামর্শ বা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। অর্থমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ওই ঘটনার পর বাংলাদেশে জাপানি কোন প্রকল্পের কাজ আটকে ছিল না। আমরা চেয়েছি বাংলাদেশে বিনিয়োগের মার্কেটটি বড় করতে। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্য এখন সহজ হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ানোর বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে জাপান সরকার দেশের বড় বড় প্রকল্পে বিনিয়োগে আগ্রহী হয়েছে। এসব বিনিয়োগ দ্রুত আনা এবং তা বাস্তবায়নে এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য দক্ষ শ্রমিককের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে দক্ষ শ্রমিক অভাব রয়েছে। এ কারণে আগামী বাজেটে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নে গুরুত্ব দিবে সরকার। রিজার্ভ চুরির ব্যাপারে সিআইডি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে সিআইডির প্রতিবেদন আমি দেখিনি। কাজেই ও বিষয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না। সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মাহবুব আহমেদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিনসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা। পরিবেশবান্ধব ইট তৈরিতে গুরুত্বারোপ ॥ দেশে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরিতে গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রবিবার রাজধানীর লেক-শোর হোটেলে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেডের উদ্যোগে ‘গ্রিন ব্রিক কনভেনশন ২০১৬’ নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী এস.এম ফরমানুল ইসলামের সভাপতিত্বে অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত প্রধান অতিথি হিসেবে সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মুঞ্জু, বাংলাদেশ ব্যাংক গবর্নর ফজলে কবির, পরিবেশবিদ ড. আতিক রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র মাহবুব আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরি এবং এর ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সম্মেলনে গুরুত্বারোপ করা হয়। প্রসঙ্গত, গত ২০১৫ সাল থেকে সরকারীভাবে পুরনো পদ্ধতির ইটভাঁটির লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রেখেছে সরকার। কিন্তু তারপরও পরিবেশবান্ধব ইট তৈরিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। পরিবেশবিদ ড. আতিক রহমান বলছেন, পরিবেশবান্ধব ইট ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ রক্ষার পাশাপাশি মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকিও অনেক কমবে। প্রচলিত ইটভাঁটির তৈরি ইটের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব ইট তৈরির বিষয়ে একটি প্রচার চালাচ্ছে সরকার। এ উপলক্ষেই একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে সরকারী সংস্থা, বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড লিমিটেড। আইনের আওতায় পুরনো প্রযুক্তির ইটভাঁটির লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে সরকার এবং পুরনো ইটভাঁটিগুলোকে ধাপে ধাপে বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন, প্রচলিত ইটভাঁটির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করায় জমির উর্বরতাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে ইটভাঁটি মালিকরা এখনও পর্যন্ত নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। একটা সাধারণ ইটের ভাঁটিতে যদি ১ কোটি টাকা খরচ হয় তবে এসব ইটের ভাঁটিতে ৪০-৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। মালিকদের এজন্য সরকার স্বল্পসুদের ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করছে।
×