ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের ৭ দিন আগে সেনা মোতায়েন চান সাখাওয়াত

এবার নির্বাচিত হলে ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে নেব ॥ আইভী

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১২ ডিসেম্বর ২০১৬

এবার নির্বাচিত হলে ওয়াসা সিটি কর্পোরেশনের অধীনে নেব ॥ আইভী

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের আর মাত্র ৯ দিন বাকি। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা দিন-রাত প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এমনকি প্রার্থীদের পক্ষে তাদের আত্মীয়-স্বজন ও পরিবারের সদস্যও প্রচার চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে ও বিএনপির প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের পক্ষে তাদের কেন্দ্রীয় নেতারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রচার চালাচ্ছেন। বসে নেই ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের ১৯৪ কাউন্সিলর প্রার্থীও। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী ডাঃ আইভী রবিবার গণসংযোগকালে বলেন, নারায়ণগঞ্জে আইভী ও নৌকার জন্য আওয়ামী লীগ- বিএনপি একাকার হয়ে গেছে। এদিকে বিএনপি দলীয় প্রার্থী এ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আওয়ামী লীগ প্রার্থী সেনাবাহিনী মোতায়েন হোক তা চান না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভোটের ৭ দিন আগে তিনি সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য আহবান জানান। একই সঙ্গে অর্থ, প্ররোচণা ও আবেগের বশবর্তী না হয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে ভোট না দেয়ার অহ্বান জানিয়েছেন তারা। নারায়ণগঞ্জে আইভী ও নৌকার জন্য আওয়ামী লীগ-বিএনপি একাকার হয়ে গেছে- আইভী আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী রবিবার সিটি কর্পোরেশনের ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডে প্রচার ও গণসংযোগ করেছেন। গণসংযোগকালে আইভী বলেন, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ-বিএনপি একাকার হয়ে গেছে আইভী ও নৌকার জন্য। এখানে কোন দল নেই, এখানে কোন মত নেই। কাজ করেছি সকল দলের উর্ধে উঠে। সুতরাং এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেই। আপনি নারায়ণগঞ্জের পথেঘাটে হাঁটুনÑ আপনি দেখুন কোথাও আইভী ও নৌকার জন্য আওয়ামী লীগ বিএনপির ডিফারেন্স (পার্থক্য) খুঁজে পাবেন কিনা। সুতরাং, বিভেদ যিনি (বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াত) তুলছেন সে কতটুকু বিএনপি, নিজেকে জিজ্ঞেস করুক। ডাঃ আইভী রবিবার সকাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের ২৭ নং ওয়ার্ডের মদনপুর, মুরাদপুর, কুড়িপাড়া ও ফুলহর এলাকায় গণসংযোগ করেন। বিকেলে ডাঃ আইভী ২৬নং ওয়ার্ডের ঢাকেশ্বরী ও রামনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। ডাঃ আইভী গণসংযোগে গেলে নারী ও পুরুষ ভোটাররা ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেন। এ সময় তারা ফুলের তৈরি নৌকা হাতে তুলে দেন এবং ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে স্বাগত জানান। অনেক প্রবীণ নারী ভোটার আইভীকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এবং অনেকেই আইভীকে জড়িয়ে কুশল বিনিময় করতে দেখা যায়। আইভীও এ সময় তাদের দোয়া ও ভোট চান। এ সময় নৌকা, নৌকা, আইভী আপার মার্কা নৌকাসহ নানা ধরনের স্লোগানে এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে। এদিকে ডাঃ আইভীর পক্ষে নগরীতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রচারে অংশ নেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ইসহাক আলী পান্না, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুর রহমান চৌধুরী নওফেল, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনা মোতায়েনের দাবি সাখাওয়াতের বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান ১৮নং ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীÑউনি সেনাবাহিনী মোতায়েন হোক, সেটা উনি চান না। আমি মনে করি সিইসির যে সিদ্ধান্ত এই সিদ্ধান্তটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর যে কথা সেটার প্রতিফলন উনি ঘটিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুনরায় আমি বলব অবিলম্বে নির্বাচনের সাত দিন আগে নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনী নিয়োগ দেয়া হোক। আমি বলতে চাই শামীম ওসমান যা করুক, নারায়ণগঞ্জের মানুষ এই নির্বাচনে খুব আশা নিয়ে মাঠে নেমেছে। মানুষের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা আছে। শামীম ওসমান একজন জনপ্রতিনিধি, আমাদের নির্বাচনী আইন অনুযায়ী উনি এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না এবং নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারেন না। সুতরাং আমি মনে করি, এ ব্যাপারে উনি নিজেই সচেষ্ট হবেন। নির্বাচন কমিশন আছেন এ ব্যাপারে তারা কি করবে তা সিদ্ধান্ত ওনাদের নিতে হবে। অন্যথায় যেই নির্বাচন এই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমি মনে করি না। সাখাওয়াত হোসেন খান সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর ১৮নং ওয়ার্ডের শীতলক্ষ্যা, মাছুয়া বাজার, ডিয়ারা, তোলারাম কলেজের মোড় ও বাপ্পী চত্বর এলাকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়াও তিনি বিকেলে ২৬নং ওয়ার্ডের মদনপুর, মুরাদপুর, কুড়িপাড়া ও ফুলহর এলাকায় গণসংযোগ করেন। এদিকে দুপুরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে গণসংযোগ করেছেন। শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্বাচন পরিচালনায় যে ব্যর্থতা রয়েছে সেটাকে মাথায় রেখে আমরা সেনা মোতায়েনের আবেদন জানিয়েছিলাম। গত নির্বাচনে আইভী যখন সরকারী দলের প্রার্থী ছিলেন না তখন তিনি সেনা মোতায়েনের দাবি করেছিলেন। সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহবান সুশাসনের জন্য নাগরিক ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে সৎ, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’। একই সঙ্গে অর্থ, প্ররোচনা ও আবেগের বশবর্তী না হয়ে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ভোট না দেয়ার অহবান জানিয়েছেন তারা। ভোটারদের পাশাপাশি প্রার্থীদের নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার আহবানসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতিও দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া নির্বাচনে আচরণবিধি মেনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহবান জানান। ভোট গ্রহণের দিন ভোট কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে কোন বিশেষ প্রার্থী বা দলের অনুগত হয়ে কাজ করতে না পারে সে ব্যাপারে বিশেষ লক্ষ্য রাখার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সুজন নেতৃবৃন্দ এ আহবান জানান। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দীলিপ সরকার। সংবাদ সম্মেলনে সিটি নির্বাচনের ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে শুধু বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী এ্যাডভোকেট মাহাবুবুর রহমান ইসমাইলের ৫ লাখ ৮১ হাজার ৮২ টাকা ঋণের বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়। আরও বলা হয়, নির্বাচনে মোট ২০১ প্রার্থীর মধ্যে ঋণ গ্রহীতা হচ্ছেন ১৮ জন। তাদের মধ্যে ৩ কাউন্সিলর প্রার্থীর কোটি টাকার ওপর ঋণ রয়েছে। এরা হলেন- ২ নং ওয়ার্ডের সোহরাব হোসেনের ২ কোটি ৬০ লাখ, ৫ নং ওয়ার্ডের গোলাম মুহাম্মদ কায়সারের ১ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৪শ’ ৮৪ ও ৬ নং ওয়ার্ডের সিরাজুল ইসলামের ১ কোটি ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৪শ’ ৩২ টাকা ঋণ রয়েছে। লিখিত বক্তব্য পাঠ শেষে নেতৃবৃন্দ আগামী ২২ ডিসেম্বর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে একটি আবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন। এছাড়া আগামী ১৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিশিষ্ট নাগরিকদের উপস্থিতিতে নির্বাচনের মেয়র প্রার্থীদের নিয়ে জনগণের মুখোমুখি অনুষ্ঠান করবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। জনতার মুখোমুখি অনুষ্ঠানে সাধারণ নাগরিকরা মেয়র প্রার্থীদের যে কোন প্রশ্ন করতে পারবেন। এর আগে একই আহবান ও বিভিন্ন দাবিতে তারা নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন।
×