ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভূঞাপুরে মসজিদের ইমামের পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত: ০২:২৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

ভূঞাপুরে মসজিদের ইমামের পরকীয়ায় বাধা দেয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ পরকীয়া প্রেমে বাধা দেয়ায় মসজিদের ইমাম স্বামীর হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে ১২ দিনের শিশু সন্তান নিয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে ফাতেমা আক্তার লিয়া (২৫) নামের এক গৃহবধু। ওই গৃহবধুকে মাথায় কুপিয়ে ও চোখ উপড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করে তার পাষন্ড স্বামী। মুমুর্ষ অবস্থায় তাকে বুধবার সকালে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। টাঙ্গাইলের ভুঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের চালমুলা গ্রামে মঙ্গলবার রাতে এ মমান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনায় হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে ওই গৃহবধুর পিতা তিনজনের বিরুদ্ধে ভুঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তবে এ ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, বিগত ২০১০ সালে ভুঞাপুরের অলোয়া ইউনিয়নের চালমুলা গ্রামের হামিদ মিয়ার ছেলে হাফেজ শফিকুল ইসলামের সাথে একই উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের বড় মেয়ে ফাতেমা আক্তার লিয়ার বিয়ে হয়। স্বামী শফিকুল ইসলাম কোরআন শরিফের হাফেজ এবং নিকলা রাইপাড়া জামে মসজিদের ইমাম। তাদের ছয় বছরের সংসারে শিশু লোভান (৫) ও ১২ দিন বয়সের লিহান নামের দুটি ছেলে সন্তান রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ইমাম শফিকুল ইসলাম পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। স্ত্রী লিয়া এতে বাধা দিলেই তাকে বেদম মারধর করে শফিকুল। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে শফিকুল ইসলামকে এক লাখ টাকা ও মেয়ের গহনা বাবদ ২ ভরি স্বর্ণ প্রদান করেন তোফাজ্জল হোসেন। বিয়ের পর কিছুদিন ভালই চলতে থাকে তাদের দাম্পত্য জীবন। বিয়ের এক বছর পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি মিলে নানা অজুহাতে অত্যাচার চালাতে থাকে গৃহবধু লিয়ার উপর। দাবি করতে থাকে মোটা অঙ্কের টাকার যৌতুক। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে আরও ৭০ হাজার টাকা দেয়া হয় স্বামী হাফেজ শফিকুল ইসলামকে। তাতেও মন ভরে না তার। দাবি করে আরও এক লাখ টাকা। ফাতেমা ওই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে তার ওপর। প্রতিনিয়তই চলতে থাকে নির্মম অত্যাচার ও নির্যাতন। গত ৩০ নবেম্বর টাঙ্গাইলের একটি ক্লিনিকে তাদের সংসারে লিয়া নামে একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। গত ৫ ডিসেম্বর সন্তান নিয়ে লিয়া ক্লিনিক থেকে বাড়িতে আসেন। গত ৬ ডিসেম্বর মঙ্গলবার রাতে সন্তান বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলেন লিয়া। রাত দুইটার দিকে পরিকল্পিতভাবে সন্তানকে দুরে ঢেলে দিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ঘুমন্ত অবস্থায় স্ত্রী লিয়াকে হত্যার চেষ্টা চালায় শফিকুল। মাথায় ও হাতে এলোপাথারী কোপাতে থাকে। এ সময় তার চোখ উপড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়। তার ডাকচিৎকারে বাড়ির ও আশপাশের লোকজন তাকে উদ্ধার করে ৭ ডিসেম্বর বুধবার সকালে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আহত গৃহবধু লিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তার স্বামী এক মেয়ের প্রতি আসক্ত। এ ব্যাপারে আমার শশুর ও শ্বাশুড়িকে বলেছি কিন্তু তারা তাদের ছেলেকে প্রশ্রয় দিয়েছে। আমি বাধা দেয়ায় আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। নির্যাতিত গৃহবধু লিয়ার মা হালিমা আক্তার জানান, মসজিদের ইমাম বলে তাকে বিশ্বাস করে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। সে এতো নিষ্ঠুর ও পৈশাচিকভাবে আমার মেয়ের ওপর নির্যাতন করেছে যে যেকেউ দেখলে গা শিউরে উঠবে। শুধু আল্লাহ আমার মেয়েকে বাঁচিয়েছেন। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই। টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তত্ববাবধায়ক ডাঃ পুতুল রায় বলেন, মাথার বিভিন্নস্থানে তাকে কোপানো হয়েছে। মাথায় প্রায় ৩০/৩৫টি সেলাই পড়েছে। চোখ উপড়িয়ে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। চোখের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ। প্রসূতি একজন মাকে এইভাবে অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে যা চিন্তা করাও যায় না। এ ঘটনায় নির্যাতিত ওই গৃহবধুর পিতা তোফাজ্জল হোসেন বাদি হয়ে লিয়ার স্বামী শফিকুল ইসলাম, শ্বশুর হামিদ মেলেটারী ও শ্বাশুড়ী রোকেয়া বেগমকে আসামী করে ভুঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ বিষয়ে ভুঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একে এম কাউছার চৌধুরী জানান, হত্যার উদ্দেশ্যেই তাকে উপর্যপুরি কোপানো হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই বাড়ির সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। আসামীদের দ্রুতই গ্রেফতার করা হবে।
×