ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দোয়ারাবাজার থানার ওসির সিন্ডিকেট চক্রের ‘বন্দেহরি’ হরিলুট

প্রকাশিত: ০১:৫০, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

দোয়ারাবাজার থানার ওসির সিন্ডিকেট চক্রের ‘বন্দেহরি’ হরিলুট

নিজস্ব সংবাদদাতা, সুনামগঞ্জ ॥ সুনামগঞ্জের বন্দেহরিতে চলছে ওসির নেতৃত্বে হরিলুট। দোয়ারাবাজার-ছাতক উপজেলার মধ্যবর্তী স্থানে ‘বন্দেহরি গ্রুপ’ জলমহালের অবস্থান। এই জলমহালটিতে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ মৎস্যজীবিরা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আতাত করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে জলমহাল ব্যবস্থাপনার নিয়ম নীতির তুয়াক্কা না করে মাছ আহরণ করে আসছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। জেলা প্রশসনের নির্দেশে অবৈধ মৎস্যজীবিদের তালিকা করে অনুলিপি দেয়া হয় দোয়ারাবাজার অফিসার ইনচার্জকে। ওসি তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের সঙ্গে আতাত করার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে ওসির সিন্ডিকেট চক্রটি অবৈধ ভাবে দিনে ও রাতে এই জলমহালে মাছ আহরণ করে চলছে। জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়, গত বছর জলমহালটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৪২২-১৪২৭ বাংলা সনের জন্য ভূমি মন্ত্রনালয়ের বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বন্দোবস্তের জন্য দরখাস্থ আহবান করা হয়। পরে অদৃশ্য হস্তক্ষেপে জেলা প্রশাসক সাধারন টেন্ডারে জলমহালটি ইজারা বন্দোবস্তের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর শরীফপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ১০০ টাকায় বন্দোবস্ত দেয় জেলা প্রশাসন। উক্ত বন্দোবস্তের ইজারামূল্য পরিশোধ না করায় জেলা প্রশাসক সমিতির সভাপতির নামে সার্টিফিকেট মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলার বিরুদ্ধে আপীল করে ব্যর্থ হলেও সরকারী কোষাগারে এখনও রাজস্বের টাকা জমা করা হয়নি। চলতি বছরের বৈশাখের শুরুতেই ভুমি মন্ত্রনালয় “বন্দেহরি গ্রুপ” জলমহালটি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ইজারা বন্দোবস্তের টেন্ডার প্রকাশ করলে মাছিমপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ১৪২৩-১৪২৮বাংলা সনের জন্য সর্বোচ্চ ১৬ লাখ ২৩ হজার ৪৩৩ টাকায় প্রস্তাবনা দাখিল করে। যেহেতু মাছিমপুর মৎস্যজীবি সমাবয় সমিতি সর্বোচ্চ ইজারা মূল্য দাখিল করেছেন সেহেতু জেলা প্রশাসকের অক্টোবর মাসের সভার রেজুলেশনে মাছিমপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে সুপারিশ দাখিল করেন। বর্তমানে ভূমি মন্ত্রনালয়ে চলতি মাসে জলমহাল ব্যবস্থাপনা সভায় অনুমোদনের কার্য তালিকায় রয়েছে। স্থানীয় একাধিক সুত্র জানায়, দোয়ারাবাজার থানার ওসি এনামুল হক নিজেই অবৈধ মৎস্যজীবিদের একটি সিন্ডিকেট চক্র তৈরি করেছেন। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন বড় অংকের টাকা ওসি’র পকেটে জমা হয়। টাকার বিনিময়ে দোয়ারাবাজার থানার ওই কর্মকর্তা প্রকৃত মৎস্যজীবিদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। এ নিয়ে গনমাধ্যমের একধিক প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। গনমাধ্যমের এসব প্রতিবেদন আমলে নিয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দোয়ারাবাজার ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই নির্দেশ পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি সহকারি কর্মকর্তা মিহির চক্রবর্তী ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ায় গত ৬ নবেম্বর সাতজনকে অবৈধভাবে মৎস্যজীবি উলেখ করে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত জেলা প্র্রশাসক(রাজস্ব) উপজেলা নির্বাহী অফিসার দোয়ারাবাজার, অফিসার ইনাচার্জ দোয়ারাবাজার বরাবর অনুলিপি প্রেরণ করেন। অনুলিপিতে রায়নগর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান, দোয়ারাবাজার ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান মেম্বার তাজির উদ্দিন, মঈনুল ইসলাম, বকুল মিয়া, ফজল করিম, আপ্তর আলী, কাঁচা মিয়া এই সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, দোয়ারাবাজর থানা থেকে প্রায় ৫০ ফুট দুরে “বন্দেহরি গ্রুপ” জলমহালে বিশাল বাধ তৈরী করে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকার মৎস্য আহরণ করছেন স্থানীয় চক্র। অথচ উপজেলা পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারী সম্পদ লুটপাট করা হলেও এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছেন ওই কর্মকর্তা। “বন্দেহরি গ্রুপ” জলমহালে ২২টি অংশ রয়েছে। “বন্দেহরি গ্রুপ” জলমহালে দলবদ্ধভাবে জাল ফেলে মাছ ধরা হচ্ছে। এই মাছ ধরার দৃশ্য দেখলে মনে হবে এ যেন তাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে নিচ্ছে। এমনকি মারধর করে অবৈধভাবে জেলেদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে প্রায়ই মৎসজীবিরা জানায়। ওই চক্র ভাগবাটোয়ারা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন। ফলে সরকার প্রতি বছর প্রায় ২০ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ বিষয়ে বার বার গনমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মৎস্যজীবি বলেন, ওসি স্যারের রুম থেকে প্রায় ২০ ফুট দুরে বন্দেহরি গ্রুপ জলমহাল। এই জলমহালে প্রতিদিন অবৈধ ভাবে মাছ ধরে যাচ্ছে ওসির সিন্ডিকেট চক্র। আর ওসি স্যার এগুলো দেখেও না দেখার ভান করছেন। এমনকি এই বিষয়ে কেউ ওসি স্যারের কাছে অভিযোগ করলে এই অভিযোগের কথা প্রতিপক্ষের কাছে পৌছে দিয়ে সংঘবদ্ধ চক্র দিয়ে লাঞ্চিত করা হয়। যার ফলে আমাদের মত খেটে খাওয়া মৎস্যজীবিরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। এ ব্যাপারে দোয়ারাবাজার অফিসার ইনচার্জ এনামুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভূমি সহকারি কর্মকর্তা আমার নিকট অনুলিপি দিয়েছে কিন্তু কে কে এই জলমহালে মাছ ধরছে তাদের কোনো তালিকা দেয়নি। তিনি দেই দিচ্ছি বলে কাটিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এই বন্দেহরি গ্রুপ জলমহাল থেকে সুনামগঞ্জের অনেক সাংবাদিকরা মাছ নিয়ে খাচ্ছেন। যার ফলে কোনো সাংবাদিকরা এ বিষয়ে লেখালেখি করেন না।
×