ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফুটবল উন্নয়নে নতুন ক্যালেন্ডার প্রণীত

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

ফুটবল উন্নয়নে নতুন ক্যালেন্ডার প্রণীত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের আমলে তৃণমূল ফুটবল বলতে গেলে নির্বাসনেই চলে যায়। ‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না’- এই প্রবাদটিই এখন যেন শতভাগ ফলে যায় বাফুফের বেলায়। গত নয় বছরে সালাউদ্দিন পাত্তাই দেননি তৃণমূল এবং বয়সভিত্তিক ফুটবলকে। মজেছিলেন জাতীয় দল এবং পেশাদার লীগ নিয়েই। পাইপলাইনে দক্ষ ফুটবলার না থাকার পরিণাম এই নয় বছরে পরিষ্কার হয়ে গেছে। এই বিপর্যয়ের পর এতদিনে ‘কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ’ হয়েছে বাফুফের। তারা এখন তৎপর হয়েছে তৃণমূল ও বয়সভিত্তিক ফুটবলে জোর দিতে। মোট কথা, এত বছর চুপচাপ থাকার পর এখন মেগাপ্ল্যান দিয়ে দেশের ফুটবলকে উন্নয়নের জোয়ারে ভাসিয়ে দিতে চান সালাউদ্দিন। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই শনিবার বাফুফেতে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে আগামী ৪ বছরের (২০১৭-২০২০) পূর্ণাঙ্গ ক্যালেন্ডার প্রণয়ন করা হয়। যেখানে তৃণমূল ফুটবলই প্রাধান্য পেয়েছে। আগামী চার বছর পর এই পরিকল্পনার চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে বাংলাদেশকে সাফের ফাইনালে দেখতে চান সালাউদ্দিন। আগামী ৪ বছরের খেলার সিডিউলের পাশাপাশি এবারের ক্যালেন্ডারে একটু ভিন্নতা আনা হয়েছে, যুক্ত হয়েছে বেশকটি নতুন বিষয়। এ প্রসঙ্গে কাজী সালাউদ্দিন বলেন, ‘এবারের ক্যালেন্ডারকে দুই ভাগে ভাগ করেছিা। একটি হলো বিশ্বের সব ফুটবল ফেডারেশন যেমনটা পালন করে। যেমন লীগ এবং বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। অন্যটি হলো সার্বিক ফুটবলের উন্নয়নের দায়িত্ব নেয়া।’ এবার ক্যালেন্ডারে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ছেলেদের আবাসিক ক্যাম্প। যেখানে আগামী চার বছর অনুর্ধ ১৪, ১৬, ১৯ এবং মেয়েদের অনুর্ধ ১৬ ও ১৮’র ক্যাম্প। ক্যালেন্ডারে ২০১৭ সালের জন্য ৭টি লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। সেগুলো হলোঃ অনুর্ধ দলগুলোর আবাসিক ক্যাম্প, বিপিএল ও বিসিএলের পেশাদার ক্লাবের জন্য অনুর্ধ-১৮ যুব প্রতিযোগিতা। তৃণমূল প্রশিক্ষক শিক্ষা এবং তৃণমূল উন্নয়ন কার্যক্রম, বিভাগীয় ও জেলাভিত্তিক প্রতিযোগিতা, জেলা ও বিভাগীয় স্কুল ফুটবল, প্রশিক্ষকের শিক্ষা কার্যক্রম এবং উন্নয়ন, মহিলা ফুটবলের কার্যক্রম ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। সারাদেশ থেকে কোন প্রতিভা যেন বাদ না পড়ে সে লক্ষ্যে আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ৫ বিভাগে ৭ দিন করে খেলোয়াড়দের ট্রায়াল হবে বলে জানান বাফুফে সভাপতি। যেখানে তিনি নিজে উপস্থিত থাকারও প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া ক্যালেন্ডারের ২০১৭ সালের প্রধান বিষয়গুলো তুলে ধরেন বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ। এবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এবং বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগের দলবদল শুরু হবে এক সঙ্গে আগামী এপ্রিল থেকে। মে মাসে হবে ফেডারেশন কাপ। পেশাদার লীগ জুনে শুরু হয়ে শেষ হবে অক্টোবরে। বরাবরের মতো দল বদলের সেকেন্ড উইন্ডোও থাকছে। সেটি হবে আগস্ট মাসে। যাতে করে প্রিমিয়ার লীগ বা চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রয়োজনীয় ফুটবলার নেয়া যেতে পারে। মে মাসে হবে ফেডারেশন কাপ। বিপিএল এবং বিসিএলসহ মোট ১৬ দল অংশ নেবে ফেডারেশন কাপে। স্বাধীনতা কাপ দিয়ে নবেম্বরে শেষ হবে মৌসুম। টুর্নামেন্টটি শেষ হবে ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে। তাছাড়া বছরের শুরুতে হবে স্কুল ফুটবল। ফেব্রুয়ারিতে হবে সোহরাওয়ার্দী কাপ। তবে নাম বদলে জাতীয় জেলা চ্যাম্পিয়নশিপ অনুর্ধ-১৮ টুর্নামেন্ট নামে। এজন্য জেলাগুলোকে ৫ মাস সময় দেয়া হবে। জেলা লীগ শেষে হবে শেরেবাংলা কাপ। তবে এই টুর্নামেন্টেরও নাম বদলেছে। নতুন নাম জাতীয় অ-১৮ জেলা লীগ। মার্চে এএফসির আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থাকায় এবার আন্তর্জাতিক আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সূচীতে পরিবর্তন আসতে পারে। বছরের শেষে অনুর্ধ-১৮ দলগুলোকে নিয়ে টুর্নামেন্ট হবে। পরবর্তীতে এই টুর্নামেন্টই লীগ আকারে করার পরিকল্পনা রয়েছে বাফুফের। সাধারণত ২৫ ডিসেম্বর থেকে ছেলেদের সাফ টুর্নামেন্ট থাকে। যেহেতু বছরের শেষদিকে সাফ এবং শুরুর দিকে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ থাকে, সেজন্য ওই সময় জাতীয় দলের দেড় থেকে দুই মাসের ক্যাম্প হবে। এছাড়া বছরের শুরুতেই স্কুল চ্যাম্পিয়নশিপ, ফেব্রুয়ারিতে পাইওনিয়ার লীগ হবে। প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, তৃতীয় বিভাগের খেলাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়সূচী অনুযায়ী আয়োজিত হবে। এ বছর এবং আগামী বছরের ক্যালেন্ডারের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে শেখ কামাল ক্লাব কাপ অনুষ্ঠিত হবে। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ যেহেতু মার্চ মাসে রাখা হয়েছে এবং ওই সময় বিভিন্ন দেশের এশিয়ান কাপে খেলা রয়েছে, তাই বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সূচীতেও পরিবর্তন আসতে পারে। অনেকেই বলেন, সালাউদ্দিন যে কোন কাজই শুরু করেন ঢাকঢোল পিটিয়ে, মহাসমারোহে। কিন্তু তার কাজের শেষটা আর দেখা যায় না। এখন দেখার বিষয়, তার নতুন এই মহাপরিকল্পনা দিয়ে দেশের ফুটবলের আদৌ কোন উন্নয়ন ঘটাতে পারেন কি না, নাকি এটাও হয়ে থাকবে নিছকই তার আরেকটা স্টান্টবাজি।
×