ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই সপ্তাহে গেছে পৌনে দু’শ’ মেট্রিক টন ॥ সবজি চাষীদের মুখে হাসি

শিবগঞ্জের বাঁধাকপি যাচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের বাজারে

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

শিবগঞ্জের বাঁধাকপি যাচ্ছে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের বাজারে

মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া অফিস ॥ বিদেশী বাজার বগুড়ার সবজি চাষীদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। বগুড়ার উৎপাদিত বাঁধাকপি এখন রফতানি হচ্ছে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানে। আর এই সবজি, রফতানি পণ্যের তালিকায় যুক্ত হওয়ায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন সম্ভাবনাময় খাত তৈরি হয়েছে। শীতকালীন সবজি আবাদের চলতি মৌসুমের শুরু হওয়ার পর গত দুই সপ্তাহে বগুড়ার শিবগঞ্জ এলাকা থেকে উৎপাদিত প্রায় পৌনে দুশ মেট্রিক টন বাঁধাকপি বিদেশের বাজারে পাঠান হয়েছে। তবে রফতানির সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এ বিষয়ে তারা সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঠিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় পরিচর্যাসহ সহযোগিতা পেলে বাঁধাকপি দ্রুতই একটি সম্ভাবনাময় রফতানি খাত হিসেবে দাঁড়তে পারে। বগুড়ার সবচেয়ে বেশি সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে শিবগঞ্জ উপজেলায়। দেশের অন্যতম বৃহৎ সবজি বাজার মহাস্থান হাট এখানেই। প্রতিদিন এই সবজি হাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫০/৬০ ট্রাক সবজি যায়। এবার এখানকার উৎপাদিত বাঁধাকপি দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশের বাজারে প্রবেশ শুরু করেছে। নবেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে ঢাকার দুটি সবজি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এখানকার চাষীদের থেকে সরাসরি বাঁধাকপি কিনছেন। এর ফলে বাঁধাকপির বাজার মূল্যে কৃষকদের মুখে হাসি এনে দিয়েছে। মৌসুমের শুরুতে কপির উচ্চমূল্যে থাকলেও বাজারে সরবরাহ বেশি আসলে দাম কমে যায়। আগাম আবাদের সবজির দাম সাধারণত বেশি থাকে। তবে এবার শীতকালীন সবজির স্বাভাবিক সময়ের ফলন বাজারে আসলেও দাম কৃষকদের হতাশ করেনি। আড়াতদার ও সবজি চাষীরা বলছেন, দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য ভালমানের বাঁধাকপির কদর বেশি থাকায় তারা এবার অধিক লাভের মুখ দেখছেন। শিবগঞ্জ সদরের চাঁদনি এলাকার কৃষক দুদু মিয়া জানালেন, এবার যেমন ফলন ভাল হয়েছে তেমনি দামও ভাল পাচ্ছেন। নিজের ৩ বিঘা জমির মধ্যে বাঁধাকপি আবাদ করেছিলেন ২ বিঘা এবং ফুলকপি ১ বিঘা জমিতে। বাঁধাকপিতে এখন পর্যন্ত খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছেন প্রায় ৭০ হাজার টাকা। হরিপুর এলাকার কৃষক মাফুজার ৫ বিঘা জমির সবজি আবাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত এক বিঘা জমির বাঁধাকপি থেকে প্রায় ৩৫/৩৬ হাজার টাকা লাভ করেছেন। একই কথা জানালেন, মহাস্থান পূর্বপাড়ার কৃষক বাবলু মিয়া। আড়াই বিঘা জমিতে বাঁধাকপির প্রতিটি ২২ থেকে ২৪ টাকায় বিক্রি করেছেন রফতানিকারকদের স্থানীয় প্রতিনিধির (আড়তদার) নিকট। কৃষক ও স্থানীয় সবজি ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর মূল সবজি মৌসুম শুরু হওয়ার পর এ সময় তারা মান ভেদে ১০/১৫ টাকা পিস দরে বাঁধাকপি বিক্রি করেছেন। এবার দেশের বাইরে পাঠানোর জন্য রফতানিকারকরা কপি কেনায় বাজার মূল্যে নামেনি। শনিবার মহাস্থান হাটে ২০/২২ টাকা দরে প্রতি পিস বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে। বাজারসহ পাশের আড়ত এলাকায় গিয়ে দেখা গেল সবজি বাছাই ও প্যাকেজে কয়েকশ’ নারী ও পুরুষ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঢাকার এগ্রিফ্যাক্টরি কোম্পানি নামের একটি প্রতিষ্ঠান নবেম্বরের শেষ সপ্তাহে থেকে বগুড়ার মহাস্থান-শিবগঞ্জ এলাকার বাঁধাকপি কিনছেন। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ আজাদ জানিয়েছেন, তিনিই বগুড়ার থেকে রফতানির বাঁধাকপি নেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হলেও সম্ভাবনা ও বিদেশী বায়ারদের আগ্রহ দেখে ব্যবসায়িক ঝুঁকি নিয়েই বগুড়ার বাঁধাকপি কিনছেন। ২৭ নবেম্বর থেকে এ পর্যন্ত প্রতি কন্টেনারে ২৪ মেট্রিক টন করে ৭ কন্টেনার সবজি চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে মালয়েশিয়া তাইওয়ান ও সিঙ্গাপুরে রফতানি করেছেন। তার নিকট আরও ৪/৫ কন্টেনারের চাহিদা রয়েছে। এই ৩ দেশের বাজারে চীনা বাঁধাকপির প্রাধান্য। তবে চায়নার চেয়ে বাংলাদেশের বাঁধাকপি প্রতি মেট্রিক টনে ৭০/৮০ ডলার কম হওয়ায় বায়ারদের আগ্রহ বাংলাদেশের কপিতে। স্থানীয় আড়তদারদের মাধ্যমে সবজি চাষীদের ক্ষেত থেকে সরাসরি তারা কপি কিনছেন। এরপর প্যাকিং শেষে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে রেফ্রিজারেটর কন্টেনারের মাধ্যমে বিদেশের বাজারে পাঠানো হচ্ছে। জাহাজে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় ৫/৬ দিন ও তাইওয়ানে ১৫ দিনের মধ্যে কন্টেনার পৌঁছে যায়। আরেক রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান আলুবাড়ি এগ্রোপ্রডিউস লিঃ চলতি সপ্তাহে মহাস্থান এলাকা থেকে ২২ মেট্রিক টন বাঁধাকপি মালয়েশিয়ায় পাঠিয়েছেন। এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, রাশেদ শামীম জানালেন তাদের নিকট ৪০/৪৫ কন্টেনারের চাহিদা থাকলেও বগুড়া থেকে পরীক্ষামূলক এক কন্টেনার কপি পাঠিয়েছেন। দুই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে, মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর ও তাইওয়ানের সবজিবাজারে বাংলাদেশী কপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরকারী সুযোগ-সুবিধা নেই। সঠিক প্রসেসিং ও কোল্ডচেইন অনুসরণ করে বাঁধাকপি পাঠানো হলে এর ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বগুড়ার বাইরে যশোর থেকেও সবজি রফতানি হচ্ছে। রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, যে এলাকা থেকে কপি সংগ্রহ করা হয় সেখানকার কৃষিবিভাগ থেকে প্রত্যয়ন প্রয়োজন। আর সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সংগোনিরোধ কেন্দ্রে। এসব জটিলতা নিরসনে রফতানিকারকরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন নয় সবজি চাষীদের ভাগ্য সাফল্যে এনে দিতে এটা অত্যন্ত কার্যকর হয়ে উঠবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বগুড়ার উপ-পরিচালক প্রতুল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, বগুড়া থেকে কিছু সবজি বিদেশে রফতানি হলেও এর সঠিক পরিসংখ্যান এই মুহূর্তে তাদের কাছে নেই। শিবগঞ্জ কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ আহম্মেদ জানিয়েছেন, তাদের নিকট থেকে মহাস্থান বাজার থেকে রফতানির জন্য সবজি কেনা হয়েছে মর্মে এক রফতানিকারক প্রত্যয়ন নিয়েছেন। আরও একজন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
×