ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

আজ হানাদার মুক্ত দিবস

কক্সবাজার স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ আজ ১১ ডিসেম্বর কক্সবাজার শত্রুমুক্ত দিবস। আজকের এই দিন পর্যটন নগরী কক্সবাজারবাসীর জন্য ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের মানচিত্রে খচিত লাল-সবুজ পতাকা কক্সবাজারের মাটিতে উড়ানোর মধ্য দিয়ে হানাদারমুক্ত হয়। সেদিন থেকে প্রতি বছর ১১ ডিসেম্বর কক্সবাজার শত্রুমুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। এ দিনে কক্সবাজারের মাটিতে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন যুদ্ধকালীন প্রথম সশস্ত্র কমান্ডার, শিক্ষানুরাগী, প্রবীণ রাজনীতিবিদ, জেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও জয় বাংলা বাহিনী ’৭১-এর প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী। তিনি পাবলিক লাইব্রেরির মাঠে ১১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পতাকা সর্বপ্রথম উত্তোলন করে কক্সবাজার শক্রমুক্ত ঘোষণা করেন। ডিমলা স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকে জানান, রবিবার হানাদার মুক্ত দিবস পালিত হবে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিস্তা বিধৌত ডিমলা উপজেলাকে ১১ ডিসেম্বর পাকি সেনা ও তাদের দোসরদের সম্মুখ যুদ্ধে পরাজিত করে ডিমলা দখলে নিয়েছিল ছয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা। দিবসটি পালনে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে বলে জানান উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামসুল হক। টাঙ্গাইল নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, ১১ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলার দামাল ছেলেরা পাক হানাদার বাহিনীর কবল থেকে টাঙ্গাইলকে মুক্ত করে। উত্তোলন করে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। যুদ্ধকালীন টাঙ্গাইলের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতাপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে গঠিত ও পরিচালিত ‘কাদেরিয়া বাহিনীর’ বীরত্বের কথা দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে চিরস্মরণীয়। টাঙ্গাইল হানাদার মুক্ত দিবস ও বিজয়ের ৪৫ বছর উপলক্ষে টাঙ্গাইল পৌরসভার আয়োজনে ছয় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে শোভাযাত্রা, দেশবরেণ্য রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আলোচনা সভা এবং প্রখ্যাত শিল্পীদের সমন্বয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। কাদেরিয়া বাহিনী সখীপুরের বহেড়াতৈলে অবস্থান করে মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২৬ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত টাঙ্গাইল ছিল স্বাধীন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রশাসন পরিচালিত হয়। ২৬ মার্চ সকালে আদালতপাড়ার এ্যাডভোকেট নূরুল ইসলামের বাসভবনে এক সভায় গঠিত হয় টাঙ্গাইল জেলা স্বাধীন বাংলা গণমুক্তি পরিষদ। তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আহ্বায়ক ও সশস্ত্র গণবাহিনীর সর্বাধিনায়ক এবং বদিউজ্জামান খানকে চেয়ারম্যান ও আব্দুল কাদের সিদ্দিকীসহ আরও আটজনকে সদস্য করে কমিটি গঠিত হয়। প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আব্দুল মান্নান, গণপরিষদ সদস্য শামছুর রহমান খান শাজাহান, আব্দুর রাজ্জাক ভোলা ছিলেন অগ্রগণ্য। ক্রমান্বয়ে সংগঠিত হতে থাকে মুক্তিযোদ্ধারা। কুষ্টিয়া নিজস্ব সংবাদদাতা কুষ্টিয়া থেকে জানান, কুষ্টিয়ায় হানাদার মুক্ত দিবস আজ। মহান মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের বহু আত্মত্যাগ ও মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অবশেষে ’৭১ সালের ১১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার মাটি হয় শক্রমুক্ত। ১৪ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া কালেক্টরেট ভবনে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ২৭ বেলুচ রেজিমেন্টের ২শ’ ১৬ হানাদার বাহিনী কুষ্টিয়ার দখল নেয়; কিন্তু স্বাধীনতাকামী কুষ্টিয়াবাসী পাকি সেনাবাহিনীর এ দখলদারিত্ব ও অত্যাচার মেনে নিতে পারেনি। তারা মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। তাদের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে চুয়াডাঙ্গার ৪নং উইংয়ের কমান্ডার মেজর আবু ওসমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ৩০ মার্চ ভোরে পাকবাহিনীর ওপর আক্রমণ করা হয়। ১ এপ্রিল ভোরে সমস্ত অফিসারসহ অর্ধশত পাকসেনা দুটি জীপ ও একটি ডজ গাড়িতে করে ঝিনাইদহ রোড ধরে যশোরের দিকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়া প্রথমবারের মতো শক্রমুক্ত হয়। কিন্তু হানাদাররা ১৬ এপ্রিল পুনরায় কুষ্টিয়া শহর দখল করে নেয়। এদিকে ভারতের স্বীকৃতি পাওয়ার পর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে একটার পর একটা শহর মুক্ত হতে থাকে। কুষ্টিয়া শহর মুক্ত করতে মিত্রবাহিনী বহু ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ৮ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এখানে পাকবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর চলে প্রচ- যুদ্ধ। অবশেষে ১১ ডিসেম্বর পাকবাহিনী কুষ্টিয়া ছেড়ে ঢাকার দিকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে কুষ্টিয়ার মাটি হয় সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত। মুন্সীগঞ্জ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, মুন্সীগঞ্জে গৌরবোজ্জ্বল দিন আজ। ’৭১ সালের এই দিনে মুন্সীগঞ্জ হানাদার বাহিনী মুক্ত হয়েছিল। তাই দিবসটি পালনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও প্রশাসন নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ১৯৭১ সালের রক্তঝরা দিনগুলোতে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো মুন্সীগঞ্জ জেলাও গর্জে উঠেছিল। ২৯ মার্চ হরগঙ্গা কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ আব্দুল মান্নান কলেজের শহীদ মিনারে সংগ্রামী ছাত্র-জনতার সম্মুখে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। ওই দিনই ছাত্র-জনতা মুন্সীগঞ্জ অস্ত্রাগার লুট করে এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি হিসেবে মুন্সীগঞ্জের প্রতি পাকসেনাদের তীক্ষè দৃষ্টি ছিল। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জ ঢাকার সন্নিকটে হওয়ায় পাকবাহিনী এলাকাটিতে দখল রাখতে চেয়েছিল। পাকবাহিনী যাতে ঘাঁটি করতে না পারে সেজন্য ধলেশ্বরী তীর এলাকায় বাংকার তৈরি করে মুক্তিবাহিনী পূর্বপ্রস্তুতি নিয়েছিল। তবে সেনাবাহিনী মুন্সীগঞ্জ শহরে প্রবেশ করে পহেলা মে। একযোগে ধলেশ্বরী তীরের মুন্সীগঞ্জ শহর এবং আব্দুল্লাপুর লঞ্চঘাট দিয়ে পাকিবাহিনী প্রবেশ করে। এরপরই চালায় ধ্বংসযজ্ঞ। হরগঙ্গা কলেজে ছিল মুন্সীগঞ্জে হানাদার বাহিনীর প্রধান ক্যাম্প। কলেজটি নারকীয় নানা তা-বের সাক্ষী। কলেজের পূর্বপাশের বধ্যভূমিতে নির্মাণ হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। নির্যাতন-হত্যা ছাড়াও অসংখ্য নারী সম্ভ্রম হারায় এখানে। ক্যাম্পে বসেই নীলনক্সা করে ক্যাপ্টেন সিদ্দিকীর নেতৃত্বে হানাদার বাহিনী। অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, হত্যাসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায় তৎকালীন মহকুমাজুড়ে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধ ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ক্রমেই কোণঠাসা হতে থাকে পাকিস্তানী বাহিনী। মুক্তিযোদ্ধাদের শক্ত প্রতিরোধের মুখে ’৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর গভীর রাতে শহরের হানাদার বাহিনী লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়। গা ঢাকা দেয় পাকবাহিনীর দোসর রাজাকাররাও। আর ১১ ডিসেম্বর কাকডাকা ভোরে মুন্সীগঞ্জের আকাশে ওড়ে বিজয় কেতন। মুক্ত হয় মুন্সীগঞ্জ।
×