ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদ রাখতেই হবে

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

সিডনির মেলব্যাগ ॥ প্রধানমন্ত্রীকে নিরাপদ রাখতেই হবে

আমাদের প্রধানমন্ত্রী কতবার বিপদ ও মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছেন তা নিয়ে গবেষণা হতে পারে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরদিন থেকে একদল লোক এই পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার কাজে লেগে পড়েছে। তাদের সার্থকতা আসে পনেরো আগস্টের ভয়াবহতম বিভীষিকায়। এর পরের ঘটনা আমাদের অজানা নয়। এই জাতিকে তারা পাকিস্তানী বানাতে চায়। না পারলে তার ছায়া রাষ্ট্র। সে প্রচেষ্টা যতটা আলোর মুখ দেখেছিল ততটা অন্ধকার ও ব্যর্থ হয়েছে শেখ হাসিনার কারণে। তিনি যে এভাবে হাল ধরবেন সেটা তারা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। নিয়তি বা সময় যতটা ইতিহাসও ততটাই তার দায় মিটিয়েছে। অপরিণামদর্শীরা ভাবতেও পারেনি ইতিহাসের হাত কতটা লম্বা হতে পারে। এই দেশটি কারও দয়ার দান না। কোন চুক্তি বা সমঝোতায় পাওয়া দেশও না। রীতিমতো যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনা স্বাধীনতার জন্য যে রক্ত ও ত্যাগ তার মূল্য জানে না এরা। এরা মনে করে জবরদস্তি আর উন্মাদনাই জয়ী হবে। তাদের মুখে চুনকালি লেপে দেয়া ইতিহাস আর তার সারথি শেখ হাসিনাকে তারা তাই বরদাশ্ত করতে পারে না। একটা বিষয় খেয়াল করার মতো, এরা কাজ ফুরিয়ে গেলে বা ষড়যন্ত্র সফল হলে ভাষা পাল্টে ফেলে। একদা বঙ্গবন্ধু ও তাজউদ্দীন দু’চোখের শত্রু এবং তাঁদের হত্যা না করা পর্যন্ত চক্রান্ত চালানোরাই আবার এখন বলে এমন নেতা আর জন্মায়নি! এখন বলে এঁরা থাকলে দেশ ও সমাজ এতটা অস্থির বা খারাপ হতে পারত না। আগে মেরে ফেলা তারপর সময় হলে নিজের মতো করে আহাজারি বা আফসোস মূলত ভান। মনে রাখা দরকার এর পেছনেও আছে কুমতলব। শেখ হাসিনার সরকার বা তাঁর ইমেজকে খাটো করার জন্য এসব বলে তারা। মনে হতে পারে ভাল কথা বলছে। আসলে ছলেবলে কৌশলে হাসিনার নিন্দা বা তাঁকে অজনপ্রিয় করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। এরা এখন আওয়ামী লীগের ভেতরেও ঢুকে আছে। নানাভাবে মাঝে মাঝে তা টের পেলেও মানতে চাই না বা এড়িয়ে যাই আমরা। এই ধারণা যে কতটা নির্ভুল তার শেষ প্রমাণ বিমানে গ-গোল। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বিমানে যে ত্রুটি তাকে নিছক অবহেলা বা গাফিলতি ভাবা অন্যায়। পরিশেষে নেত্রীও বলেছেন ওই ত্রুটি ছিল মানুষের তৈরি। কোন্ মানুষ? মানুষের মুখোশধারী মোশতাকের দল। এরা জানে দলকে কিভাবে কাবু ও কব্জা করতে হয়। তাই এরা দলকে ভয় পায় না। এদের ভয় শেখ হাসিনাকে নিয়ে। এরা এখন জলে স্থলে অন্তরীক্ষে সব জায়গায় সক্রিয়। বিমানটি ভূপাতিত করতে পারলে এটিকে দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়া কি কঠিন হতো? বিমানের নাটবল্টু খুলে যাওয়া বা ঢিলে হয়ে পড়ার ঘটনাটা সহজ কিছু না। এর পেছনে যে রহস্য তার উদ্ঘাটন ব্যতিরেকে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ থাকতে পারেন না। শেখ হাসিনার ওপর যাদের রাগ তাদের আমরা জানি। যারা রেগে ভালবাসার অভিনয় করেন তাদের চিনি না। এরাই এসব ঘটনার হোতা। বহু দেশের সরকারপ্রধান বা নেতাদের এভাবে কুপোকাত করা হয়েছে। এটাকে দুর্ঘটনা না বলে বলা দরকার আকাশ ক্যু। পাকিস্তানের জিয়াউল হক, ভারতের সঞ্জয় গান্ধী, ফিলিপিন্সের একুইনোÑ সবাই এর শিকার। ইতিহাস বলে দু’বারের বেশি সার্ভাইভ করেন না কেউ। কিন্তু প্রকৃতির অপার আশীর্বাদে আমাদের প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকবার বেঁচে গেছেন। শেখ হাসিনাকে সর্বতোভাবে ভাল লাগার কারণ যতটা তার চেয়ে বেশি দরকার টিকে থাকা। তিনি যদি টিকে না থাকেন তো যাদের লাভ তারাই মোশতাকের বংশধর। এরা সরকারী দলে, বিরোধী দলে সব জায়গায় চরে বেড়াচ্ছে। আজকের বাংলাদেশটা আমাদের কাক্সিক্ষত স্বদেশের সঙ্গে ঠিক মেলে না। এর আগেও আমরা অনেক ক্রাইসিস দেখেছি। অনেক কঠিন সময় পাড়ি দিয়েছি। কিন্তু এবার যা দেখছি তার নাম হিপোক্রেসি। এমন দ্বৈত বা ততোধিক সত্তা কম জাতিতে দৃশ্যমান। মুখে মুখে এত আওয়ামী লীগার স্বয়ং বঙ্গবন্ধুও দেখে যেতে পারেননি। দেশের রাজনীতিতে সবকিছু একপেশে বলে বোঝা যায় না। তলে তলে কত ধরনের দুশমন। এত আওয়ামী লীগার, এত কর্মী, এত নেতা, এত প্রেমিক অথচ ভোটের বাক্স নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। শুধু তাই না, এরা এত মোসাহেব, এত স্তাবক আসল মানুষের চেহারাই ভুলিয়ে দিয়েছে। যে কারণে মনে হতে পারে সবাই আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনাপ্রেমিক। মূলত আমাদের প্রধানমন্ত্রীর বিমানের নাটবল্টুও খুলে রাখার কাজ চলছে সমানে। যারা এসব কাজের পেছনে তাদের কোনদিনও ধরতে পারেনি দেশ। যেমন, যত খুন-খারাবি হয় দেখবেন গুলি টোটা বা কার্তুজের বিচার হচ্ছে। বন্দুক রাইফেল কামানের টিকিটাও ধরতে পারে না কেউ। এবার এই ঘটনার পর বিমানমন্ত্রী মেনন ভাই বলেছেন, তাঁর বা মন্ত্রণালয়ের হাতে নাকি আসলে কিছু নেই। যদি তাই হয়, আছে যাদের কাছে তারা তবে কার অধীনে? বিমানের মাঠ পর্যায়ের কেউ এ কাজ করতে পারে এটা কোন পাগলও বিশ্বাস করবে না। শেখ হাসিনার দুশমনদের আমরা চিনলেও মিত্রদের ঠিক চিনে উঠতে পারি না। মিত্রের ছদ্মবেশে কত যে মোশতাক আছে তাদের আমরা আসলেই চিনতে পারি না। যেসব জায়গায় তঁাঁর বদনাম বা নিন্দা হয় আমি কৌতূহলের সঙ্গে খেয়াল করি ঘুরে-ফিরে একই দোষ। রাজাকারের বিচার আর দেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিয়ে আসার প্রচেষ্টা এটাই মুখ্য। সিডনিতে এমন কিছু লোক আছে তাদের ভেতরে একরকম, বাইরে অন্যরকম। তাদের হাতে রাতে বিয়ারের গ্লাস, দিনে মাথায় জিন্নাহ টুপি। এরা ভয়ঙ্কর! খেয়াল করবেন বাংলাদেশের কথিত এলিটরা কোনদিনও বঙ্গবন্ধুর উদ্ভাসকে মেনে নিতে পারেনি। এরা নানাভাবে তাঁকে ছোট করতে চেয়েছিল, না পেরে জিয়াউর রহমানের বিধবা পতœীকে দিয়ে কেক কাটাত। আমরা কি হককথা, গণকণ্ঠ বা হলিডে মিডিয়ার কথা ভুলে গেছি? আজ যখন সেই ঘরানার মানুষ নেত্রীকে ঘিরে থাকে, তখন সন্দেহ ঘনীভূত হওয়াই স্বাভাবিক। শেখ হাসিনা না থাকলে বাংলাদেশ হবে নিয়ন্ত্রণহীন লুটেরা আর মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের সেইফ হেভেন। কারণ যত অরাজকতা, যত বেশি নিয়ন্ত্রণহীনতা, যত বেশি পাঁচমিশালী তত তাদের সুবিধা। তাই আজ পথের কাঁটা চেনা ও সরানোর ডাক এসেছে। শেখ হাসিনা অমর নন। কিন্তু তাঁকে দেশ ও জাতির আরও অনেকদিন দরকার। যে কোন অঘটনে বিলাপের চাইতে তাঁর নিরাপত্তা বিধান জরুরী। দেশ-বিদেশে এটাই এখন আমাদের মনের চাওয়া।
×