ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োজন পুনর্বিবেচনা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

প্রয়োজন পুনর্বিবেচনা

জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। অজ্ঞান, অন্ধকার আর অশিক্ষার ভারে জ্ঞানের পরিধি ক্রমশ সুপ্ত হয়ে আসে। শিক্ষা ও পরীক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে অব্যাহত পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলে আসল শিক্ষা উবে যেতে বাধ্য। গিনিপিগ হিসেবে ব্যবহৃত কোমলমতি ছাত্রদের জীবনে নাভিশ্বাস তোলার আয়োজন থামছে না। বরং যখন যা খুশি বিধান জারি এক কঠিন অবস্থার বিস্তার ঘটাচ্ছে। শিক্ষা সময়কে জয় করার হাতিয়ার হলেও সেই অস্ত্রকে ভোঁতা করার পাঁয়তারা অগ্রহণযোগ্য। শিক্ষা এবং শিক্ষার্থীকে হাতের মুঠোয় এনে তাকে পিষ্ট করার মধ্যে শান্তি ও স্বস্তি আসে না। কোন পূর্বাপর ভাবনা ছাড়াই আকস্মিকভাবে কর্তৃপক্ষ অদ্ভুত পদক্ষেপ নিয়েছে। আগামী ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষা থেকে চারটি বিষয় বাদ দেয়া হয়েছে। তবে এই চারটি বিষয় সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মূল্যায়ন করবে বলে নিয়ম জারি করা হয়েছে। অর্থাৎ এসব বিষয়ের কোন নম্বরই চূড়ান্ত পরীক্ষায় যোগ হবে না। যদি তা নাই হবে, তবে পাঠ্যসূচীতে এসব বিষয় রাখার যৌক্তিকতা কী থাকতে পারে। শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রটিকে যতটা সম্ভব সঙ্কুচিত করে তোলার এই মহান আয়োজনের কার্যকারণ নেই যদিও। ভবিষ্যত বংশধর, উত্তরসূরি ও প্রজন্মের উন্নত বিকাশের পথকে রুদ্ধ করার চেষ্টা হলে মহাবিপর্যয় সামনে এসে দাঁড়াতে বাধ্য। কর্তারা হয়ত সব সময় এক শ্রেণীর মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় রেখে পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন। হয়ত তাদের সন্তানরা এ দেশে পড়াশোনা করেন না। তাদের সন্তানদের সর্বজনীন সামাজিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নেই প্রায়। কৃষি শিক্ষা ও গার্হস্থ্য বিজ্ঞান আলাদা বিষয়। শিক্ষার্থীরা পৃথক পৃথকভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে। অথচ শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান একটি সামাজিক বিষয় এবং শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। তা হলে কোন্ যুক্তিতে শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিষয়কে বাদ দেয়া হবে। বিদ্যালয়ে যদি এসব বিষয় থাকে এবং এসব বিষয়ের পাবলিক পরীক্ষা না হয়, তা হলে তো শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠ গ্রহণে সহজে আগ্রহী হবে না। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকরাও গুরুত্ব হারাবেন। শারীরিক শিক্ষা ছাড়া শিক্ষার পূর্ণতা আসতে পারে না। যেসব গুণ থাকলে দেশের প্রতিটি নাগরিক সুস্থ, সবল, দেশপ্রেমিক ও দায়িত্ব জ্ঞানসম্পন্ন হয়ে গড়ে ওঠে এবং নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়, শারীরিক শিক্ষা সেসব গুণাবলী অর্জনে প্রত্যক্ষ অবদান রাখে। নেতৃত্ব ও ব্যক্তিত্ব গঠনেও শারীরিক শিক্ষার অবদান অসামান্য। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ না থাকলে শিক্ষাক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত ফল লাভ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান সুস্থ দেহে সুন্দর মন গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের প্রায় সব দেশেই শারীরিক শিক্ষা, খেলাধুলা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ভিন্ন ভিন্ন নামে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক। এসব বিষয় সমাজ উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে, যা আমাদের দিনে চাহিদা পূরণে সক্ষম। সেøাগানই তো রয়েছে, ‘ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই দেহমন, ক্রীড়াতে বিশ্বজয়, সুস্থ দেহে সুন্দর মন।’ শিক্ষার্থীর নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ থেকে শুরু করে ইতিহাস ও ঐতিহ্য, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, শিক্ষা, সাহিত্য সংস্কৃতি বোধ, দেশপ্রেমবোধ প্রকৃতি চেতনা, সবার প্রতি সমমর্যাদাবোধ জাগ্রত করার ক্ষেত্রে এসব বিষয় প্রণোদনা জাগায়। এসব বিষয় মূলত ‘সুস্থ দেহে সুন্দর মন’ এই জীবন দর্শনের ওপর ভিত্তি করে রচিত। ক্রীড়াঙ্গনে বিশ্বে বাংলাদেশের সাফল্য প্রশ্নাতীত। সেখানে এই বিষয় বাদ দেয়ার মধ্যে এক ধরনের কূপম-ূকতারাই বিস্তার ঘটানো হচ্ছে। এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছেড়ে শিক্ষার্থীর স্বাভাবিক বিকাশের ক্ষেত্রগুলো সম্প্রসারিত করাই হবে যুক্তিযুক্ত।
×