ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মানবসম্পদ উন্নয়নে উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ১১ ডিসেম্বর ২০১৬

মানবসম্পদ উন্নয়নে উদ্যোগ

মানবসম্পদ উন্নয়নে ২৩ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে সেটি সুবিবেচনাপ্রসূত। প্রস্তাবিত হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ডিভিশনটি প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে গঠন করা হচ্ছে। বিভাগটি নিজে কোন প্রশিক্ষণ প্রদান না করলেও অন্যান্য মন্ত্রণালয়-বিভাগ যে প্রশিক্ষণ প্রদান করছে তার সমন্বয় সাধন, বাজারের চাহিদা মোতাবেক প্রশিক্ষণের মানোন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সনদের ব্যবস্থাকরণ, দেশ-বিদেশের চাহিদা নিরূপণ প্রভৃতি কাজ করবে। প্রসঙ্গত, বিদায়ী বছরের শুরুতে মানবসম্পদ উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাড়ানোর ঘোষণা আসে। নির্দিষ্টভাবে কারিগরি শিক্ষা প্রদানে অর্থসহায়তা বাড়ানোর কথা বলা হয়। সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা পাবে বিশেষ সুবিধা। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংক ও কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সিডা) প্রথমে ৫৭৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯৪ হাজার টাকা দিলেও পরে এটা বাড়িয়ে ৭৭২ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়। গত বছর প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের ক্রমোন্নতির বিষয়টির স্বীকৃতি মিলেছিল। মানবসম্পদ উন্নয়নে ১৮ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। মানব উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশের কাছে বাংলাদেশ এখন অনুকরণীয়। শুধু অর্থনীতি ও মানব উন্নয়ন নয়; বাংলাদেশ এশিয়ার কোন কোন দেশের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে আইনের শাসন, জবাবদিহিতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও। জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান মধ্যসারির দেশগুলোর তালিকায় আছে ১৫২ নম্বরে। সেখানে পাকিস্তানের অবস্থান ১৫৭। নারী-পুরুষ সমতা উন্নয়নে বাংলাদেশের অবস্থান ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় ভাল। আর সার্বিকভাবে মানবসম্পদ উন্নয়নে আমাদের অগ্রগতির ধারা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় দ্রুততর। ১৯৭২ সালের এক কোটি দশ লাখ টন খাদ্য উৎপাদনের তুলনায় এখন উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টন। জমি শতকরা ১৫ ভাগ কমলেও বেড়েছে উদ্যোগ, পরিশ্রম, প্রণোদনা এবং কৃষিজীবী ও জমির উৎপাদনশীলতা। স্বাস্থ্য ও পুষ্টি খাতে আমাদের ক্রমোন্নতি বেশ কয়েক বছর ধরেই আলোচিত বিষয়। সীমিত আয়তনের দেশটির বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সৃষ্টি করা যায়নি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ। তবু মানবগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিতে গতি এসেছে। সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। দেশে পেশাভিত্তিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তথা প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা, কারিগরি ইত্যাদি জনসংখ্যা অনুপাতে বেশ কম। ফলে বেকারত্বের হার কমানোর ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি। স্মরণযোগ্য দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান তার কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিশ্ব-অর্থনীতির সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে। এখন চীন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অর্থনৈতিক পরাশক্তি। তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল কারণ হচ্ছে সময়োপযোগী প্রযুক্তিকে বাহন করে নিজেদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগানো। বাংলাদেশের ক্রমোন্নয়নের পথে এগিয়ে চলার পেছনে রয়েছে এ দেশের সাধারণ মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রম, শত বাধাবিপত্তির মুখেও সামনে এগিয়ে চলার অদম্য উদ্দীপনা। রাষ্ট্র সকল সময়ে মানবের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি, এটা অনস্বীকার্য। তারপরও উন্নয়নের বর্তমান গতিধারা নিঃসন্দেহে উৎসাহব্যঞ্জক। দেশের জনসংখ্যাকে প্রথাগত দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমস্যা হিসেবে দেখা হচ্ছে বরাবরই। একটু ভিন্নচোখে বিষয়টা দেখলে বলা যায়, জনসংখ্যা সমস্যা নয়, সম্পদ। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে সবার আগে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাগ্রহণ যে জরুরি, সেকথাও আমরা জোরেশোরে বলে আসছি। সে বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত।
×