ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অগুস্তা দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

অগুস্তা দুর্নীতিতে ধৃত প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান

অনলাইন ডেস্ক ॥ অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতি মামলায় প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগীকে আজ গ্রেফতার করল সিবিআই। সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বাহিনীর শীর্ষ কর্তা এ ভাবে গ্রেফতার হলেন। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপিদের যাতায়াতের জন্য ২০১০ সালে ভারতের সঙ্গে ইতালীয় সংস্থা ফিনমেকানিকা-র ব্রিটিশ শাখা সংস্থা অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে ৩৬০০ কোটি টাকায় ১২টি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার কেনার চুক্তি হয়। ২০১২ সালে প্রথম এই চুক্তিতে দুর্নীতির গন্ধ পায় ইতালি পুলিশ। ফোনে আড়ি পেতে তারা জানতে পারে, ওই কপ্টার বিক্রির চুক্তি নিশ্চিত করতে একটি সুইস সংস্থাকে ৫.১ কোটি ইউরো ঘুষ দিয়েছিল ফিনমেকানিকা। অর্থাৎ মোট চুক্তি মূল্যের প্রায় সাড়ে সাত শতাংশ (প্রায় ৩৬২ কোটি টাকা) ঘুষ দিয়েছিল সংস্থাটি। ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান এস পি ত্যাগী ও তাঁর তিন পিসতুতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ঘুষ হিসেবে ভারতে আসা ১৩৮ কোটির মধ্যে ৭৬ কোটি টাকা গিয়েছে ত্যাগী-ভাইদের সিন্দুকে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৪ সালে বাতিল হয়ে যায় ওই চুক্তি। তদন্তে নামে সিবিআই। আর বিদেশ থেকে ঘুষের টাকা কোন পথে ভারতে এসেছে তা দেখার দায়িত্ব দেওয়া হয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে। প্রায় দু’বছর আগে এই মামলায় সিবিআই গৌতম খেতান নামে দিল্লির এক আইনজীবী ও বায়ুসেনা প্রধানের পিসতুতো ভাই সঞ্জীব ওরফে জুলি ত্যাগীকে গ্রেফতার করে। আর আজ গ্রেফতার করা হল খোদ প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধানকেই। ধৃত ব্যক্তিদের ১২০বি, ৪২০ ধারা ও দুর্নীতি দমন আইনে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে যথাক্রমে নৌসেনা সুশীল কুমার ও সেনা প্রধান ভি কে সিংহের নাম সিবিআই তদন্তে উঠে এলেও কিছু প্রমাণ করা যায়নি। প্রাথমিক অনুসন্ধানের পর সিবিআই নিশ্চিত যে, ২০০৪-০৫ সালে দালালের মাধ্যমে ঘুষ দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন বায়ুসেনা প্রধান ত্যাগীকে। সে সময়ে তিনি নামে-বেনামে ওই টাকা কোথায় বিনিয়োগ করেছেন, তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়। সূত্রের খবর, চলতি বছরে একাধিকবার এ নিয়ে তাঁকে জেরা করে ইডি। গতকাল ও আজ দফায় দফায় জেরা করে সন্তুষ্ট না হওয়ায় আজ তাঁকে গ্রেফতার করার সিদ্ধান্ত নেয় সিবিআই। ধৃত ত্যাগীকে আগামিকাল আদালতে পেশ করা হবে। ইউপিএ আমলে হওয়া কপ্টার কেনাবেচার দুর্নীতির পিছনে কংগ্রেস নেতৃত্বকেই দায়ী করে সরব হয়েছে বিজেপি শিবির। কেন না, ইতিমধ্যেই ওই মামলার রায়ে ইতালির আদালত ওই চুক্তির পিছনে ভারতের এক রাজনৈতিক পরিবারের প্রভাবের বিষয়ে উল্লেখ করেছে। তদন্তে উঠে এসেছে ‘এ পি’ বলে এক ভারতীয় নেতার নামও। বিজেপির দাবি ব়ফর্সের মতোই এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস পরিবারের দিকেই পরোক্ষে আঙুল তুলেছে ইতালির ওই আদালত। আর ‘এ পি’ বলতে বোঝানো হয়েছে সনিয়া গাঁধীর রাজনৈতিক সচিব অহমেদ পটেলকেই। এই যোগাযোগের অভিযোগ তুলে সনিয়াকে একাধিক বার আক্রমণও করেছে বিজেপি শিবির। নোট বাতিলের বাজারে একজোট বিরোধীরা এখন সরকারকে প্যাঁচে ফেলতে উঠে-পড়ে লেগেছে। এর মধ্যে ত্যাগীর গ্রেফতারি বিজেপিকে পাল্টা আক্রমণের জন্য কিছুটা বাড়তি অক্সিজেন দিল। এই মামলায় তৃণমূল শুরু থেকেই কংগ্রেসের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে বিজেপির পাশে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিরোধীদের একতা ভাঙতেও সরকার সময় বুঝে সিবিআইকে দিয়ে ত্যাগীকে গ্রেফতার করিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। পাল্টা আক্রমণে নেমেছে কংগ্রেসও। তাদের দাবি, ওই কপ্টার কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বাজপেয়ী জমানায়। তাই দুর্নীতি কিছু হয়ে থাকলে তা হয়েছে অটলবিহারীর আমলেই। কংগ্রেস জমানায় শুধু চুক্তি সম্পন্ন হয়েছিল মাত্র। কংগ্রেসের অভিযোগ, বাজপেয়ীর আমলে ভিভিআইপিদের জন্য কপ্টার কেনার গুণগত মাপকাঠি এমন ভাবে বদলানো হয়েছিল, যাতে ইতালীয় সংস্থা ফিনমেকানিকা-র বরাত পেতে সুবিধা হয়। আর গোটাটাই হয়েছিল বাজেপেয়ী-ঘনিষ্ঠ ব্রজেশ মিশ্রের নির্দেশে। জর্জ ফার্নান্ডেজ প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ৬ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত সিয়াচেন হিমবাহে একাধিকবার যাওয়ার পরেই অত্যাধুনিক সুরক্ষা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ হেলিকপ্টার কেনার চিন্তাভাবনা শুরু হয়। প্রথমে ৬ হাজার মিটার উঁচুতে উড়তে পারে এমন হেলিকপ্টারের কেনার সিদ্ধান্ত হলেও পরে সেই মাপকাঠি কমিয়ে আনা হয় সাড়ে ৪ হাজারে। নিরাপত্তার স্বার্থে কেবিনের উচ্চতা বাড়ানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এস পি ত্যাগীর দাবি, তিনি বায়ুসেনা প্রধান হন ২০০৫ সালের জুন মাসে। কিন্তু তার আগে ২০০৩ সালেই কপ্টারের গুণগত মাপকাঠি কী হবে তা ঠিক করে দেন বাজপেয়ীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি, প্রয়াত ব্রজেশ মিশ্র। পরে শুধু বায়ুসেনা, এসপিজি ও প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নির্দেশে তা কার্যকর করা হয়। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×