ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ মামলার টার্গেট

রাজধানীতে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলার প্রতিযোগিতা

প্রকাশিত: ০৮:২০, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

রাজধানীতে ট্রাফিক সার্জেন্টদের মামলার প্রতিযোগিতা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যানজট কিংবা নাগরিক ভোগান্তি দূর করার চাইতে নিজেদের ইমেজ রক্ষায় রাজধানীর ট্রাফিক বিভাগের উর্ধতনরা যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলার খড়গ চাপিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বড় কর্তাদের অবস্থান অক্ষুণœ রাখতে তাদেরই মৌখিক আদেশে, কার কত বেশি মামলা তা দেখাতেই এই প্রতিযোগিতা বলছেন, মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক সার্জেন্টরা। রাজপথ সচল রাখার থেকে মামলা করার পেছনে সময় দেয়ায় চাপে রয়েছেন তারাও। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। আর বিশ্লেষকরা বলছেন, এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা থামাতে হলে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাকে উৎসাহিত করতে হবে। যাত্রীরা যাচ্ছিলেন নিজ গন্তব্যে; হঠাৎ মাঝ পথেই বাসটি থামিয়ে দিলেন এক ট্রাফিক পুলিশ। চালকের কাগজ যাচাইয়ে চলে গেল ১০ থেকে ১৫ মিনিট। হলো মামলাও। বাসটির যাত্রীরা অসহায় হয়ে দেখছিলেন এমন দৃশ্য। তারা বলেন, রাস্তার নামার আগেই এটা করা উচিত। গাড়ি চলা অবস্থায় এগুলো করলে সময় নষ্ট হয় বলে জানান তারা। ট্রাফিক বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর শেষ না হতেই জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত শুধু দশ মাসে নগরীতে যানবাহনের বিরুদ্ধে ট্রাফিক বিভাগ মামলা করেছে ৮ লাখ ২৩ হাজার ২১১টি, জরিমানা আদায় হয়েছে ২৯ কোটি টাকারও বেশি। আর গতবছর এ বিভাগেই মামলা হয়েছিল সাড়ে ৫ লাখেরও অধিক, আর জরিমানা আদায় ১৮ কোটি ২৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯৫০ টাকা। এ বছরের দু’মাস বাকি থাকতেই গতবারের তুলনায় মামলার সংখ্যা বেড়েছে ৩১ শতাংশ। প্রতিদিন নগরীতে মামলা হচ্ছে ৩ হাজারেরও বেশি। অনুসন্ধানে মূল রহস্য বেরিয়ে আসে খোদ এক ট্রাফিক সার্জেন্টের মুখে। পরিচয় গোপন রাখার শর্তে তিনি জানান, উর্ধতন কর্তাদের স্বার্থ রক্ষায় মৌখিক নির্দেশই চলছে মামলা করার এমন প্রতিযোগিতা। সার্জেন্ট বলেন, বলে দেয়া হয় কত পরিমাণ মামলা করতে হবে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টা মামলা দিতে হবে। এর উপর পারফর্মেন্স নির্ভর করে জানান তিনি। তাদের বেধে দেয়া টার্গেট মামলার চাপে স্বাভাবিক কর্মকা-েও ব্যাঘাত ঘটছে বলেও দাবি করেন এই কর্মকর্তা। তবে, এসব অভিযোগ উড়িয়ে দেন ডিএমপির ট্রাফিক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথা না। এছাড়া তদন্ত করে বিষয়টিকে দেখার কথা জানান তিনি। এদিকে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে ডিজিটাল পদ্ধতিগুলোকে কাজে লাগাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগ্রহী হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। তারা বলেন, ডিজিটাল লাইসেন্সের মধ্যে সব তথ্য দেয়া থাকে। জায়গায় জায়গায় দেখার মানে হচ্ছে এক ধরনের হয়রানি। যানজট নিরসনেও শীঘ্রই ট্রাফিক বিভাগ উদ্যোগ নেবে বলেও মনে করেন এই পরিবহনর বিশ্লেষক।
×