ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সাশ্রয়ী মূল্যে এসব সেন্টার ব্যবহার করতে পারবেন নগরবাসী

নতুন ৬ কমিউনিটি সেন্টার তৈরি হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

নতুন ৬ কমিউনিটি সেন্টার তৈরি হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে

মশিউর রহমান খান ॥ নতুন আরও ৬টি অত্যাধুনিক কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। স্থানীয় নাগরিকদের সুবিধার্থে এসব কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। নাগরিকদের সামাজিক জীবনযাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যেই এসব কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বিয়ে, ওয়ার্ড পর্যায়ে সমাজকল্যাণ, যে কোন সভা সেমিনার করা, সামাজিক যোগাযোগ সৃষ্টি, বিনোদনমূলক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে এসব সেন্টার ব্যবহার করতে পারবেন। মূলত সাশ্রয়ী খরচে কমিউনিটি সেন্টারে উন্নত সেবা দিতে চায় ডিএসসিসি। তবে এসব সেন্টার ব্যবহারের ফি বর্তমানের তুলনায় একটু বেশি হবে। তবে নাগরিকদের সুবিধা বিবেচনায় ফি সাধারণের সাধ্যের আওতায় রাখা হবে বলে জানা গেছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, নির্মাণের পর এসব সেন্টার বেসরকারী পরিচালনায় আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ করে বা নির্দিষ্ট ফি ধার্য করে লিজ প্রদান করারও পরিকল্পনা রয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষের। বর্তমানে কমিউনিটি সেন্টারগুলো পরিচালনায় প্রয়োজনের তুলনায় জনবল অত্যন্ত কম। তাছাড়া অত্যন্ত পুরনো আর নোংরা পরিবেশের কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার বর্তমানে ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধা সম্পন্ন নতুন এসব কমিউনিটি সেন্টার ৬ থেকে ১৫ তলা পর্যন্ত হবে। এজন্য একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। প্রায় ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এসব সেন্টার নির্মাণ করা হবে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত ২ বছর মেয়াদে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানা গেছে। তবে এসব সেন্টার পুরোপুরি চালু হতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, দক্ষিণ সিটির বাসাবো, হাজারিবাগ, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড ও সূত্রাপুর এলাকায় একটি করে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ হবে। তবে লালবাগে হবে দুটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। সূত্র জানায়, ঢাকা অফিসার্স ক্লাব অথবা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে অবস্থিত সেনাকুঞ্জের আদলে কমিউনিটি সেন্টারগুলো নির্মাণ করা হবে। আয় ব্যয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করতে সেনাকুঞ্জের ন্যায় পরিচালনা করা হবে। এর ফলে আয় করার পাশাপাশি সর্বোচ্চ নাগরিক সুবিধা প্রদান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আধুনিক এসব কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে থিয়েটার হল, অডিটরিয়াম, লাইব্রেরি, কনফারেন্স রুম, সুইমিং পুল, জিমনেশিয়াম, ইনডোর গেমস্, ডে-কেয়ার সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র। থিয়েটার হল ও অডিটরিয়ামে থাকবে উন্নত সাউন্ড সিস্টেম, লাইটিং, মাল্টিমিডিয়াম, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, স্টেজ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ রুম। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, বাসাবো এলাকায় তিন হাজার ১১৭ বর্গফুট ফ্লোর বিশিষ্ট ১৫তলা কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করতে ব্যয় করা হবে ৩৬ কোটি টাকা। এছাড়া হাজারিবাগে দুই হাজার ২৩২ বর্গফুট ফ্লোর বিশিষ্ট ১৫তলা কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে ২৭ কোটি টাকা, লালবাগে একই আয়তন বিশিষ্ট দুটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে ৫০ কোটি টাকা, ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১২তলা কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে ১৫ কোটি ৪৮ লাখ টাকা এবং সূত্রাপুরে সেনা ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের আদলে ছয়তলা কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে ৩৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া ছয়টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে পাঁচটির জন্য ৫০ হাজার গ্যালন এবং একটির জন্য এক লাখ গ্যালন ক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ জলাধার নির্মাণও করা হবে। বর্তমানে ডিএসসিসি এলাকায় মোট ৩৩টি কমিউনিটি সেন্টার আছে। বেসরকারী কমিউনিটি সেন্টারগুলোর তুলনায় এসব সেন্টারগুলোর ভাড়া প্রায় অর্ধেক কিন্তু নোংরা অপরিচ্ছন্ন, অতি পুরনো আর দীর্ঘ সময় এসব সেন্টার সংস্কার না করায় ও পুরাতন এসব কমিউনিটি সেন্টারগুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে এলাকাবাসী নিজেদের কোন অনুষ্ঠানে এগুলো ব্যবহারে তেমন একটা আগ্রহ দেখায় না। এর মধ্যে কয়েকটিতে পুলিশের থানা, র‌্যাব বা কর্পোরেশনের দপ্তর ও এর মধ্যে কয়েকটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। এদিকে চালু সেন্টারগুলোর বেশির ভাগে দখলের দৌরাত্ম্য রয়েছে। ৩৩টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে বর্তমানে দুটি কমিউনিটি সেন্টারের পুরোটা আর তিনটির আংশিক জায়গাজুড়ে পুলিশের থানা, দুটি সেন্টারে র‌্যাবের কার্যালয় আর তিনটিতে সিটি কর্পোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় স্থপন করা হয়েছে। এছাড়া বাকি ৬টি কমিউনিটি সেন্টারের মধ্যে দুটি সেন্টার জরাজীর্ণ হয়ে বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আরও চারটি সেন্টার নির্মাণ বা সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর বাইরে একটি সেন্টার গত এক যুগেও চালু করা হয়নি। ডিএসসিসির ১৪টি সেন্টার নাগরিকগণ ব্যবহার করতে পারছেন না। সূত্র জানায়, ডিএসসিসির চলতি বছরের বাজেটে কমিউনিটি সেন্টারের জন্য ৩৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু সেন্টারগুলোর তেমন একটা উন্নয়ন চোখে পড়ছে না। বর্তমানে ডিএসসিসির ১৯টি কমিউনিটি সেন্টার চালু রয়েছে। বিভিন্ন সামাজিক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালনের জন্য এসব কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া দিনের বেলার জন্য ৮ থেকে ১৫ হাজার টাকা, রাতের বেলার জন্য এর সাথে অতিরিক্ত ৫শত টাকা জমা দিতে হয়। তবে কমিউনিটি সেন্টারগুলোর বেশির ভাগ ভবনই অনেক পুরনো। ফলে নাগরিকগণ এসব সেন্টার ব্যবহারে তেমন একটা আগ্রহ দেখান না। নাগরিকদের কথা বিবেচনায় ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ নতুন ও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এসব কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জনকণ্ঠকে বলেন, নাগরিকদের কম ভাড়ায় অধিক সুবিধা প্রদান করতে নতুন আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন ৬টি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ করবে। ডিএসসিসির বিভিন্ন ওয়ার্ডে এসব সেন্টার নির্মাণ করা হবে। মূলত আমরা সাশ্রয়ী খরচে কমিউনিটি সেন্টারে উন্নত সেবা দিতে চাই। নাগরিকদের ডিএসসিরি সেন্টারের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে ও সামাজিক সাংস্কৃতিক যে কোন অনুষ্ঠানের ব্যবহার করতে এসব সেন্টার অবশ্যই বেসরকারী যে কোন কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া চেয়ে অনেক কম হবে। তাছাড়া জনবল সংকটের পাশাপাশি বর্তমান কমিউনিটি সেন্টারগুলো অনেক পুরনো ও নানা সমস্যায় জর্জরিত। ফলে অনেকেই এসব সেন্টার ব্যবহার করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কোন প্রকার লাভ নয় নাগরিক সেবা নিশ্চিতে আধুনিক ও যুগোপযোগী এসব সেন্টার ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনে আমরা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনার দায়িত্ব দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এটি নির্মাণের পর নির্দিষ্ট ফি ধার্য করে আউট সোর্সিং লোকবল নিয়োগ করে বা লিজ প্রদানের মাধ্যমেও পরিচালনা করা হতে পারে। আগামী অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে পরবর্তী ২ বছরে এসব সেন্টার নির্মাণ করা হবে। এজন্য একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। তবে এসব সেন্টার ব্যবহারের ফি বর্তমানের তুলনায় একটু বেশি হবে। তবে নাগরিকদের সুবিধা বিবেচনায় ফি সাধারণের সাধ্যের আওতায় রাখা হবে। এগুলো নির্মাণ করা গেলে নাগরিকগণ স্বল্প খরচে বিভিন্ন সামাজিক বা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের জন্য এসব সেন্টারকেই বেছে নিতে আগ্রহী হবেন।
×