ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কোন কোন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে রয়েছে সর্বোচ্চ ২৭ মামলা

বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে ভোটাদের শঙ্কা ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে

প্রকাশিত: ০৮:১৯, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

বিতর্কিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের নিয়ে ভোটাদের শঙ্কা ॥ নারায়ণগঞ্জ  সিটি  নির্বাচনে

মোঃ খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ॥ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন (নাসিক) নির্বাচনে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডের অনেক কাউন্সিলর প্রার্থীই সন্ত্রাসী ও একাধিক ফৌজদারি মামলার আসামি রয়েছে। কোন কোন কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ২৭টিও মামলা রয়েছে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পুলিশের সন্ত্রাসীদের তালিকায় নামও ছিল। বিতর্কিত ব্যক্তিরা কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ায় ভোটারের মাঝে নানা শঙ্কা কাজ করছে। আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এবারই প্রথম মেয়র প্রার্থীরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হচ্ছে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ ৭ মেয়র প্রার্থী, ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৫৬ জন কাউন্সিলর ও ৯টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে ৩৮ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এদের মধ্যে সাধারণ ওয়ার্ডে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার আসামি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে এ সকল প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে দেয়া হলফনামাও একাধিক মামলা থাকার কথা অকপটে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, ১নং ওয়ার্ড থেকে ৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে রওশন আলীর বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৩টি মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে। একই ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের বিরুদ্ধে দুটি রয়েছে। এই দুটি মামলা থেকেই ফারুক অব্যাহতিপ্রাপ্ত। ২নং ওয়ার্ড থেকে ৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছে। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা কাউন্সিলর প্রার্থী ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৪টি মামলা বিচারাধীন, একটি মামলা তদন্তাধীন ও ইকবাল হোসেন নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের মামলা থেকে অব্যাহিত প্রাপ্ত আসামি। এছাড়া যুবদল নেতা দলিল লেখক ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। একটি মামলা বিচারাধীন ও একটি খালাসপ্রাপ্ত। একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল হেকিমের বিরুদ্ধে একটি মামলা থাকলেও খালাসপ্রাপ্ত। ৩নং ওয়ার্ডে ৩ জন কাউন্সিল প্রার্থী। এদের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও সাত খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদলের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনসহ ১২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৯টি মামলা বিচারাধীন ও ৩টি মামলা থেকে খালাসপ্রাপ্ত। আরেক যুবলীগ নেতা তোফায়েল হোসেনের বিরুদ্ধে ২টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৪নং ওয়ার্ড থেকে ৬ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাস্টারের ছেলে ও যুবলীগ নেতা আরিফুল হক হাসানের বিরুদ্ধে মাদক আইনসহ ২টি মামলা রয়েছে। একটি মামলা বিচারাধীন ও একটি খালাসপ্রাপ্ত। একই ওয়ার্ডে যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৩টি মাামলা, এর মধ্যে ১টি বিচারাধীন, ১টি তদন্তাধীন ও ১টি মামলা চলমান রয়েছে। ৫নং ওয়ার্ডে প্রার্থী সংখ্যা ৭ জন। এদের মধ্যে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের ছেলে গোলাম মোহাম্মদ সাদরিলের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৮টি মামলা বিচারাধীন, ১টি মামলা পুলিশ রিপোর্ট গ্রহণে শুনানি চলছে। এছাড়াও ১টি মামলা হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত, ১টি থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। নজরুলের বিরুদ্ধে ১টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৬নং ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা ৬ জন। এদের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসীসহ ২২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০টি মামলা থেকে খালাসপ্রাপ্ত। ১টি হাইকোর্টের আদেশে স্থগিত ও ১টি অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত। ৭নং ওয়ার্ডে ৯ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতা আলা হোসেন আলার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা, ২টি অব্যাহতিপ্রাপ্ত ও ১টি খালাসপ্রাপ্ত। হুমায়ূন কবীরের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৮নং ওয়ার্ডে প্রার্থীর সংখ্যা ৯ জন। এদের মধ্যে বিএনপি নেতা উজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা, ২টি বিচারাধীন ও ২টি অব্যাহতিপ্রাপ্ত। আওয়ামী লীগ নেতা মহসিন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা, এর মধ্যে ২টি থেকে খালাসপ্রাপ্ত ও ১টি অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহিতপ্রাপ্ত। যুবদল নেতা দেলোয়ার হোসেন খোকনের বিরুদ্ধে ৭টি মামলা, ৩টি থেকে খালাসপ্রাপ্ত ও ৪টি বিচারাধীন। সাগর প্রধানের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ৯নং ওয়ার্ডে ১১ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে ইস্রাফিল প্রধানের বিরুদ্ধে ১টি মামলা বিচারাধীন ও সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১টি মামলা বিচারাধীন। ১১নং ওয়ার্ডের ৪ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে অহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৫টি মামলা, এর মধ্যে ৩টি খালাসপ্রাপ্ত ও ২টি বিচারাধীন। ১২নং ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা শওকত হাসেম শকুর বিরুদ্ধে চাষাঢ়ার বোমা হামলা মামলাসহ ১১টি রয়েছে। যা বিচারাধীন ৬টি ও খালাসপ্রাপ্ত ৫টি। ১৩ নং ওয়ার্ডের প্রার্থীর সংখ্যা ৫ জন। এদের মধ্যে বিএনপির মাকছুদুল আলম খন্দকারের বিরুদ্ধে গাড়ি পোড়ানো, রাষ্ট্রদ্রোহিতাসহ ২৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২৪টি মামলা বিচারাধীন ও ৩টি খালাসপ্রাপ্ত। ১৮নং ওয়ার্ডের কামরুল হাসান মুন্নার বিরুদ্ধে ৭টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি অব্যাহতিপ্রাপ্ত, ১টি প্রত্যাহার ও ১টি থেকে বেকুসুর খালাসপ্রাপ্ত। ২০নং ওয়ার্ডের প্রার্থী সংখ্যা ৮ জন। এদের মধ্যে শাহেন শাহ আহম্মেদের ৬টি মামলা রয়েছে, ১টি বিচারাধীন ও ৫টি থেকে খালাসপ্রাপ্ত। আওয়াদ হোসেনের বিরুদ্ধে ১টি মামলা বিচারাধীন। ২১নং ওয়ার্ডে ৮ জন প্রার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে হান্নান সরকারের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে ১টি মামলা চলমান আছে। একই ওয়ার্ডের রেদওয়ানুল হক মামুনের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা রয়েছে, ৪টি চার্জের দিন ধার্য ও ২টি মামলা সাক্ষীর জন্য ধার্য রয়েছে। একই ওয়ার্ডের নূর মোহাম্মদ পনেছ বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। ৩টি মামলা বিচারাধীন ও ১টি খালাস। ২২নং ওয়ার্ডের ৪ জন প্রার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে সুলতান আহমেদের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ২৩নং ওয়ার্ডে প্রার্থী ৭ জন। এদের মধ্যে রাহাত মিয়ার বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দেখানো হলেও ৩টি থেকেই অব্যাহতি পেয়েছেন। ২৫নং ওয়ার্ডের ৪ প্রার্থী। এদের মধ্যে এনায়েত হোসেনের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা বিচারাধীন। ২৭নং ওয়ার্ডের ৫ প্রার্থী। এদের মধ্যে কামরুজ্জামান বাবুলের ৩টি মামলা চলমান রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মতিয়ার রহমান জানান, যারা মামলার আসামি জামিনে থাকবে না তারা তো নির্বাচন করতে পারবে না। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে সন্ত্রাসীদের কোন আপোস নেই। যারা নির্বাচনকে ভুল পথে চালাইতে চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার এগুলো আমরা নিয়মিত করে যাচ্ছি।
×