ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় পরিবারের ছয় জনকে হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১০ ডিসেম্বর ২০১৬

মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায়  পরিবারের ছয় জনকে হত্যা

গৌরব গাথা ১৯৭১। লক্ষ্মীপুরে প্রথম শহীদ আবদুল হালিম বাসুর নিহতের ঘটনা ছিল স্মরণীয়। জানালেন, মুক্তিযোদ্ধা জেলা ইউনিট কমান্ডার আনোয়ারুল হক মাস্টার। বর্তমানে তিনি খুবই অসুস্থ। থানা সদরের বাঞ্ছানগরের কুরুয়ারচরে তাঁর বাড়ি। বাড়ির পাশেই বাগবাড়ী রাজাকার ও পাক হানাদারের সবচেয়ে বড় ক্যাম্প ছিল। এপ্রিলের প্রথম দিকে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে টগবগে কলেজ ছাত্র আনোয়ারুল হক। চলে যান ভারতে প্রশিক্ষণের জন্য। ‘উদয়পুর’ মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং সেন্টারে তিন মাসের ট্রেনিং শেষ করে ১০/১২ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে যোগ দেন, নিজ এলাকায় রফিকুল হায়দর ওরফে রফিক স্যার ও আক্তারজ্জামান উকিলের নেতৃত্বে বিজয়নগর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ছিলেন, আবুল খায়ের, আবু তাহের ও রাজু পাটোয়ারী। এরপর ২০/৩০ মুক্তিযোদ্ধা তিনটি ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রথমবারে নোয়াখালীর রায়পুর থানা মোড়ে ‘আলীয়া মাদ্রাসা রাজাকার ক্যাম্প’ আক্রমণ করেন। উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বদিক থেকে ত্রিমুখী আক্রমণ চালানো হয় আলীয়া মাদ্রাসা রাজাকার ক্যাম্পে। সেখানে তিন রাজাকার নিহত হয়। রাজাকারদের পাল্টা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হালিম বাসু প্রথম শহীদ হন। এটি ছিল আমাদের জন্য স্মরণীয় ঘটনা। এরপর তাঁর লাশ নৌকায় তুলে ভূঁইয়ার হাটে (বর্তমানে বাসুবাজার, বাসু শহীদের নামে) এনে জানাযা শেষে দাফন করা হয়। আনোয়ারুল হক বলেন, আমরা রামগঞ্জ লক্ষ্মীপুর সড়কে মীরগঞ্জ, কাজিরদিঘীর পাড়, চৌধুরীবাজার, কাফিলাতলী, ফজল চৌধুরী হাট, এলাকায় মিলিশিয়া পুলিশ ও পাক হানাদার বাহিনীকে মাইন চার্জসহ বেশ ক’টি হামলা পরিচালনা করি। ওই সময় দালাল বাজার রামগঞ্জ সড়কটি ছিল পাক মিলিশিয়া, হানাদার ও রাজাকারদের কাছে আতঙ্কপুরী। ওই সড়কে সবচেয়ে বেশি পাক মিলিশিয়া ও রাজাকারসহ পাক সেনা মারা যায়। তাদের সঙ্গে আমাদের ১৭টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান সংঘটিত হয়। কাফিলাতলিতে পাক হানাদারের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে দু’মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসব যুদ্ধে মনছুর আহমদ, আলী আহম্মদ (ইপিআর), আবু ছায়েদ, মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তফাসহ ৫৭ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধাহত হন রায়পুরের আবদুল মোতালেবসহ দু’জন। ওই সময়ে রাজাকারদের নেতৃত্ব দিয়েছে রাজাকার কমান্ডার সফিক উদ্দিন, মনিরুজ্জামান, লুৎফুর রহমান ওরফে লুতু, হারিছ মিয়া ও মওলানা আবদুল হাই। এদের মধ্যে মওলানা আবদুল হাই আজও পলাতক। এদিকে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অপরাধে মুক্তিযোদ্ধা ডিন মোহাম্মদের পরিবারের ছয়জনকে হত্যা করা হয়। এরা হচ্ছেন হোসাইন আহম্মদ, জাফর আহম্মদ, আবুল বাসার, আবুল বাসারের মা হাজেরা খাতুন, দাদি শহর বানু, হাসান আহম্মদের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন তার মা আশুরা খাতুন এবং স্ত্রী রহিমা খাতুন। ৪ ডিসেম্বর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী ও প্রয়াত সুবেদার আবদুল মতিনের নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়। প্রত্যেকটি দলে ৮/১০ জন করে দল গঠন করে বিভক্ত হয়ে দালাল বাজার, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদি, শাখারীপাড়ার মিঠানীয়া খাল পাড়সহ বাগবাড়িস্থ রাজাকার ক্যাম্পে হামলা চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। অভিযানে মুক্তিযোদ্ধারা ৭০/৮০ সশস্র রাজাকারকে আটক করে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করে। সেদিনই মুক্তিযোদ্ধারা হানাদারমুক্ত করে লক্ষ্মীপুরকে। ‘জয় বাংলা’ সেøাগান দিয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের ‘লাল সবুজ পতাকা’। -মহিউদ্দিন মুরাদ, লক্ষ্মীপুর থেকে
×